প্রতীকী ছবি।
পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে যাঁরা যাতায়াত করেন, তাঁদের মালপত্র বহনের কাজে যুক্ত আছেন শ’চারেক শ্রমিক। যাঁরা এলাকায় পরিচিত ‘হ্যান্ড কুলি’ হিসাবে। করোনা পরিস্থিতিতে কয়েক মাস কার্যত বন্ধ ছিল দু’দেশের মধ্যে মানুষজনের যাতায়াত। মাসখানেক আগে থেকে ফের স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে যাত্রীদের চলাচল। কিন্তু অভিযোগ, কুলিদের মালপত্র বহনের কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না। শ্রমিকদের দাবি, মূলত বিএসএফ, অভিবাসন ও ল্যান্ড পোর্ট অথরিটি তাঁদের কাজ বন্ধ করে দিয়েছে।
কাজের দাবি তুলে হ্যান্ড কুলিরা মঙ্গলবার ৩৫ নম্বর জাতীয় সড়ক বা যশোর রোড অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখালেন। পেট্রাপোল বন্দরের কাছে জয়ন্তীপুর বাজার এলাকায় মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৭টা থেকে অবরোধ শুরু হয়। রাস্তায় গাছের গুঁড়ি ফেলে, বেঞ্চ পেতে বসে পড়েন শ্রমিকেরা। সকাল সাড়ে ১১টা পর্যন্ত অবরোধ চলে। এর ফলে ট্রাক, বাস সহ বিভিন্ন যানবাহনের দীর্ঘ লাইন পড়ে যায়। পেট্রাপোল বন্দরে যাতায়াত করা পণ্যবাহী ট্রাক আটকে পড়ে। পেট্রাপোল থেকে কলকাতাগামী বাসে যাত্রীরাও দীর্ঘ সময়ে আটকে থাকেন।
সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ বনগাঁর এসডিপিও অশেষবিক্রম দস্তিদার ঘটনাস্থলে গিয়ে অবরোধকারীদের প্রতিশ্রুতি দিয়ে জানান, শ্রমিকদের দাবি-দাওয়া সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে। আশ্বাস পেয়ে অবরোধ তুলে নেন শ্রমিকেরা।
আব্দুল হাদিম কারিগর নামে এক শ্রমিক বলেন, ‘‘পেট্রাপোলে থাকা কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলির কাছে বার বার আবেদন করা হলেও তাঁরা আমাদের কাজ করতে দিচ্ছেন না। এমনিতেই আর্থিক অনটনের মধ্যে পড়ে আছি। কাজ করতে না পারলে পরিবারের লোকজনকে নিয়ে না খেয়ে মরতে হবে। ন’মাস কাজ ধরে বন্ধ। ধারদেনা করতে সংসার চালাতে হচ্ছে।’’
বন্দর সূত্রে জানা গিয়েছে, দু’দেশের মধ্যে যাতায়াত করা যাত্রীদের মধ্যে অনেকেই বৃদ্ধ-বৃদ্ধা। রোগীরাও থাকেন। শ্রমিকেরা তাঁদের মালপত্র বহন করে নো ম্যানস ল্যান্ড পর্যন্ত পৌঁছে দিতেন। বিনিময়ে টাকা পেতেন। মালপত্র নিয়ে তাঁরা যাত্রীদের সঙ্গে অভিবাসন ও শুল্ক দফতরের মধ্যে ঢুকতেন। সেখানে মালপত্র পরীক্ষা করিয়ে তা নিয়ে বেরিয়ে আসতেন। এখন শ্রমিকদের অভিবাসন ও শুল্ক দফতরের মধ্যে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। নো ম্যানস ল্যান্ড পর্যন্ত যেতে দিচ্ছে না বিএসএফ। করোনা পরিস্থিতিই এর কারণ বলে জানতে পেরেছেন শ্রমিকেরা। তাঁরা সমস্যার কথা জানিয়েছেন স্থানীয় ছয়ঘরিয়া পঞ্চায়েতে। পঞ্চায়েতের প্রধান প্রসেনজিৎ ঘোষ বলেন, ‘‘শ্রমিকেরা যাতে কাজ করতে পারেন, সে জন্য বিএসএফের কাছে লিখিত আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু কোনও সদুত্তর মেলেনি।’’
পেট্রাপোল অভিবাসন দফতরের মুখ্য অভিবাসন অফিসার তরুণকান্তি বিশ্বাস বলেন, ‘‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের গাইড লাইন আমরা মেনে চলছি। আমাদের করণীয় কিছু নেই। বিএসএফ এখানে নিরাপত্তার দায়িত্বে। তাদের বলা হয়েছে, কেউ যেন ঢুকতে না পারেন।’’
অভিবাসন দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, অতীতে বন্দরের নিরাপত্তা দেখত পুলিশ। পরবর্তী সময়ে ব্যুরো অব ইমিগ্রেশন দায়িত্ব নিয়েছে। তারপর থেকেই নিরাপত্তার কারণে শ্রমিকদের ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।