গ্রামের পাশে ধানের জমি। দলুয়াখাকিতে। —নিজস্ব চিত্র।
জয়নগরের বামনগাছি পঞ্চায়েতের তৃণমূল নেতা সইফুদ্দিন লস্কর খুনের পর সপ্তাহ ঘুরতে চলল। এখনও দলুয়াখাকিতে ঘরছাড়া রয়েছেন অনেক পুরুষ। এই পরিস্থিতিতে ধান-আনাজ চাষ নষ্ট হচ্ছে বলেই দাবি গ্রামের মহিলাদের।
গত সোমবার ভোরে খুন হন সইফু্দ্দিন। তার পরই দলুয়াখাকিতে সিপিএম কর্মী-সমর্থকদের বাড়িতে তাণ্ডব চলে। বেশ কিছু বাড়িতে ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। বাড়ির পুরুষেরা এলাকা ছাড়েন। শিশু-মহিলারা প্রাথমিক ভাবে এলাকা ছেড়ে দক্ষিণ বারাসতে সিপিএমের দলীয় কার্যালয়ে আশ্রয় নেন। পরে তাঁরা ফিরে এলেও এখনও অনেক পুরুষই ফেরেননি আতঙ্কে।
ইতিমধ্যে ওই গ্রামের বাসিন্দা আনিসুর রহমান লস্কর ও কামালউদ্দিন ঢালিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রামের আর এক যুবক মসিবুর রহমান লস্করের নাম জড়িয়েছে ওই খুনের ঘটায়। আরও কেউ যুক্ত থাকতে পারে বলেও মনে করছে পুলিশ। সে ক্ষেত্রে পুলিশি হয়রানির ভয়েই এলাকায় ফিরছেন না পুরুষেরা। পাশাপাশি গ্রামে ঢুকলে মারধরের হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ গ্রামবাসীদের। সেই ভয়েও এলাকায় ঢুকছেন না অনেকে।
দলুয়াখাকিতে প্রচুর চাষের জমি রয়েছে। ধান-আনাজ চাষ হয়। দরজির কাজের পাশাপাশি গ্রামবাসীদের অনেকেরই জীবিকা চাষাবাদ। তাঁরা জানান, বর্তমানে বর্ষার ধান রয়েছে জমিতে। এ ছাড়া শীতের আনাজ হিসেবে ওলকপি, ফুলকপিও বসানো হয়েছে। কিন্তু পুরুষেরা না থাকায় চাষের কাজ কিছুই হচ্ছে না।
স্থানীয় সূত্রের খবর, ধান ঘরে তোলার সময় হয়ে গিয়েছে। পাকা ধান মাঠে পড়ে থাকলে ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। তা ছাড়া, ওলকপি, ফুলকপির চারা বসানোর পরে নিয়মিত পরিচর্যার দরকার। সেই পরিচর্যাও কার্যত হচ্ছে না। না হলে ফসল নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
হালিমা বিবি নামে গ্রামের এক মহিলা বলেন, “তিন বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছি। সোম-মঙ্গলবারই খেত থেকে ধান কাটার কথা ছিল। সেই মতো প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তার মধ্যেই এই সব ঘটে গেল। খেতের ধান খেতেই পড়ে রয়েছে। দু’দিন জোরে হাওয়ায় সব নুইয়ে পড়েছে। জানি না এ বার আর ধান ঘরে তুলতে পারব কি না।” হালিমা আরও জানান, ছোট একটা দোকান ছিল তাঁদের। আর জমির আয়ে ছেলে-মেয়ে নিয়ে কোনও রকমে চলে যাচ্ছিল। দোকানটা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁর আক্ষেপ, ‘‘এখন ফসলটুকুও ঘরে তুলতে পারছি না। ছেলে-মেয়েদের নিয়ে বাঁচব কী ভাবে!”
আবেদা বিবি নামে আর এক মহিলা বলেন, “কয়েক কাঠা জমিতে কপির চাষ হয়েছে। ক’দিন আগেই চারা বসানো হয়েছে। এই সময় নিয়মিত পরিচর্যা না করলে ফসল ভাল হবে না। কিন্তু কে করবে!”
অনেকেই জানান, জমি ইজারা নিয়ে চাষ করেছেন। কিছু পুরুষ অবশ্য দু’-একদিন করে এলাকায় ফিরেছেন। তাঁদেরই একজন বলেন, “ভয়ে এলাকা ছেড়েছিলাম। পরে ফিরে আসি। প্রতিবারই সকলে মিলে হাতে হাত লাগিয়ে ধান কাটা হয়। এ বার কেউ নেই। অন্য গ্রামের কেউও আমাদের এখানে ধান কাটতে আসতে চাইছেন না। আমি একা কী করব! ফলে মাঠের ধান মাঠেই পেকে পড়ে রয়েছে।”
পুলিশ জানিয়েছে, এলাকায় পুলিশ পিকেট রয়েছে। অনেকেই ঘরে ফিরেছেন। বাকিরাও নিশ্চিন্তে ফিরতে পারেন।