বিধায়কের সঙ্গে কথা বলছেন গ্রামের মহিলারা। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক
বিধায়কের গাড়ি থামিয়ে পাকা রাস্তার দাবিতে ক্ষোভ উগড়ে দিলেন গ্রামের মহিলারা। সোমবার ঘটনাটি ঘটেছে বাগদার আষাঢ়ু পঞ্চায়েত এলাকায়। এ দিন সকালে ‘দিদির সুরক্ষা কবচ’ কর্মসূচি নিয়ে এলাকায় বেরোন বাগদার বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস। আষাঢ়ু পঞ্চায়েতের বেশ কিছু এলাকায় যান। মানুষের সমস্যার কথা শোনেন।
স্থানীয় বাঁশঘাটা উত্তরপাড়া দিয়ে গাড়ি যাওয়ার সময় মহিলারা রাস্তায় বিধায়কের গাড়ি থামান। স্থানীয় একটি রাস্তা নিয়ে দীর্ঘদিনের ক্ষোভ উগরে দেন তাঁরা। রাস্তাটি মাটি ও ইটের। উত্তেজিত মহিলারা বিধায়ককে জানান, রাস্তা দিয়ে বর্ষার সময় হাঁটাচলা করা যায় না। রাস্তা জলে ডুবে যায়। সাইকেল-বাইক নিয়ে যাতায়াত করলে পিছলে পড়ে যান বাসিন্দারা। রাস্তাটি পাকা করার দাবি জানান তাঁরা। ললিতা মণ্ডল নামে এক মহিলা বলেন, “এখন রাস্তায় ধুলো। বর্ষায় রাস্তা জলে ডুবে যায়। বিধায়ক পাকা রাস্তা তৈরি করে না দিলে, আমরা নিজেরাই যা করার করব।” কয়েকজন মহিলাকে বলতে শোনা যায়, পঞ্চায়েত ভোটের আগে পাকা রাস্তা না হলে উত্তরপাড়ার কেউ ভোট দেবেন না।
গ্রামবাসীদের অভিযোগ শুনে গাড়ি থেকে নেমে রাস্তার পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেন বিশ্বজিৎ। দ্রুত রাস্তা সংস্কারের আশ্বাস দেন। বিশ্বজিৎ বলেন, “দ্রুত যাতে রাস্তাটি পাকা করা যায়, তার জন্য পদক্ষেপ করা হবে। কেন্দ্রীয় সরকার টাকা আটকে রেখেছে। পঞ্চায়েতের সঙ্গে কথা বলছি। প্রয়োজনে বিধায়ক তহবিলের টাকা দিয়ে রাস্তাটি তৈরি করা হবে।”
এ দিন সকালে বিধায়ক কর্মসূচি শুরু করেন স্থানীয় আমডোব বাজার থেকে। সেখানে প্রথমে তিনি একটি দুর্গা মন্দিরে প্রণাম করেন। ব্যবসায়ীদের সমস্যা, অভাব-অভিযোগের কথা শোনেন। ব্যবসায়ীরা জানান, বাজারে শৌচালয় তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু তাতে বিদ্যুৎ সংযোগ হয়নি। এক বছর ধরে এই অবস্থায় পড়ে আছে। এর ফলে বাজারে আসা ক্রেতা বিক্রেতারা খুবই সমস্যায় পড়েন। এছাড়া রাস্তার পাশে একটি নিকাশি নালা উপচে জল বাজারে চলে আসে বলেও জানান তাঁরা। বাজারের মাটির রাস্তা সংস্কারের দাবিও জানানো হয়। বিধায়ক ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বাজারের শৌচালয় চালুর আশ্বাস দেন। নালা ও রাস্তা নিয়েও পদক্ষেপ করা হবে বলে জানান।
আমডোব এলাকায় সাধারণ মানুষের বাড়িতে যান বিধায়ক। আবাস যোজনার তালিকায় নাম না থাকায় বিধায়কের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করেন অনেকেই। বিধায়ক পঞ্চায়েত ও বিডিওর কাছে আবেদন করার কথা বলেন।
গত বিধানসভা ভোটে বিজেপির টিকিটে জিতে বিধায়ক হয়েছিলেন বিশ্বজিৎ। পরে তিনি তৃণমূলে যোগ দেন। এ দিন বাঁশঘাটা এলাকায় এক বাসিন্দা বিধায়ককে তাঁর দলবদল নিয়ে প্রশ্ন করার চেষ্টা করেন। বিশ্বজিৎ অবশ্য প্রসঙ্গে এড়িয়ে ওই ব্যক্তি সরকারি কোন সুযোগ সুবিধা পাননি তা জানতে চান। পরে ওই ব্যক্তি বলেন, “বিধায়ক তৃণমূল থেকে বিজেপিতে গিয়েছিলেন। আবার তৃণমূলে এসেছেন। এরকম করলে বিশ্বাসযোগ্যতা থাকে না। নেতারা অবশ্য এরকম করেই থাকেন।”
এ দিন কর্মসূচির শুরুতে বিশ্বজিতের সঙ্গে পুলিশের গাড়ি ছিল। বিশ্বজিৎ সেই গাড়ি ফিরিয়ে দেন। তিনি বলেন, “আমি চেয়েছিলাম মানুষ তাঁদের ক্ষোভ, সমস্যার কথা নির্ভয়ে আমাকে বলুন। পুলিশ দেখলে অনেকেই বলতে ভয় পেতেন। তাই পুলিশ গাড়ি ফিরিয়ে দিয়েছিলাম।”