বাগদার মথুরা গ্রামে ঈগল পাখিটিকে খাওয়াচ্ছেন সুমিত পাল। নিজস্ব চিত্র।
উড়ে এসে কাছে বসে হাত থেকে জিলিপি, নিমকি খেয়ে যাচ্ছে বনের ঈগল!
বাগদার মথুরা গ্রামের পাল বাড়িতে মাস দেড়েক ধরেই নতুন অতিথির আনাগোনা। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতি দিনই সকালে ও দুপুরে বাড়ির উঠোনে এসে নানা রকম অঙ্গভঙ্গি করে খাবার চাইছে পাখিটি। মাছের টুকরো, জিলিপি বা নিমকি দিলে সেটা খেয়ে আবার উড়ে চলে যাচ্ছে। নিমকি আর রান্না করা মাছই তার বেশি পছন্দের। পরিবারের সদস্য সুমিত বলেন, ‘‘খাবার না দিলে হাত থেকে কেড়ে খেয়ে নেয়। রান্নাঘর খোলা পেলে সেখানে ঢুকেও খাবার খুঁজছে।’’
সুমিতের মা আল্পনা বলেন,‘‘আমি এক দিন উঠোনে বসে মাছ কুটছিলাম। পাখিটা উড়ে এসে সামনে বসে। একটা মাছের টুকরো বাড়িয়ে ধরতেই হাত থেকে নিয়ে খেতে শুরু করল। তরপর থেকে রোজই আসছে। বাড়ির পোষা বিড়ালের সঙ্গেও খুনসুটি করে। আমাদের সঙ্গে দিব্যি মিলেমিশে গিয়েছে পাখিটি।’’
ছবি দেখে পক্ষী বিশেষজ্ঞেরা জানিয়েছেন, পাখিটি ক্রেস্টেড সার্পেন্ট ঈগল। সাধারণত এরা হিংস্র প্রকৃতির হয়। পুরোদস্তুর শিকারি পাখি। প্রধান খাদ্য, সাপ ও গিরগিটি। তা ছাড়াও, মাছ, খরগোশ, ছোটখাট পাখি, বড় মেঠো ইঁদুর বা ওই জাতীয় জীবজন্তু খায়। উঁচু গাছের মগডালে বাসা বাঁধে। সাধারণত মানুষের ধারেকাছে আসে না বলেই জানালেন তাঁরা। মানুষের কাছে এসে হাত থেকে খাবার নিয়ে খাওয়াটা বিরল ঘটনা বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা।
মথুরা গ্রামের গা-ঘেঁষে বয়ে গিয়েছে ইছামতী। ওপারেই পারমাদনে বিভূতিভূষণ অভয়ারণ্যের গভীর জঙ্গল। পাখিটি সেখান থেকেই এসেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
সুমিত বলেন, ‘‘আমাদের ভাল ভাবে চিনে গিয়েছে পাখিটা। কারও কোনও ক্ষতি করছে না, কাউকে আক্রমণ করার চেষ্টা করছে না। সারা দিন বাড়ির আশেপাশেই থাকে। খাবার হাতে উঠোনে দাঁড়ালে উড়ে এসে কাছে বসছে। এখনও মনে
হয় বাচ্চা। চিঁ চিঁ করে আওয়াজ করে।’’ সুমিতের কথায়, ‘‘লোকে শখ করে কুকুর-বিড়াল পোষে, আর আমরা ঈগল পুষছি!’’