হতশ্রী: মেলার মাঠের অবস্থা। ছবি: সুজিত দুয়ারি
৩ ফেব্রুয়ারি থেকে কেটে গিয়েছে পরের এগারোটা দিন। আনন্দ-উৎসব শেষ। কিন্তু মাঠের হতশ্রী চেহারা ফিরবে কবে, প্রশ্নটা ঘুরপাক খাচ্ছে হাবড়ার বাতাসে।
বাণীপুর লোক উৎসব উত্তর ২৪ পরগনার তো বটেই, গোটা রাজ্যের মধ্যে অন্যতম বড় উৎসব। লক্ষাধিক মানুষ আসেন। লোকসংস্কৃতির প্রচার-প্রসারে এই উৎসবের ভূমিকার কথা মানেন সকলেই। রাজ্যের নানা প্রান্ত থেকে পর্যটকেরা আসেন। এ বছর ২৬ জানুয়ারি শুরু হয়েছিল মেলা। শেষ হয়েছে ৩ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু ১৪ ফেব্রুয়ারিও মেলার মাঠের দশা দেখে পরিবেশবিদেরা হতাশ। হচ্ছেটা কী!
দেখা গেল, গোটা মাঠ জুড়ে পড়ে আছে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ, জলের বোতল। যে দিকেই চোখ পড়ে, নোংরা আবর্জনা ছড়িয়ে ছিটিয়ে। দুর্গন্ধ বেরোচ্ছে। দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। বাঁশের খুঁটি এখনও খোলা হয়নি। চার দিকে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ, প্লাস্টিকের ঠোঙা, থার্মোকলের থালা পড়ে রয়েছে। খড়, মালা, সুতো, পাতার বাটি, কাগজের গ্লাস, কাঠের চামচ পড়ে যত্রতত্র।
এত দিন পরেও কেন সাফ হল না উৎসবের মাঠ?
পুরসভা ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পুরসভার তরফে হাবড়া শহরে প্লাস্টিক ও থার্মোকল ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল গত বছর। পুরসভা ও প্রশাসনের তরফে শহরবাসীকে সচেতন করতে নানা কর্মসূচিও নেওয়া হয়। সেই সঙ্গে বাজার এলাকায় ধরপাকড় চলছিল। ফলও মিলেছিল হাতেনাতে। শহর এলাকায় প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ ব্যবহার কমে গিয়েছিল অনেকটাই। কিন্তু গত অক্টোবর মাসে হাবড়া পুরসভার মেয়াদ ফুরনোয় প্রশাসক বসানো হয়। তারপর থেকে ফের প্লাস্টিকের ব্যবহার বেড়েছে। নজরদারিও কমছে। এ সবের জেরে বাণীপুর উৎসবেও এ বার তাই প্লাস্টিকের অবাধ ব্যবহার দেখা গিয়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয় মানুষ জন।
কিন্তু যা হওয়ার তো হল, মেলার পরেও মাঠ পরিষ্কার করা গেল না কেন এখনও? তা কি স্রেফ গড়িমসি, নাকি প্রশাসনের উদাসীনতা?
পুরসভার প্রশাসক তথা বারাসতের মহকুমাশাসক তাপস বিশ্বাস বলেন, ‘‘মেলার আয়োজনের সঙ্গে পুরসভা যুক্ত থাকে না। তবে সমস্যার কথা শুনলাম। পুরসভার পক্ষে থেকেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
পুরসভার একটি সূত্রে জানা গেল,পুরসভার চেয়ারম্যান পদাধিকার বলে বাণীপুর লোক উৎসব কমিটির সভাপতি হন। বিদায়ী পুরপ্রধান নীলিমেশ দাস আপাতত সভাপতি। তিনি বলেন, ‘‘মেলা কমিটির সদস্যদের সঙ্গে বলে দ্রুত উৎসবের মাঠ সাফ করা হচ্ছে।’’
কিন্তু এত দিনেও সেই কাজটুকু হল না কেন, জুতসই উত্তর নেই কারও মুখে। তবে বাসিন্দারা অনেকেই বলছেন, অন্যান্য বছর এমনটা ঘটে না। এ বার পুরবোর্ড ক্ষমতায় না থাকার ফলেই এই পরিস্থিতি।
বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ২০১৭ সালে শহরে জ্বর-ডেঙ্গির প্রকোপ ছড়িয়েছিল হাবড়ায়। কয়েক জন মারাও গিয়েছিলেন। পুর কর্তৃপক্ষের তরফে সে সময়ে জানানো হয়, ডেঙ্গি ছড়ানোর অন্যতম কারণ ছিল, প্লাস্টিকের ব্যবহার। তারপরেও কেন উৎসব শেষে প্লাস্টিক পড়ে থাকবে মাঠে, প্রশ্ন এলাকার সচেতন মানুষের।
স্থানীয় বাসিন্দা তথা হাবড়া পুরসভার প্রাক্তন কাউন্সিলর প্রসেনজিৎ দত্ত বলেন, ‘‘এ বার লোক উৎসবে প্লাস্টিকের যথেচ্ছ ব্যবহার হয়েছে। তা বন্ধ করতে কোনও নজরদারি ছিল না। উৎসব শেষ হয়ে গেলেও উৎসব কমিটি বা পুরসভা প্লাস্টিক বা আবর্জনা সরানোর উদ্যোগ করেনি।’’ এক প্রবীণ বাসিন্দার কথায়, ‘‘বাণীপুর লোক উৎসব আমাদের গর্ব। অথচ সেখানে এমন দূষণ সকলকে লজ্জা দিচ্ছে।’’