সাংবাদিক বৈঠকে বাঁ দিক থেকে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, পার্থ ভৌমিক এবং রথীন ঘোষ। নিজস্ব চিত্র
পুরভোটে নির্দল কাঁটা সরাতে শাস্তির পথে আগেই হেঁটেছে তৃণমূল। দলের টিকিট না পেয়ে নির্দল হয়ে দাঁড়ানো গোঁজ প্রার্থীদের বহিষ্কার করার মতো পদক্ষেপ করা হচ্ছে জেলায় জেলায়। এ বার রাজ্য নেতৃত্বের নির্দেশে এক কোপে ৬১ জনকে দল থেকে তাড়াল উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূল। রবিবার রাজ্যের দুই মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক এবং রথীন ঘোষের উপস্থিতিতে এই ঘোষণা করেছেন উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূলের পর্যবেক্ষক তথা নৈহাটির বিধায়ক পার্থ ভৌমিক।
উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূল সূত্রে খবর, জেলার মোট ২৫টি পুরসভার মধ্যে ১৩ টি পুরসভায় নির্দল প্রার্থী হয়ে লড়ছেন বেশ কয়েক জন তৃণমূল কর্মী বা সমর্থক। রবিবার যে ৬১ জনকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে তাঁরা উত্তর বারাকপুর, দক্ষিণ দমদম, খড়দহ, অশোকনগর-কল্যাণগড়, টাকি, বাদুড়িয়া, বারাসত, উত্তর দমদম, কামারহাটি, নব বারাকপুর, টিটাগড়-সহ কয়েকটি পুরসভায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছেন। সেই প্রসঙ্গে নৈহাটির বিধায়ক পার্থর বক্তব্য, ‘‘তৃণমূলের যে সব নেতা বা সমর্থক নির্দল বা অন্য কোনও দলের প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মনোনয়ন প্রত্যাহারের জন্য তাঁদের ৪৮ ঘণ্টা সময় দেওয়া হয়েছিল। তাঁদের বলা হয়েছিল, মনোনয়ন প্রত্যাহার না করলে দল তাঁদের প্রত্যেককে বহিষ্কার করবে। অনেকে তা শুনে প্রত্যাহার করে নেন। কিন্তু তার পরেও ৬১ জন নির্দল বা অন্য প্রতীকে দাঁড়িয়েছেন। রাজ্য নেতৃত্বের নির্দেশে আমরা তাঁদের ৬১ জনকে বহিষ্কার করলাম।’’
যাঁরা তৃণমূলে থেকেও নির্দল প্রার্থী হয়েছেন তাঁদের থেকে কি বিপদের আশঙ্কা করছে তৃণমূল? তৃণমূলের বহিষ্কারের সিদ্ধান্তে এই প্রশ্নও উঠছে। এই প্রসঙ্গে পার্থর জবাব, ‘‘মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আছেন। অতএব দলনেত্রীর প্রতীক যাঁর সঙ্গে আছে মানুষও তাঁর সঙ্গেই থাকবেন।’’ বিষয়টির সঙ্গে দলীয় শৃঙ্খলার প্রশ্ন জড়িয়ে বলে জানিয়েছেন তিনি।
নির্দল প্রার্থীরা জয়ী হলে কি তৃণমূলে ফেরার রাস্তা খোলা? এই প্রশ্নের উত্তরে নৈহাটির বিধায়কের বক্তব্য, ‘‘দলের সর্বস্তরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে নির্দল থেকে জিতে এলেও দলে জায়গা হবে না।’’ ঘটনাচক্রে রবিবার নাকতলার বাড়িতে বসে ঠিক এমন সুরে নির্দলে দাঁড়ানো তৃণমূল কর্মীদের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন দলের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও।
উত্তর ২৪ পরগনার দলীয় নেতৃত্ব আশাবাদী, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে আরও কয়েক জন নির্দল প্রার্থী লড়াই থেকে সরে দাঁড়াতে পারেন। তবে আনুষ্ঠানিক ভাবে মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহারের সময়সীমা শেষ হয়ে গিয়েছে। তৃণমূল নেতৃত্বের নির্দেশ মেনে এখন নির্দল প্রার্থীকে ভোটের লড়াই থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা ঘোষণা করে লিফলেট বিলি করতে হবে এবং তৃণমূলের প্রতীকে দাঁড়ানো প্রার্থীদের প্রচারে সহযোগিতা করতে হবে।
গত কয়েক দিনে বিভিন্ন জেলাতেই নির্দল প্রার্থীদের বহিষ্কারের পথে হেঁটেছে তৃণমূল। বাঁকুড়ার তিন পুরসভার ১০ নির্দল প্রার্থীকে বহিস্কার করেছে জোড়াফুল শিবির। নদিয়ায় ২৩ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এ ছাড়া মালদহ, পশ্চিম মেদিনীপুর-সহ কয়েকটি জেলাতেও দেখা গিয়েছে একই ছবি।