Arjun Singh

West Bengal Municipal Election 2022: ‘শান্তি’র ভোটে গড়বন্দি অর্জুনের হুঙ্কার

নিজের বাড়ির উঠোনে আটকে থাকা অর্জুন তবু ফোঁস ফোঁস করেন, “পুলিশ কাজ না-করলে আমাকে বেরোতেই হবে!”

Advertisement

ঋজু বসু ও বিতান ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৭:০০
Share:

দিনভর কার্যত গৃহবন্দি অর্জুন সিংহ। রবিবার, ভাটপাড়ায়। ছবি— সুমন

ভাটপাড়ার কেউটিয়ায় কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ের ধারে পরোটার দোকানে খবর চলছে মোবাইলে। স্থানীয় কোনও সংবাদ নয়! হিন্দি টিভি চ্যানেলে রুশ-ইউক্রেন সংঘাতের ব্যাখ্যা চলছে।

Advertisement

রবিবার, সকাল সাড়ে ৯টা! নিজেকে এক নির্মাণ সংস্থার কর্মী বলে পরিচয় দিয়ে জনৈক প্রসেনজিৎ দাস বললেন, “এই ভোটের চেয়ে ইন্টারন্যাশনাল খবর ঢের ভাল! অন্য বার তা-ও ভোটটুকু দিয়েছি! এ বার হয়তো সেটাও দেওয়া হবে না!” তাঁর কথায়, “যাঁদের কথায় ভোট হচ্ছে, তাঁরাই চান না, ভোটটা দিই!” ‘তাঁরা’ মানে কারা? খাস অর্জুন সিংহের গড়ের ভোটার এ বার ফিসফিসিয়ে বললেন, “গোটা রাজ্যে যাঁদের কথায় সব চলছে, এখানেও তাঁরাই শেষ কথা! ইউক্রেনের উপরে একতরফা হামলার মতো, এখানেও ভোট হচ্ছে পুরো একতরফা!”

একটু বাদে ভাটপাড়ার মেঘনা মোড়ের কাছে নিজের বাড়ির উঠোনে বসে বিজেপি সাংসদ তথা রাজ্য নেতা অর্জুন সিংহও কার্যত এক সুরে বললেন, “পুলিশ, তৃণমূল হাত মিলিয়ে ভোটটা শেষ করে দিল! ভাটপাড়ায় সকাল দশটাতেই বেশির ভাগ বুথে শতকরা ৮০ ভাগ ভোট পড়ে গিয়েছে। তার উপরে আমাদের ১৫ জন এজেন্টকে বুথে বসতেই দেওয়া হয়নি! ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে সঞ্জয় সিংহ বলে এক প্রার্থীকে পুলিশ গ্রেফতার পর্যন্ত করেছে। এ ভাবে ভোট হয়!”

Advertisement

ভোটের দিন তাঁকে ঘিরে সংবাদমাধ্যমের ভিড়, গুটিকয়েক অনুগামীর উপস্থিতি। দেহরক্ষীদের প্রহরায় এলিয়ে বসে থাকা সাংসদ কিন্তু কার্যত বন্দি। নিজের ওয়ার্ডে ভাইপো (সৌরভ সিংহ, যিনি ওয়ার্ডে বিজেপির প্রার্থী হয়েও তৃণমূলের ‘প্ররোচনা’য় শেষ দিনে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন) এবং ভগ্নিপতির (নোয়াপাড়ার প্রাক্তন বিজেপি নেতা সুনীল সিংহ) ‘গদ্দারি’-তে বিজেপির কোনও প্রার্থী না-থাকায় এ বার ভোট পর্যন্ত দেওয়া হয়নি অর্জুনের। ভাইপোকে ‘‘ব্যাটা রাবণ নয়, রামের ঘরের বিভীষণ’’ বলেও গালমন্দ করেন বিজেপি সাংসদ। মোবাইলে কিছু বার্তা পেয়ে অর্জুন দিনভর শুধু থেকে থেকে হুঙ্কার দিয়েছেন, ‘‘যা, তোরা বেরোও, গারুলিয়ার ব্রহ্মময়ী স্কুলে যা’’ কিংবা ‘‘মধু ঘোষের গলিটা দেখ!’’ সকালে এক বার বাড়ি থেকে কয়েক কদম দূরে পুলিশের সামনে হাল্কা ধস্তাধস্তি হয় অর্জুন ও তৃণমূলের ছেলেদের। পুলিশ লাঠি চালিয়ে পরিস্থিতি সামলায়। নিজের বাড়ির উঠোনে আটকে থাকা অর্জুন তবু ফোঁস ফোঁস করেন, “পুলিশ কাজ না-করলে আমাকে বেরোতেই হবে!”

তবে স্মরণাতীত কালের মধ্যে এ বারই সম্ভবত ভাটপাড়ার ভোটে বোমা পড়েনি। কাঁটাপুকুরে একটি ইভিএম ভাঙার ঘটনা ঘটেছে। ভাটপাড়ায় প্রার্থী সঞ্জয় সিংহ কিংবা হালিশহরে ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের রবিশঙ্কর সিংহের বিরুদ্ধেও ইভিএম ভাঙচুরের চেষ্টার অভিযোগ ওঠে। তবে ভোট ব্যাহত হয়নি। স্থানীয় সূত্রের খবর, ‘ছাপ্পায় তৎপর’ শাসকদলের উস্কানির ফলে নানা গোলমাল বাধে। ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের টিটাগড়, ব্যারাকপুর, উত্তর ব্যারাকপুর, গারুলিয়া, হালিশহর ও বীজপুরে বিক্ষিপ্ত গোলমাল ও বোমাবাজির ঘটনা ঘটলেও পরিস্থিতি মোটামুটি শান্তিপূর্ণ ছিল। কিন্তু ভাটপাড়ার শ্রীরামপুর ফ্রি প্রাইমারি স্কুলের মতো নানা বুথেই ভোট দেওয়ার সময়ে কার্যত ঘাড়ের কাছে দাঁড়িয়ে শ্যেনদৃষ্টিতে পাহারা দিয়েছেন রাজনৈতিক কর্মীরা।

বিজেপি ও সিপিএমের দাবি, আসলে মানুষ প্রতিবাদ করতেই ভুলে গিয়েছে। নৈহাটির তৃণমূল বিধায়ক তথা ব্যারাকপুরের সাংগঠনিক জেলা সভাপতি পার্থ ভৌমিক অবশ্য সব অভিযোগই উড়িয়ে দিয়েছেন। এ সবই ভোট না-পেয়ে বিরোধীদের ‘নাটক’ বলে তাঁর অভিমত। নানা বিক্ষিপ্ত অভিযোগের মধ্যে টিটাগড়ে সৌহার্দ্য মিলন কেন্দ্রের বুথে সিপিএম প্রার্থীর এজেন্টের মাথা ফাটানোর প্রতিবাদে পথ অবরোধ করা হয়। উত্তর ব্যারাকপুরে ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের নির্দল প্রার্থীকে মারধরের অভিযোগে তিন জন তৃণমূল কর্মী গ্রেফতার হয়েছেন। ব্যারাকপুরের তিন নম্বর ওয়ার্ডে বিজেপি প্রার্থী সুধা ঘোষও তৃণমূল কর্মীদের নিগ্রহের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ।

এ দিন বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত শিল্পাঞ্চলে ৭২ শতাংশ ভোট পড়েছে। ১১০ জন গ্রেফতার হয়েছেন বলে জানিয়েছেন ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement