ফিরতি-পথে: বিক্রির জন্য ফুল এনেছিলেন। হল না কাজ। বুধবার ছবিটি তুলেছেন নির্মাল্য প্রামাণিক
এলাকার মানুষের দাবি মেনে বন্ধ করে দেওয়া হল গাইঘাটার ঠাকুরনগরের ফুলবাজার।
লকডাউনের পর থেকে ঠাকুরনগর ফুলবাজার বন্ধই ছিল। মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী ফুলবাজার খোলার ঘোষণার পর থেকেই সচেতন ঠাকুরনগরবাসী আশঙ্কায় ভুগতে শুরু করেন। মঙ্গলবার থেকেই তাঁরা সোশ্যাল মিডিয়ায় ঠাকুরনগর ফুলবাজার বন্ধ রাখার দাবিতে সরব হন। এমন আশঙ্কাও প্রকাশ করেন, ফুলবাজার খোলা থাকলে করোনা-সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে।
মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী, আজ বৃহস্পতিবার থেকে কলকাতা-সহ রাজ্যের ফুলবাজারগুলি খুলে যাওয়ার কথা। বুধবার সকালেও কয়েকজন ফুলচাষি ফুল নিয়ে ঠাকুরনগর বাজারে হাজির হয়েছিলেন। ঠাকুরনগরের সাধারণ মানুষ এবং সচেতন নাগরিক মঞ্চের তরফে এ দিন সকাল থেকে বাজার এলাকায় মাইক বেঁধে ফুলবাজার বন্ধ রাখার দাবি জানানো হয়। শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে পথসভাও হয়। শুরু হয় মানুষের সই সংগ্রহ। বাজারে আসা ফুলচাষিদের বোঝানো হয়। পোস্টার, প্ল্যাকার্ড নিয়ে মানুষ জড়ো হন। পোস্টারে লেখা ছিল, “করোনা সংক্রমণ থেকে বাঁচতে লকডাউন মেনে চলাই একমাত্র পথ।” ঘটনাস্থলে আসেন গাইঘাটা থানার ওসি লিটন রক্ষিত। ফুলবাজার মালিক সমিতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ বৈঠকে বসেন। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়, লকডাউন চলা পর্যন্ত ফুলবাজার বন্ধ থাকবে।
ঠাকুরনগর ফুল বাজার ওনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক পার্থপ্রতিম বিশ্বাস বলেন, "মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মতো আমরা ফুলবাজার খুলতে সব রকম প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। কিন্তু এলাকার মানুষের দাবিতে আমরা লকডাউন শেষ না হওয়া পর্যন্ত বাজার বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছি।"
ফুলবাজার বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত মালিক সমিতির তরফে পুলিশ-প্রশাসনকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। সচেতন নাগরিক মঞ্চের তরফে লিটন মৈত্র বলেন, "বনগাঁ মহকুমা ছাড়াও রোজ উত্তর ২৪ পরগনা ও নদিয়া থেকে কয়েক হাজার ফুলচাষি, ব্যবসায়ী ঠাকুরনগর ফুলবাজারে আসেন। লকডাউনের সময়ে ওই বিপুল মানুষের জমায়েত থেকে করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই আমরা লকডাউন শেষ না পর্যন্ত বাজার বন্ধ রাখার দাবি করেছি।"
এ দিকে, লকডাউনের ফলে ফুলবাজার বন্ধ থাকায় হাজার হাজার ফুলচাষি ও ব্যবসায়ী আর্থিক ভাবে ক্ষতির মুখে পড়েছেন। গাছ থেকে ফুল পড়ে যাচ্ছে, শুকিয়ে যাচ্ছে। ফুল ফেলে দিতে হচ্ছে। ঠাকুরনগর বাজার থেকে ফুল কিনে অনেক মানুষ কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করেন। অনেক মহিলারাও এই কাজের সঙ্গে যুক্ত। ফুলের মালা তৈরি করে এলাকার অনেক মহিলা বাড়িতে বসে টাকা রোজগার করেন। এখন সব বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
এ দিন বাজারে ফুল নিয়ে আসা এক চাষি বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পরে মঙ্গলবার রাতে ফুল তুলেছি। সকালে বাজারে নিয়ে এসেছিলাম বিক্রির জন্য। বাজার বন্ধ থাকায় দু’হাজার টাকা জলে চলে গেল।"
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)