খাদ্য দফতর। ছবি সংগৃহীত।
সাংসদের রেশন কার্ডেই গোলমাল। দায় কার, তা নিয়ে ঠেলাঠেলি চলছে। তবে জেলায় এমন গরমিল আরও থেকে থাকলে তা খতিয়ে দেখার মতো তাঁদের পরিকাঠামো নেই বলে জানাচ্ছে খাদ্য দফতর। এ ক্ষেত্রে তাঁদের পরামর্শ, কারও কার্ডে গোলমাল থাকলে তাঁরা নিজেরা আবেদন করুন। সেটি অবশ্যই খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সম্প্রতি বনগাঁর সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরের রেশন কার্ড সামনে এনেছে সিপিএম। তাঁদের দাবি, মন্ত্রীর রেশন কার্ড ‘পুয়োর হাউজ়হোল্ড’ বা গরিব পরিবারের জন্য নির্দিষ্ট। শান্তনু সে কথা অস্বীকার করছেন না। তাঁর দাবি, গলদ কিছু ঘটে থাকলে তার দায় খাদ্য দফতরের। দফতরের আধিকারিকেরা আবার জানাচ্ছেন, কার্ডে কিছু ভুল থাকলে মন্ত্রী কেন সংশোধনের আবেদন করেননি।
জেলা খাদ্য দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, ব্যারাকপুর ও বিধাননগর মহকুমা বাদ দিয়ে জেলায় রেশন কার্ডের সংখ্যা ৬২ লক্ষ ৮২ হাজার ৭৪৩টি। রাজ্যে এই মুহূর্তে পাঁচ ধরনের কার্ড আছে। জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা যোজনায় তিন ধরনের (এএওয়াই, এসপিএইচএইচ এবং পিএইচএইচ)। রাজ্য খাদ্য সুরক্ষা যোজনায় দু’ধরনের (আরকেএসওয়াই-১ এবং আরকেএসওয়াই-২)। কোন কার্ডে কত পরিমাণ খাদ্যশস্য মিলবে, উপভোক্তার আর্থিক অবস্থা কেমন— এ সবের ভিত্তিতে কার্ড নির্দিষ্ট হয়।
জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা যোজনায় জেলায় রেশন কার্ড আছে ৪৪ লক্ষ ১০ হাজার ৬১৪টি। এর মধ্যে পিএইচএইচ রেশন কার্ড ৪২ লক্ষ ৮ হাজার ৭৯৯টি। রাজ্য খাদ্য সুরক্ষা যোজনায় আরকেএসওয়াই-১ রেশন কার্ড ১৩ লক্ষ ৭০ হাজার ৪৭৬টি। আরকেএসওয়াই-২ রেশন কার্ড ৫ লক্ষ ১ হাজার ৬৫৩টি। খাদ্য দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, নাগরিকদের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে ২০১৩-১৪ সালে নামের তালিকা প্রকাশিত হয়েছিল। সেই মতো ধাপে ধাপে জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা যোজনায় কার্ড দেওয়া হয়। পরে ডিজিটাল কার্ডও এসেছে। শান্তনু ঠাকুরের কার্ডে গরমিল আছে, তা হলে কি বাতিল হতে পারে সেটি? খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষ বলেন, ‘‘এ বিষয়ে আমাদের কাছে তথ্য থাকলে বা নির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তদন্ত করে অযোগ্যদের কার্ড বাতিল করা যায়। কিন্তু সুয়োমটো (নিজেদের উদ্যোগে) কারও নাম বাদ দিতে পারি না।’’ তাঁর মতে, শান্তনু ঠাকুরের উচিত পিএইচএইচ কার্ডটি জমা দেওয়া।’’ খাদ্যমন্ত্রীর দাবি, শান্তনুর পরিবারের দু’জনের পিএইচএইচ রেশন কার্ড আছে। ওঁদের পরিবারের আরও ৪ জন সদস্য ওই রেশন কার্ডের জন্য আবেদন করেছিলেন। তাঁরা পাননি।
জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা যোজনায় পাওয়া রেশন কার্ড বাতিল করার উপায় নেই জানিয়ে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘রাজ্যে এখন চালু রেশন কার্ডের সংখ্যা ৮ কোটি ৮০ লক্ষ। এর মধ্যে ৬ কোটি ১ লক্ষ রেশন কার্ড জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা যোজনায় দেওয়া হয়েছে। রাজ্য খাদ্য সুরক্ষা যোজনায় দেওয়া রেশন কার্ড দেখার ক্ষেত্রে আমাদের কিছু নিয়ম-কানুন আছে। কিন্তু জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা যোজনায় দেওয়া রেশন কার্ড আমাদের দেখার উপায় নেই। কারণ সেগুলি হয়েছিল নির্দিষ্ট কিছু পদ্ধতি মেনে।’’
জেলা খাদ্য দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, যাঁদের পিএইচএইচ রেশন কার্ড আছে, অথচ যাঁরা তা পাওয়ার যোগ্য নয়, তাদের উচিত নিজেদেরই রেশন কার্ডগুলি জমা দেওয়া। কারণ ফিল্ডে গিয়ে খাদ্য দফতরের কর্তাদের পক্ষে কে কোন রেশন কার্ড পাওয়ার যোগ্য আর কে নন (জেলায় সংখ্যাটা প্রায় ৪২ লক্ষ) তা খতিয়ে দেখা সম্ভব নয়। এতকর্মীই নেই।
খাদ্য দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, জেলায় অন্ত্যোদয়ভুক্ত রেশন কার্ড আছে ৬৪ হাজার ৫৬৪ পরিবারের। এ ক্ষেত্রে তদন্ত করে অনেক নাম বাদ দেওয়া হয়েছিল। জেলা খাদ্য নিয়ামক জয়ন্তকুমার রায় বলেন, ‘‘এখন রেশন কার্ড কেউ বাতিল করতে চাইলে বাড়ি বসে পোর্টালে অনলাইনে আবেদন করতে পারেন। গত আড়াই বছরে অনেকেই করেছেন।’’ খাদ্য দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, রেশন কার্ডের সঙ্গে আধার কার্ড নম্বর যুক্ত না করায় জেলায় ২৩ লক্ষ রেশন কার্ড ব্লক করা হয়েছিল। এখন ৯৫ শতাংশ কার্ডের সঙ্গে আধার নম্বর যুক্ত করা আছে।
শান্তনু বলেন, ‘‘ইতিমধ্যেই আমার রেশন কার্ডটি বাতিল করার আবেদন করেছি। ওই কার্ডটি আমি ব্যবহার করতাম না। মায়ের কাছে থাকত। মা এত কিছু বোঝেন না।’’ তাঁর দাবি, রাজ্য সরকারের খাদ্য দফতরের গাফিলতিতে এই ঘটনা ঘটেছিল।
এ বিষয়ে রাজ্যের প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী (বর্তমান বনমন্ত্রী) জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, ‘‘আমাদের রাজ্যে ৫ রকম রেশন কার্ড আছে। আর এক রকমের রেশন কার্ড আছে, সেটি হল খাদ্য নেব না, শুধু পরিচয়পত্রের জন্য। শান্তনুর আগেই উচিত ছিল, দফতরে কার্ড জমা দিয়ে সঠিক কার্ডের আবেদন করা। এটা নৈতিকতার প্রশ্ন। খাদ্য দফতরকে দোষ দিয়ে লাভ নেই।’’