—প্রতীকী চিত্র।
গত ৪৮ ঘণ্টা ধরে মধ্যমগ্রাম, বারাসত ও নিউ ব্যারাকপুরের একাংশে তীব্র জলসঙ্কটের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। কারণ, পানীয় জল সরবরাহের লাইনে ফাটল। প্রশাসনের তরফে যুদ্ধকালীন প্রস্তুতিতে পদক্ষেপ করা হলেও মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত জল সরবরাহ স্বাভাবিক হয়নি। এ দিন সারা রাত কাজ চলে। স্বভাবতই কী কারণে এত গুরুত্বপূর্ণ লাইনে ফাটল ধরল, তা নিয়ে দেখা দিয়েছে প্রশ্ন। তবে আজ, বুধবার জল সরবরাহ স্বাভাবিক হতে পারে বলে প্রশাসনের একাংশের তরফে জানানো হয়েছে।
পুরসভাগুলি নিজেদের এলাকায় ট্যাঙ্কার ভর্তি করে বাড়ি-বাড়ি জল পাঠিয়ে পরিস্থিতির মোকাবিলা করার চেষ্টা করলেও চাহিদা পুরোপুরি মেটানো সম্ভব হচ্ছে না। স্থানীয় বাসিন্দারা বড় বড় জার কিনে জলের চাহিদা মেটানোর চেষ্টা করছেন। পুর এলাকার কিছু জায়গায় জল এলেও তা এতই সরু হয়ে পড়ছে যে, সমস্যার সুরাহা হচ্ছে না। সব মিলিয়ে তৈরি হয়েছে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছেন কেএমডিএ, সংশ্লিষ্ট পুরসভাগুলির প্রতিনিধি-সহ প্রশাসনের অন্য দফতরের আধিকারিকেরা।
প্রশাসন সূত্রের খবর, টিটাগড় থেকে গঙ্গার অপরিশোধিত জল পাইপলাইনের মাধ্যমে মধ্যমগ্রাম পুরসভার অধীনস্থ পানিহারায় জল শোধন প্লান্টে যায়। সেখানে প্রক্রিয়াকরণের পরে পরিস্রুত জল সরবরাহ করা হয় তিন পুর এলাকায়। কিন্তু মুড়াগাছা উড়ালপুল সংলগ্ন এলাকায় মাটির নীচে জলের পাইপলাইনে হঠাৎই ফাটল দেখা যাওয়ায় অপরিশোধিত জল আনার প্রক্রিয়াটাই বিঘ্নিত হয়েছে।
প্রশাসনের একাংশের অনুমান, মুড়াগাছা উড়ালপুলের ‘রিটেনিং ওয়াল’-এর একাংশের চাপ ওই পাইপলাইনের উপরে গিয়ে পড়েছে। সে কারণে দু’টি পাইপলাইনের মধ্যবর্তী জয়েন্ট খুলে যায়। যদিও কেএমডিএ কর্তৃপক্ষের তরফে স্পষ্ট ভাবে ফাটলের কারণ জানানো হয়নি। তবে মুড়াগাছার ওই রাস্তায় উড়ালপুলের কারণে আগামী দিনেও এমন বিপর্যয় ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা অনেকের। সে কারণে বিকল্প জলের লাইনের দাবিও উঠেছে।
উল্লেখ্য, পুর এলাকার বেশির ভাগ জায়গায় গঙ্গার পরিস্রুত জল আসার জন্য অনেক দিনই ভূগর্ভস্থ জল তোলা বন্ধ। তাই আচমকা এই বিপর্যয়ে জলের ব্যবস্থা করতে হিমশিম খাচ্ছে সংশ্লিষ্ট পুরসভাগুলি। নিউ ব্যারাকপুর পুরসভার চেয়ারম্যান প্রবীর সাহা জানাচ্ছেন, অসুবিধা সত্ত্বেও তাঁরা অনেক জায়গাতেই জল সরবরাহ করতে পেরেছেন। মধ্যমগ্রাম পুরসভার চেয়ারম্যান নিমাই ঘোষ জানান, জরুরি ভিত্তিতে ফাটল সারাইয়ের কাজ চলছে। ঘটনাস্থলে আছেন সরকারি প্রতিনিধিরা। তাঁর কথায়, ‘‘মধ্যমগ্রাম পুরসভার একাংশে বুস্টার পাম্পিং স্টেশন যেখানে চালানো সম্ভব, চালানো হয়েছে। তবে যেখানে যেখানে একেবারেই জল আসছে না, সেখানে পুরসভার তরফে জলের গাড়ি পাঠানো হয়েছে গত দু’দিনে।’’
বারাসতের পুর চেয়ারম্যান অশনি মুখোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, ১০ থেকে ১২টি ওয়ার্ডে এই বিপর্যয়ের প্রভাব পড়েছে। হৃদয়পুর, প্রসাদপুর, মালঞ্চ, দক্ষিণপাড়া, বর্মা কলোনির মতো বিস্তীর্ণ এলাকার লোকজন জলের অভাবে ভুগছেন গত দু’দিন ধরে। অশনি বলেন, ‘‘আমরা ভূগর্ভস্থ জল ট্যাঙ্কারে ভর্তি করে বাড়ি বাড়ি পাঠাচ্ছি। কেএমডিএ-র সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছি। আশা করছি, দ্রুত সমস্যা মিটে যাবে।’’