পাখি নিধনে উদ্বেগ বাড়ছে গ্রামবাসীর
Hunters

শীত পড়তেই বন্দুক হাতে ঘাতকেরা

দেগঙ্গার চাঁপাতলার পঞ্চায়েতের কেয়াডাঙা, চাঁদপুর গ্রামে শীত পড়তেই জলাশয়গুলিতে ভিড় করে বক, শামুকখোল, কাকসোলের দল।

Advertisement

নির্মল বসু

বসিরহাট শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০২০ ০৫:৪৪
Share:

শিকারি: এ ভাবেই এয়ারগান হাতে ভিড় করে যুবকের দল। ছবিটি তুলেছেন সজলকুমার চট্টোপাধ্যায়

টুঁ শব্দটিও বেরোয় না ওদের মুখ দিয়ে। তার আগেই বেরিয়ে যায় ছোট্ট প্রাণ। পাখিশিকারিদের শখ মেটাতে দলে দলে নিকেশ হয়ে যায় বক, শামুকখোল, কালসোলের দল।

Advertisement

বছরের পর বছর ধরে কিছু মানুষের শীতকালীন এই প্রাণঘাতী শখ দেখে দেখে ক্ষুব্ধ গ্রামের মানুষ। মাঝে মধ্যে চোরাশিকারিদের কাছ থেকে বন্দুক কেড়ে নেন তাঁরা। কিন্তু দেগঙ্গার কালিয়ানি বিল, চাতরে বিল, হাড়োয়া বিল, কেয়াডাঙা, চাঁদপুর গ্রামের মানুষ জানেন, এটুকু প্রতিবাদে পুরোপুরি বন্ধ করা যাবে না পাখি শিকারের প্রবণতা। দরকার পুলিশ-প্রশাসনের কড়া নজরদারি।

দেগঙ্গার চাঁপাতলার পঞ্চায়েতের কেয়াডাঙা, চাঁদপুর গ্রামে শীত পড়তেই জলাশয়গুলিতে ভিড় করে বক, শামুকখোল, কাকসোলের দল। আসে নানা পরিযায়ী পাখি। তাদের মেরে হাতের সুখ করে কিছু লোক। কেউ কেউ আসে তার মাংসের লোভে। বন্দুক হাতে প্রায়ই তাদের জলাশয়ে আশপাশে ঘুরে বেড়াতে দেখেন গ্রামের মানুষ। তাঁদের চোখে পড়ে, গুলিবিদ্ধ পাখি ডানা ঝাপটাতে ঝাপটাতে মাটিতে পড়ে গেলে শিকারিরা কি নির্মম ভাবে সে সব পাখির গলা কেটে ঢুকিয়ে নেয় প্লাস্টিকের প্যাকেটে।

Advertisement

স্থানীয় বাসিন্দা স্বপন মণ্ডল, অহাব গাজি, রতন দাস, চন্দ্রা ঘোষ বলেন, ‘‘এক সময়ে শীতের শুরুতেই জলাশয় ভরে যেত পরিযায়ী পাখিতে। বহিরাগতদের পাশাপাশি এলাকার কমবয়সী যুবকের দলও পাখিমারা বন্দুক কিনে শিকারের বীভৎস আনন্দে মেতে উঠত। এ কারে পাখি আসাও কমে গিয়েছে এই চত্বরে।’’ গ্রামবাসীরা জানালেন, মাত্র ৬ হাজার টাকাতেই পাখিমারা বন্দুক কিনতে পাওয়া যায়। সেই বন্দুক হাতে দল বেঁধে জুটে যায় শিকারিরা।

গ্রামে গিয়ে দেখা হল পক্ষীপ্রেমি রাকেশ মণ্ডল, সিদ্দিক আলি, কল্পনা বিশ্বাস, রুকশানা পারভিনদের সঙ্গে। তাঁরা জানালেন, শীতের শুরুতে হাজার হাজার পরিযায়ী পাখি এসে জলাশয়ে বসে। এটা এলাকার গর্ব। কিন্তু কিছু মানুষ সেই সৌন্দর্য উপভোগ করার বদলে হিংস্র খেলায় মাতে। পাখি মারার জন্য শাস্তির ব্যবস্থা থাকা উচিত, bমনে করেন গ্রামের বহু মানুষ।

চাঁপাতলার পঞ্চায়েতের প্রধান হুমায়ুন রেজা চৌধুরী বলেন, ‘‘অকারণ প্রাণিহত্যা অপরাধ। কেউ যাতে পাখি না মারে, সে জন্য পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে মানুষকে সচেতন করতে প্রচার চালানো হচ্ছে।’’

পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘সর্বক্ষণ পাহারা দেওয়া আমাদের পক্ষ সম্ভব হয় না। তবে গ্রামের মানুষের থেকে খবর পেলে আমরা যাই। মানুষকে সচেতন হতে হবে। না হলে শুধুমাত্র আইনের শাসন দিয়ে এই প্রবণতা বন্ধ করা মুশকিল।’’

বাসন্তীর চুনাখালি পঞ্চায়েত এলাকায় পাখি শিকার রুখতে কিছু দিন আগে কড়া পদক্ষেপ করেছে পঞ্চায়েত। উপপ্রধান নরেশচন্দ্র নস্কর বলেন, ‘‘প্রতি বছর পরিযায়ী পাখিরা শীত পড়লেই এই এলাকায় আসে। তবে এ বার শীতের অনেক আগে থেকেই বহু পাখি এলাকায় এসেছিল। চোরাশিকারিদের হাত থেকে পাখিদের রক্ষা করতে আমরা পাহারার ব্যবস্থা করেছি। যাতে কেউ এই পাখিদের ক্ষতি না করতে পারে, সে দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই বেশ কিছু চোরাশিকারিকে ধরে তাদের সাবধান করা হয়েছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement