কেন শুধু লাঠির ভরসায় গ্রামে গেল ছেলে, প্রশ্ন মায়ের

বিশ্বজিতের মা প্রতিমা বলেন, ‘‘ছেলেটা এমএ পড়ে শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন দেখত। কিন্তু অভাবের সংসারে ভিলেজ পুলিশের কাজ নেয়। এই পরিণতি হবে ভাবিনি।’’

Advertisement

নির্মল বসু

সন্দেশখালি শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০১৯ ০১:০৬
Share:

শোকার্ত: কান্নায় ভেঙে পড়েছেন বিশ্বজিতের মা। িনজস্ব চিত্র

বিশ্বজিতের খুনিদের কঠোর শাস্তি চাইছে গ্রাম। এলাকায় জনপ্রিয় এবং সাহসী হিসাবে পরিচিতি ছিল যুবকের। রবিবার রাতে তাঁর দেহ পৌঁছয় গ্রামে। সোমবার থেকে সন্দেশখালির ঢোলখালি গ্রামে বিশ্বজিৎদের বাড়িতে উপচে পড়েছে ভিড়। এ দিনই তাঁর শেষকৃত্য হয়েছে। গ্রামে রাজনৈতিক নেতারা এলে তাঁদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন সাধারণ মানুষ। খুনে অভিযুক্ত কেদার সর্দার, লাল্টু সর্দার-সহ দু’জন গ্রেফতারের পরে এ দিন রাজু সর্দার নামে কেদারের আরও এক সাগরেদকে হাসনাবাদ থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

Advertisement

বিশ্বজিতের মা প্রতিমা বলেন, ‘‘ছেলেটা এমএ পড়ে শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন দেখত। কিন্তু অভাবের সংসারে ভিলেজ পুলিশের কাজ নেয়। এই পরিণতি হবে ভাবিনি।’’ প্রতিমা বলেন, ‘‘উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ছাড়া কী ভাবে সে রাতে হাতে একখানা লাঠির ভরসায় পুলিশের সঙ্গে নিয়ে যাওয়া হল ওকে?’’ বিশ্বজিতের ভাই অভিজিৎ বলেন, ‘‘আমার সঙ্গে চেন্নাই যাওয়ার জন্য দাদাকে বলেছিলাম। কিন্তু বাবা-মাকে দেখবে বলে গ্রামে থেকে গেল।’’

সদ্য সন্তানহারা মাকে সমবেদনা জানাতে গ্রামে গিয়েছিলেন তৃণমূল, বিজেপি এবং সিপিএম নেতারা। তাঁদের দেখে ক্ষুব্ধ জনতার প্রশ্ন, এত দিন কেদার বাহিনী তাণ্ডব চালিয়ে গেলেও আগে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি কেন! গ্রামের কেউ কেউ বলেন, ‘‘যখন যে দল ক্ষমতায় এসেছে, তাদের হয়ে কেদারকে এলাকায় সন্ত্রাস করতে দেখে গিয়েছে।’’সন্দেশখালির সিপিএমের প্রাক্তন বিধায়ক নিরাপদ সর্দারের কথায়, ‘‘কেদার তো আমাকেও গুলি করতে গিয়েছিল। ঘরে আগুন দেওয়া, মহিলাদের শ্লীলতাহানি, ছিনতাই, তোলা আদায়— নানা অপকর্ম করে বেড়াত।’’ নিরাপদর আশঙ্কা, ‘‘সন্দেশখালির গ্রামে গ্রামে আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করতে না পারলে আরও বড় ঘটনা ঘটতে পারে।’’ একই দাবি করে বিজেপি নেতা গণেশ ঘোষ বলেন, ‘‘পুলিশের তৎপরতার অভাবে কেদার বাহিনীর এই বাড়বাড়ন্ত।’’

Advertisement

রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেতা জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের কথায়, ‘‘প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে সরকার। আমরা দলগত ভাবে সব রকম সাহায্য নিয়ে পরিবারটির পাশে আছি।’’

খোকন মণ্ডল, সারথি মাইতি, পরান মণ্ডলরা বলেন, ‘‘ইদানীং গ্রামে কোনও অনুষ্ঠান হলেও তোলা দিতে হত কেদারকে। পুলিশকে জানিয়েও সুরাহা হত না। সব দেখে শুনে নেতারাও চুপ করে থাকতেন।’’ রূপলেখা মান্না, পরীক্ষিত দাস, দেবপ্রসাদ সর্দার, গোপাল পাত্রেরা বলেন, ‘‘সব সময়ে পকেটে রিভলভার নিয়ে ঘুরত কেদার। ভয় দেখাত। আমাদের বাড়িতে হামলা চালিয়ে লুঠ করে। প্রতিবাদ করায় গ্রাম থেকে তাড়িয়ে দেয়। নেতাদের ধরেও কোনও কাজ হয়নি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement