এক হাতেই পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে পৌলোমী। নিজস্ব চিত্র
ফুল তোলার ছোট্ট হাত বোমায় উড়ে গিয়েছিল পাঁচ বছর আগে। হাড়োয়ার সাত বছরের পৌলোমী হালদার সেই সময় তার ডান হাত কপালে ঠেকিয়ে বারবার বলত, ‘‘বাঁ হাতটা ফিরিয়ে দাও ঠাকুর।’’
হাত ফেরেনি। নকল হাত পেয়েছিল। এখন ব্যবহার করে না। সে দিনের পৌলোমী এখন বারো বছরের বালিকা। অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। সোমবার বনগাঁয় তার চেয়ে দু’বছরের ছোট রাজু রায়ের বোমা বিস্ফোরণে মৃত্যুর কথা শুনে পৌলোমীর আবেদন, ‘‘আমরা ছোটরা তো রাজনীতির মধ্যে নেই। তবুও আমরা হিংসার হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছি না। আমার হাত উড়ে গেলেও প্রাণে বেঁচে আছি। বনগাঁর ভাইটা মারা গেল। বন্ধ হোক বোমা তৈরি। বোমা ফাটানো।’’
২০১৮-র ২০ এপ্রিল সকালে বাড়ির পাশে ফুল তুলতে গিয়ে বল ভেবে বোমা তুলে নিয়েছিল পৌলেমী। বাড়ির বড়রা দেখে তা ফেলে দিতে বলেন। ফেলার আগেই বোমাটি ফেটে যায়। উড়ে যায় পৌলোমীর বাঁ হাত। পঞ্চায়েত ভোটের ঠিক আগে এই ঘটনায় তোলপাড় হয়েছিল রাজ্য।
এ বারও পঞ্চায়েত ভোটের আগে বোমা বিস্ফোরণে রাজুর মৃত্যু। রাজনৈতিক কারণেই গণ-শৌচাগারে বোমা মজুত করা হয়েছিল কি না, সে প্রশ্নও উঠছে। পৌলোমী বলে, ‘‘ভোট বা রাজনীতি তো মানুষের স্বার্থের কথা ভেবে হওয়ার কথা। কিন্তু তা তো হচ্ছে না। বরং রাজনৈতিক হিংসায় হতাহত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।’’
মেয়েটি জানায়, এখন আর নকল হাত ব্যবহার করতে ভাললাগে না। হাতটা বড্ড ভারী। তাই খুলে রেখে যতটুকু বাঁ হাত অবশিষ্ট আছে, তা দিয়েই কাজ চালায়। তার কথায়, ‘‘পরিস্থিতির সাথে লড়তে শিখে নিয়েছি।’’ পৌলোমীর দিদি পল্লবী বলেন, “ বোন নিজের সব কাজ নিজেই করতে চেষ্টা করে। কারও সাহায্য নিতে চায় না সহজে। আবার একটা পঞ্চায়েত ভোট আসছে। আর যেন কারও ভাই-বোনের এমন পরিণতি না হয়।’’
পৌলোমীর মা দীপালি সেলাইয়ের কাজ করেন তাঁর ক্ষোভ, ওই ঘটনার পরে অনেক সাহায্যের প্রতিশ্রুতি এসেছিল। কেউ কথা রাখেনি। স্বামী অসুস্থ। কাজ করতে পারেন না। মেয়েদের পড়াশোনার খরচ, চিকিৎসার খরচ— সব সামলে ওঠা যাচ্ছে না।