বেহাল: এই বাড়িতেই সপরিবার থাকেন তাহের আলি। নিজস্ব চিত্র
আমপানে দরমার বেড়া দেওয়া এক চিলতে মাটির বাড়ির চাল উড়ে গিয়েছিল। অনেক ছোটাছুটি করেও সরকারি সাহায্য মেলেনি। পঞ্চায়েত থেকে পাওয়া ত্রিপল দিয়ে ঘরের চাল কোনও রকমে মেরামত করে স্ত্রী, দুই ছেলেকে নিয়ে থাকেন ভাঙড় ২ ব্লকের পূর্ব কাঁঠালিয়া গ্রামের বাসিন্দা তাহের আলি মোল্লা।
এ বার আবাস প্লাস ঘরের তালিকায় নাম এসেছে তাহেরের। সরকারি ভাবে সমস্ত তথ্য যাচাই করা হলেও এখনও মেলেনি ঘরের টাকা। সামনে বর্ষা। ফের বৃষ্টিতে ঘর ভাসার আশঙ্কা করছেন তিনি।
শুধু তাহের নন, ঘরের তালিকার নাম থাকা সত্ত্বেও টাকা না পাওয়ায় হতাশায় ভুগছেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার বহু মানুষ।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৮-১৯ সালে সরকারি আবাস প্লাস ঘরের জন্য নামের তালিকা তৈরি করা হয়েছিল। পরে ব্লক প্রশাসনের তদারকিতে সরকারি ভাবে সমস্ত তথ্য যাচাই করার পরে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হয়।
জেলায় আবাস প্লাস ঘরের জন্য প্রথমে ৫ লক্ষ উপভোক্তার নামের তালিকা তৈরি হয়েছিল। এর মধ্যে সমস্ত তথ্য যাচাই করে ১ লক্ষ ২০ হাজার উপভোক্তার নাম বাদ যায়। প্রথম পর্যায়ের টাকার জন্য ১ লক্ষ ১৪ হাজার ৩৮২ জনের নাম অনুমোদন হয়। তিন মাস অতিক্রান্ত হয়ে গেলেও এখনও কারও অ্যাকাউন্টে টাকা ঢোকেনি।
তালিকাভুক্ত মানুষ টাকা না পেয়ে পঞ্চায়েত, ব্লক থেকে শুরু করে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে ছোটাছুটি করছেন। অভিযোগ, কোথাও কোনও সদুত্তর মেলেনি।
তাহের বলেন, ‘‘সামনে বর্ষাকাল। তার আগে ঘর না হলে কী ভাবে থাকব বুঝতে পারছি না। পঞ্চায়েতে গেলে বলা হচ্ছে কেন্দ্র টাকা দিচ্ছে না, তাই টাকা ঢুকছে না।’’
এ বিষয়ে তৃণমূলের রাজ্য কমিটির সাধারণ সম্পাদক সওকাত মোল্লা বলেন, ‘‘আমাদের রাজ্যে আবাস প্লাস ঘরের তালিকায় ৫৬ লক্ষ মানুষের নাম ছিল। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বচ্ছ তালিকা প্রকাশ করার জন্য প্রশাসনের সমস্ত স্তরকে কাজে লাগিয়ে ২৩ লক্ষ নাম বাদ দিয়েছেন। এরপরেও কেন্দ্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য টাকা দেওয়া নিয়ে টালবাহানা চলছে। তৃণমূল যাতে পঞ্চায়েত ভোটে ভাল ফল করতে না পারে, সে জন্যই এ সব করা হচ্ছে।’’
এ বিষয়ে বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য সুনীপ দাস বলেন, ‘‘ওরা কেন্দ্রের বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা চুরি করেছে। কেন্দ্র যখন হিসেব চাইছে, তখন দিতে পারছে না। বাড়ির জন্য যে নামের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে, তা নিয়ে বিস্তর অভিযোগ আছে। প্রকৃত গরিব মানুষ ঠিকইটাকা পাবেন। পশ্চিমবঙ্গ ছাড়া তো অন্য কোনও রাজ্যে এই সমস্যা হচ্ছে না।’’
এ বিষয়ে জেলাশাসক সুমিত গুপ্তা বলেন, ‘‘জানুয়ারি মাসে আবাস প্লাস ঘরের জন্য প্রথম কিস্তির টাকা ঢোকার কথা ছিল। কিন্তু এখনও পর্যন্ত টাকা আসেনি। টাকা এলেই সকলের অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।’’