Ganga Sagar Mela 2024

কুয়াশায় আটকে ভেসেল, ভিড়ের চাপে হুড়োহুড়ি 

সোমবার ভেসেল-ঘাট থেকে শুরু করে মন্দির চত্বর, সর্বত্রই প্রশাসনের নিরাপত্তা ও ব্যবস্থাপনায় খামতির অভিযোগ তুলেছেন পুণ্যার্থীরা।

Advertisement

সমরেশ মণ্ডল

গঙ্গাসাগর শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০২৪ ০৮:৫৮
Share:

সকালের দিকে দৃশ্যমানতা কম ছিল কুয়াশার জেরে। নিজস্ব চিত্র।

সব রকম প্রস্তুতির আশ্বাস থাকলেও মকর সংক্রান্তির দিনই সাগরমেলায় ঘটল বিপত্তি। কুয়াশার জেরে দীর্ঘক্ষণ ভেসেল বন্ধ থাকায় পুণ্যার্থীদের ভিড় জমে যায়। ঘাটে ভেসেল পৌঁছতেই শুরু হয় ধাক্কাধাক্কি, হুড়োহুড়ি।

Advertisement

প্রশাসন সূত্রের খবর, এ দিন ভোর থেকে ঘন কুয়াশার জেরে সকাল প্রায় ১০টা পর্যন্ত ভেসেল চলাচল বন্ধ রাখতে হয়েছিল। ফলে কাকদ্বীপ লট ৮ জেটি ঘাটগুলিতে হাজার হাজার পুণ্যার্থীর ভিড় জমে যায়। ১০টা নাগাদ ঘাটে ভেসেল পৌঁছতেই শুরু হয় ঠেলাঠেলি-ধাক্কাধাক্কি। গেট দিয়ে ভিতরে ঢুকতে না পেরে বারণ সত্ত্বেও অনেকে লাফিয়ে রেলিং টপকে ভেসেলে ওঠেন। হুড়োহুড়িতে অনেকে পড়ে যান বলে স্থানীয় সূত্রের খবর। ভেসেল যখন ছাড়ে, তখন সেখানে তিলধারণের জায়গা ছিল না।

প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছিল, ঘন কুয়াশায় ভেসেল পরিষেবা সচল রাখতে অস্ট্রেলিয়া কয়েক লক্ষ টাকা খরচ করে বিশেষ আলো নিয়ে আনা হয়েছে। এ দিনের ঘটনার পরে সেই আলোর কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে। যদিও এ বিষয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে মেলার দায়িত্বে থাকা মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস বলেন, ‘‘কুয়াশার জন্য এ দিন বিভিন্ন জায়গায় বিমান পরিষেবাও বন্ধ ছিল। কিছুটা সমস্যা হয়েছে ঠিকই, তবে অ্যান্টি ফগ লাইট ব্যবহার করে পরিষেবা অনেকটা স্বাভাবিক রাখা হয়েছে। তেমন সমস্যা হয়নি।’’

Advertisement

ভিড় এড়াতে পাঁচ ঘণ্টা আটকে রাখা হয়েছিল যাত্রীদের বাস। পুলিশ জানায়, বেলা ২টোর সময়ে গঙ্গাসাগর বাস স্ট্যান্ড থেকে চারটি যাত্রী বোঝাই বাস কচুবেড়িয়ার দিকে রওনা দেয়। কিন্তু মুড়িগঙ্গা নদীতে সে সময়ে ভাটা থাকায় ভেসেল চলছিল না। বাসগুলিকে চকফুলডুবি বাফার জ়োনে আটকে রাখা হয়। বেলা ৩টে থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত আটকে ছিলেন যাত্রীরা। তাঁদের অনেকে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

সোমবার ভেসেল-ঘাট থেকে শুরু করে মন্দির চত্বর, সর্বত্রই প্রশাসনের নিরাপত্তা ও ব্যবস্থাপনায় খামতির অভিযোগ তুলেছেন পুণ্যার্থীরা। বিহার থেকে এসেছিলেন সঞ্জয় যাদব। তিনি বলেন, ‘‘আমরা এক সঙ্গে কুড়ি জন এসেছি। বার্জ থেকে নামার পরে প্রশাসনের লোকজন আমাদের এ দিক ও দিক ঘুরিয়ে প্রায় এক ঘণ্টা আটকে রেখে তারপরে গাড়িতে উঠতে দেয়। জল খেতেও বেরোতে দেয়নি।’’ কেউ কেউ অভিযোগ করেন, পুজো দেওয়ার পরে জোর করে মেলা চত্বরে থাকতে বাধ্য করা হয়েছিল দীর্ঘ সময়।

পশ্চিমবঙ্গ ভূতল পরিবহণ নিগম সূত্রের খবর, ২৪ ঘণ্টা ভেসেল পরিষেবা দেওয়া যাচ্ছে না। কারণ, এক দিকে ঘন কুয়াশা। অন্য দিকে, ভাটা হলে নদীর চরে দীর্ঘক্ষণ ভেসেল আটকে যাচ্ছে। ফলে নদী পাড়ে দু’দিকে যাত্রীদের জমায়েত বাড়ছে। এক জায়গায় বেশি মানুষের ভিড় হলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা বাড়ে। তাই পুণ্যার্থীদের এ দিক ও দিক ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে অন্যত্র নিয়ে যেতে হচ্ছে প্রশাসনের লোকজনকে।

সোমবার বিকেলে সাংবাদিক সম্মেলন করে জেলা প্রশাসন জানায়, এ দিন বেলা ৩টে পর্যন্ত গঙ্গাসাগর মেলায় প্রায় এক কোটি পুণ্যার্থী এসেছেন। সংখ্যাটা আরও বাড়তে পারে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনায় সমস্যা দেখা দিলেও বড় কোনও দুর্ঘটনা ঘটেনি। কয়েক জন টোটো চালক অভিযোগ করেন, গঙ্গাসাগর বাস স্ট্যান্ডের কাছাকাছি চলে আসায় প্রশাসনের লোকজন তাঁদের গাড়ির কাচ ভেঙে দেয়। কয়েক জনকে মারধর করা হয় বলেও অভিযোগ। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘বিষয়টি আমরা খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’ মন্ত্রী অরূপ বলেন, ‘‘মেলার পরিকাঠামো খুব সুন্দর করা হয়েছে। সব দিক সুষ্ঠু ভাবে সামাল দেওয়া হয়েছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement