বন্ধ: রক্ষণাবেক্ষণের কাজের জন্য সব রকম গাড়ি চলাচল নিষিদ্ধ বারাসত উড়ালপুলে। শনিবার। ছবি: সুদীপ ঘোষ।
বারাসত উড়ালপুলের সংস্কার শুরু হতেই যানজটে নাকাল শহরবাসী। জেলার নানা প্রান্ত থেকে যাঁরা প্রতি দিন নানা কাজে জেলা সদর বারাসতে আসেন, দুর্ভোগে পড়েছেন তাঁরা। বারাসতের উপর দিয়ে যাঁরা সড়ক পথে কলকাতায় যাতায়াত করেন, সমস্যায় পড়েছেন তাঁরাও। শুক্রবার রাত থেকে শুরু হয়েছে সংস্কারের কাজ। প্রশাসন সূত্রের খবর, প্রায় তিন মাস লাগার কথা এই কাজে।
পুলিশ ও প্রশাসন সূত্রের খবর, বারাসত শহরের কলোনি মোড় থেকে চাঁপাডালি মোড় পর্যন্ত সংযোগকারী উড়ালপুলের সংস্কার করছে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পূর্ত দফতর। সূত্রের খবর, আগামী ৪০ দিন পর্যন্ত স্বাস্থ্য পরীক্ষার কাজ করবেন পূর্ত দফতরের বারাসত ডিভিশনের ইঞ্জিনিয়ারেরা। প্রতি সপ্তাহেরশুক্রবার রাত ১০টা থেকে সোমবার ভোর ৩টে পর্যন্ত সংস্কারের কাজ চলবে। সূত্রের খবর, মূলত উড়ালপুলের স্তম্ভের বল বেয়ারিংয়ের কাজ হবে। কাজ চলাকালীন উড়ালপুলবন্ধ থাকবে। অন্যান্য দিন কোনও ধরনের ভারী গাড়ি যাতায়াত করতে পারবে না। শুধুমাত্র যাত্রিবাহী গাড়ি চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে দোলতলা পুলিশ লাইনে বিভিন্ন থানার পুলিশ, ট্র্যাফিক পুলিশ-সহ বাস, ট্রাক, অটো, টোটো ইউনিয়নের কর্মীদের নিয়ে ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে বৈঠক করেছেন বারাসত পুলিশ জেলার অতিরিক্ত সুপার স্পর্শ নীলাঙ্গি।
সূত্রের দাবি, প্রায় দু’দশক বয়স এই উড়ালপুলের। একাধিক বার সংস্কারের কাজও হয়েছে। তবে গত দু’বছর ধরে তেমন কোনও সংস্কার হয়নি। উড়ালপুলের নীচে প্রচুর হকার ব্যবসা করেন। অনেক দোকানপাটও আছে। প্রতি দিন অসংখ্য মানুষের যাতায়াত চলে। ফলে দুর্ঘটনা রুখতে বারাসত উড়ালপুলের সংস্কার জরুরি হয়ে পড়েছিল।
পুলিশ এবং প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বারাসত উড়ালপুলের নীচে ৩২টি স্তম্ভ রয়েছে। প্রতিটি স্তম্ভের সঙ্গে রয়েছে বেয়ারিং। মূলত এই বেয়ারিংগুলি সংস্কার করা হবে। উড়ালপুলের যে স্তম্ভগুলিতে যে দিন কাজ হবে, সে দিন ওই স্তম্ভের নীচে হকারদের সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সংস্কারের কাজ চলাকালীন শহরে ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করেছেন বারাসত পুলিশ জেলার কর্তারা।
পুলিশের নির্দেশ অনুযায়ী, শনিবার টাকি রোড ধরে যাতায়াতের সমস্ত গাড়ি বারাসত উড়ালপুল দিয়ে ১২ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে, সেগুলিকে কাচকল মোড় সংলগ্ন দাদার মোড় থেকে ঘুরিয়ে দত্তপুকুর হয়ে জাতীয় সড়কে নিয়ে যাওয়া হয়। বনগাঁর দিক থেকে যে সমস্ত গাড়ি বারাসতের উড়ালপুল হয়ে ১২ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে, সেগুলি অশোকনগরের বিল্ডিং মোড়ের ডান দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। বারাসত শহরে না ঢুকিয়ে পণ্যবাহী ট্রাকগুলি কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে বারাসত ট্র্যাফিক পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। এ ছাড়া, বারাসত তিতুমীর বাস স্ট্যান্ড থেকে যে বাসগুলি ব্যারাকপুরে যায়, সেগুলির জন্য বারাসত-ব্যারাকপুর রোডের সত্যভারতী স্কুলের সামনে অস্থায়ী স্ট্যান্ড করা হয়েছে। জাগুলিয়ার দিকের বাসের অস্থায়ী স্ট্যান্ড করা হয়েছে ময়নায়। কলোনি মোড় থেকে চাঁপাডালি মোড়ের অটো এবং টোটো যাতায়াত করবে ১১ নম্বর রেলগেট সংলগ্ন সন্ধানী ক্লাবের সামনে রাস্তা ধরে।
এ দিকে, শহরের নানা পথও আটকে দেওয়া হয়েছে। সেখানে পুলিশ, সিভিক ভলান্টিয়ার মোতায়েন থাকলেও যাত্রীদের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হতেও দেখা গিয়েছে শনিবার। ব্যস্ত সময়ে পথে বেরিয়ে যানজটে আটকে পড়েছেন অনেকেই।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার স্পর্শ নীলাঙ্গি বলেন, ‘‘যানজট কাটাতে অতিরিক্ত ট্র্যাফিককর্মী মোতায়েনকরা হয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার সময়ে উড়ালপুল খোলা রাখা হবে।’’