ময়দানে মুখোমুখি বাঘা-পাঠানরা

দুই মালিকের তর্জন-গর্জনে উৎসাহিত হয়ে পাঠান আর বাঘাও লাল চোখে তাকিয়ে থাকে একে অন্যের দিকে। সুযোগ খোঁজে ঝাঁপিয়ে পড়ার।

Advertisement

নির্মল বসু

সন্দেশখালি শেষ আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০১৮ ০১:০৩
Share:

আয়-লড়ি: সন্দেশখালিতে। নিজস্ব চিত্র।

লড়ে যা পাঠান...। শীতের বিকেলে চাদরটা কোমরে জড়িয়ে হুঙ্কার ছা়ড়েন সনাতন সর্দার।

Advertisement

উল্টে দিক থেকে পাল্টা গর্জন ভেসে আসে, ‘‘শেষ দেখে ছাড়বি বাঘা’’— ঘাড়ের কাছে এসে পড়া কোঁকড়া চুলগুলো এক ঝটকায় সরিয়ে দেন বাঘার মালিক গুপি সর্দার।

দুই মালিকের তর্জন-গর্জনে উৎসাহিত হয়ে পাঠান আর বাঘাও লাল চোখে তাকিয়ে থাকে একে অন্যের দিকে। সুযোগ খোঁজে ঝাঁপিয়ে পড়ার। নখে বাঁধা লোহার ধারাল পাতে প্রতিদ্বন্দ্বিকে ফালা ফালা করে দিতে মরিয়া দু’জনেই। শুরু হয় ঝটাপটি। গোল করে ঘিরে থাকা ভিড়টা হাততালি দেয় ঘনঘন। বাঘা-পাঠানের লড়াইয়ে তখন ভিড়ের আনাচ-কানাচে হাতে হাতে টাকা ঘুরছে। জুয়াড়িরা যে যার কাজ গুছিয়ে নিতে ব্যস্ত। আর হিমেল হাওয়া গায়ে মেখে টাকার পর টাকা লাগিয়ে গা গরম হয়ে ওঠে দর্শকদের অনেকের।

Advertisement

পৌষ সংক্রান্তির আগে-পরে সন্দেশখালির মেটেখালি গ্রামে মোরগ লড়াই বহু বছর ধরে আদিবাসী সংস্কৃতির অংশ। ইদানীং আদিবাসী পাড়ার মানুষজন ছাড়াও আরও অনেকে ভিড় করেন খেলা দেখতে। এক তো উত্তেজনায় ভরা মোরগ লড়াই দেখার নেশা। আর আড়ালে-আবডালে জুয়া তো বাড়তি পাওনা।

তরুণ সঙ্ঘের উদ্যোগে সন্দেশখালির গ্রামে মোরগ লড়াইয়ের আসর বসে। আশেপাশের এলাকা থেকে বহু মানুষ আসেন। তিন দিন ধরে লড়াই চলে। জানা গেল, এ বছর প্রায় ২০ হাজার মোরগ যোগ দিয়েছিল খেলায়। ছোট ছোট দলে ভাগ করে খেলা চলেছে বিশাল মাঠের নানা প্রান্তে।

মোরগ লড়াই উপলক্ষে মেলারও আয়োজন হয়। বছরের এই সময়টায় সন্দেশখালির গ্রামে মোরগ বিক্রি বেড়ে যায়। কারও কারও মোরগ সারা বছর ধরে প্রশিক্ষণ দেওয়া। কেউ লড়াইয়ের আসরে ঢোকার আগে মোরগ কিনে নেমে পড়েন। খেলায় হার-জিত তাঁদের কাছে বড় কথা নয়। লড়াইয়ের নেশাটাই আসল।

মেলা উদ্যোক্তাদের দাবি, মেটেখালি বাজারে মোরগ লড়াই অনেক পুরনো। প্রতি হাটবারেই মোরগ লড়াই হয়। তবে পৌষ সংক্রান্তির অপেক্ষায় বসে থাকে গোটা আদিবাসী সমাজ।

তরুণ সঙ্ঘের সভাপতি সুরেন্দ্রনাথ সর্দার বলেন, ‘‘বাবার মুখে শুনেছি তাঁর বাবারাও নাকি এই লড়াইয়ে যোগ দিতেন। কবে থেকে এই প্রথা শুরু হয়েছে জানি না।’’

এ বার রাঁচি থেকে এক মোরগ বিক্রেতা এসেছিলেন। জানালেন, ৪ হাজার টাকাতেও একটি মোরগ বিক্রি করেছেন।

কী ভাবে লড়াইয়ের জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়?

স্থানীয় মানুষজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, এমনিতেই মোরগ মাথা গরম প্রকৃতির। উল্টো দিকে প্রতিদ্বন্দ্বিকে দেখলে রেগেমেগে আক্রমণ করতে এগোয়। তা ছাড়া, লড়াইয়ের জন্য তাদের নানা ভাবে উসকে দেন মালিক। লড়াইকে আরও উত্তেজক বানাতে পায়ে বেঁধে দেওয়া হয় লোহার ধারাল ফলা। একবার প্রতিদ্বন্দ্বির রক্ত দেখলে কিংবা পালক উড়তে দেখলে মোরগের শরীরেও শিহরণ জাগে, জানালেন লড়াইয়ের সঙ্গে যুক্ত অনেকে।

খেলার নিয়ম অনুযায়ী, পরাজিত মোরগটিকে আহত অথবা নিহত অবস্থায় জয়ী মোরগের মালিকের হাতে বিনামূল্যে তুলে দেওয়া হয়। সেই মাংসে সবান্ধব ভোজন সারেন মালিক। মাংস বিক্রি করেও মেলে টাকা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement