মুখ ফিরিয়ে যাঁরা, তাঁদের ফেরাতে তৎপরতা তৃণমূলে

দলীয় সূত্রের খবর, ভোট কুশলী প্রশান্ত কিশোর দলীয় নেতৃত্বকে জানিয়েছেন, কয়েকজন কাউন্সিলরকে টেনে পুরসভার দখল নেওয়া এক জিনিস। কিন্তু দলীয় কর্মীরা না ফিরলে ভোট ব্যাঙ্ক উদ্ধার হবে না।

Advertisement

সুপ্রকাশ মণ্ডল

শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০১৯ ০৩:০৩
Share:

প্রতীকী ছবি।

লোকসভা ভোটের ফল বেরোনোর পর থেকে ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে বড়সড় ধাক্কা খেয়েছিল তৃণমূল। বিজেপির কাছে ক্রমশ কোণঠাসা হতে থাকে তারা। একের পর এক তৃণমূলের পার্টি অফিসের দখল নেয় বিজেপি। কয়েকটি পুরসভাও তাদের দখলে আসে। কাউন্সিলরেরা যোগ দেন বিজেপিতে।

Advertisement

এরই মধ্যে বেহাত পুরসভা পুনর্দখল করেছে তৃণমূল। বিজেপির দখল করা পার্টি অফিসের সিংহভাগও বিজেপির হাত থেকে ফিরিয়ে আনতে পেরেছে ঘাসফুল শিবির। কিন্তু তাতে আত্মতুষ্টির কারণ যেন না ঘটে, নির্দেশ এল পিকে-র অফিস থেকে। দলের উপর মহলেরও তা-ই নির্দেশ। ফলে সামনে ২০২১ সালে পুরভোটকে পাখির চোখ করে দলের পুরনো-বিক্ষুব্ধ, বসে যাওয়া কর্মীদেরও ঘর ওয়াপসির জন্য চেষ্টা শুরু করেছে স্থানীয় তৃণমূল শিবির।

দলীয় সূত্রের খবর, ভোট কুশলী প্রশান্ত কিশোর দলীয় নেতৃত্বকে জানিয়েছেন, কয়েকজন কাউন্সিলরকে টেনে পুরসভার দখল নেওয়া এক জিনিস। কিন্তু দলীয় কর্মীরা না ফিরলে ভোট ব্যাঙ্ক উদ্ধার হবে না। দলে রক্তক্ষরণ কতটা হয়েছে, তা মাপতে ব্যারাকপুরে নিয়মিত কর্মীদের নিয়ে বৈঠক করছেন তৃণমূল নেতৃত্ব।

Advertisement

এক সময়ে ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চল ছিল তৃণমূলের অন্যতম শক্ত ঘাঁটি। কিন্তু গত লোকসভা ভোটে অল্প ব্যবধানে এই লোকসভা হাতছাড়া হয় তাঁদের। দু’বারের সাংসদ দীনেশ ত্রিবেদী দলের প্রাক্তন বিধায়ক অর্জুন সিংহের কাছে হেরে যান। অল্প ব্যবধানে জিতলেও ভোটের ফল প্রকাশের পরে শিল্পাঞ্চল জুড়ে বিজেপির দাপাদাপি শুরু হয়ে যায়। গারুলিয়া, শ্যামনগর, ভাটপাড়া, কাঁকিনাড়া, জগদ্দল, নৈহাটি, হালিশহর, কাঁচরাপাড়া এলাকায় তৃণমূলের শতাধিক পার্টি অফিস বিজেপি দখল করে নেয় বলে অভিযোগ।

তবে অর্জুনের দাবি, তৃণমূলের পার্টি অফিস কেউ দখল করেনি। তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা দল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন। যে অফিসে তাঁর বসতেন, সেই অফিসে তাঁরাই বসেন। যেহেতু তাঁরাই ওই অফিস তৈরি করেছিলেন, তাই তাঁরা তৃণমূলের ঝান্ডা ফেলে বিজেপির ঝান্ডা লাগিয়ে দেন।

ভোটের ফল প্রকাশের দিন চারেকের মধ্যে হালিশহর, নৈহাটি এবং কাঁচরাপাড়া পুরসভার একাধিক কাউন্সিলরকে দিল্লি নিয়ে গিয়ে নিজেদের দলে যোগ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। ভোটাভুটির মাধ্যমে ভাটপাড়া পুরসভারও দখল নেয় তারা। এর পরে নোয়াপাড়ার বিধায়ক তথা গারুলিয়ার পুরপ্রধান সুনীল সিংহও বিজেপিতে যোগ দেন। তাঁর সঙ্গে যোগ দেন গারুলিয়া পুরসভার ১২ জন কাউন্সিলর। ফলে এই পুরসভারও দখল হারায় তৃণমূল। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তৃণমূল কর্মীদেরও বিজেপিতে যোগ দেওয়ার হিড়িক পড়ে।

কিন্তু মাস ঘুরতে না ঘুরতেই পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করেছে।

হালিশহর এবং কাঁচরাপাড়ার কাউন্সিলরেরা তৃণমূলে ফেরেন। শনিবার নৈহাটি এবং গারুলিয়া পুরসভার বেশ কয়েক জন কাউন্সিলর পুরনো দলে ফেরায় প্রায় সব পুরসভারই দখল ফিরে পেল তৃণমূল। কেবল ভাটপাড়া পুরসভার দখল এখনও বিজেপির দখলেই রয়েছে। সম্প্রতি এখানে অনাস্থা ভোট হয়েছে। ফলে আগামী পাঁচ মাস এখানে পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনা যাবে না। তৃণমূলের এক প্রবীণ নেতা জানান, বহু কর্মী নানা ক্ষোভে পদ্মশিবিরে নাম লিখিয়েছেন। তাঁদের ক্ষোভ প্রশমনের চেষ্টা চলছে। পুরনো কর্মীদের ফিরিয়ে এনে জনসংযোগে ধার দেওয়াই আপাতত তৃণমূলের লক্ষ্য।

পুরসভায় সংখ্যাতত্ত্ব যে মানুষের মনের আসল কথা নয়, তা দেরিতে হলেও বুঝতে শুরু করেছেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। পুরোটাই কি পিকে-র নির্দেশ, প্রশ্ন ঘুরছে দলের অন্দরেও।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement