তৃণমূল কি দূরত্ব বাড়াচ্ছে, জল্পনা
Ration Distribution Case

শঙ্কর ধৃত, মন্তব্য এড়াচ্ছেন নেতারা

তিন মাস আগে প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক গ্রেফতার হওয়ার পরে যে ভাবে জেলা তৃণমূলের অনেক নেতা তাঁর পক্ষ নিয়ে সওয়াল করেছিলেন, শঙ্করের ক্ষেত্রে তা দেখা গেল না।

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র  

বনগাঁ শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০২৪ ০৮:৪২
Share:

গভীর রাতে গ্রেফতার শঙ্কর। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

রেশন বণ্টন দুর্নীতি মামলায় ইডি-র হাতে গ্রেফতার হয়েছেন বনগাঁর প্রাক্তন পুরপ্রধান শঙ্কর আঢ্য। কিন্তু এ নিয়ে জেলা বা মহকুমার তৃণমূল নেতাদের মধ্যে বিশেষ হেলদোল দেখা গেল না শনিবার। এ নিয়ে কোনও রকম মন্তব্য এড়াচ্ছেন তাঁরা। ফলে, প্রশ্ন উঠছে, দল কি তাঁর সঙ্গে দূরত্ব বাড়াচ্ছে?

Advertisement

শুক্রবার দিনভর বনগাঁর শিমুলতলায় শঙ্করের বাড়িতে তল্লাশি চালায় ইডি। রাত সাড়ে ১২টায় তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু সকাল থেকে শঙ্করের বাড়ির সামনে তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের সে ভাবে জড়ো হতে দেখা যায়নি। এ সব ক্ষেত্রে যা পরিচিত দৃশ্য। বরং তৃণমূল কর্মীদের একটাই প্রশ্ন ছিল, শঙ্করকে কি ইডি গ্রেফতার করবে?

তিন মাস আগে প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক গ্রেফতার হওয়ার পরে যে ভাবে জেলা তৃণমূলের অনেক নেতা তাঁর পক্ষ নিয়ে সওয়াল করেছিলেন, শঙ্করের ক্ষেত্রে তা দেখা গেল না। অথচ, বনগাঁয় তিনি জ্যোতিপ্রিয়ের ‘ডান হাত’ হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। ইডি যখন তাঁর বাড়িতে তল্লাশি চালাচ্ছিল, শুক্রবার দুপুরে সেই সময়ে বনগাঁর নিরঞ্জন সাহা মার্কেটে পুরসভার পক্ষ থেকে মঞ্চ বেঁধে ঘটা করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্মদিন পালন করা হচ্ছিল। অনেকেই সেই অভিযানের কথা জানলেও আগ্রহ দেখাননি। এমনকি, শঙ্কর গ্রেফতার হওয়ার পরে শহরে কোনও প্রতিবাদ-মিছিলও বেরোয়নি। ইডি অফিসাররা যখন শঙ্করকে বাড়ি থেকে বের করে গাড়িতে তুলছিলেন, তখন যারা বাধা দিয়েছিল, তারা শঙ্করের কর্মচারী বা ঘনিষ্ঠ বলেই এলাকাবাসীর দাবি।

Advertisement

শনিবার গোবরডাঙায় একটি কর্মসূচিতে এসে জেলা সভাধিপতি নারায়ণ গোস্বামী শুধু বলেন, ‘‘লোকসভা-বিধানসভা ভোটের আগে কেন ইডি-সিবিআই তৎপর হয়। কেন সারা বছর এই তৎপরতা থাকে না? কাকে, কেন, কী উদ্দেশ্য, আমি সে বিষয়ে ঢুকতে চাই না। কারও হয়ে শংসাপত্রও দিচ্ছি না।’’ তৃণমূলের জেলা কোর কমিটির চেয়ারম্যান তথা পানিহাটির বিধায়ক নির্মল ঘোষ বলেন, ‘‘এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করব না। আইন আইনের পথে চলবে।’’ জেলা কোর কমিটির সদস্য তথা সেচমন্ত্রী পার্থ ভৌমিক, বনগাঁ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি তথা বাগদার বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাসও মন্তব্য এড়িয়েছেন।

২০১০ সাল থেকে ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের আগে পর্যন্ত শঙ্করই ছিলেন বনগাঁ পুরসভায় এবং শহরে দলে শেষকথা। তবে, বছর কয়েক ধরেই শঙ্করের আধিপত্য কমছিল। বনগাঁয় তৃণমূলের অন্দরে কান পাতলেই জ্যোতিপ্রিয়ের সঙ্গে তাঁর অর্থনৈতিক লেনদেনের কথা শোনা যায়।

বিরোধীদের অভিযোগ, দলের নাম করে শঙ্কর নানা ভাবে টাকা তুলতেন। রাজনৈতিক ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে বেআইনি কারবারও শুরু করেছিলেন। বহু সম্পত্তিও করেছিলেন। অনেকের জমি-বাড়ি দখল, জলাজমি বুজিয়ে নির্মাণের অভিযোগও নানা সময়ে উঠেছে শঙ্করের বিরুদ্ধে।

আগে দু’বার হাজতবাসও করতে হয়েছে শঙ্করকে। ২০০৫ সালে পুরীর সি-বিচ থানা এলাকায় খুন হন বনগাঁর তৎকালীন কংগ্রেস কাউন্সিলর টোটন মিত্র। তাঁকে ‘সুপারি কিলার’ লাগিয়ে খুনের অভিযোগে গ্রেফতার হন শঙ্কর। তখন তিনিও কাউন্সিলর। পরে অবশ্য বেকসুর খালাস পান। এরপরে জাল নোট সংক্রান্ত একটি মামলাতেও তাঁকে ধরা হয়েছিল। ২০১৪ সালে শহরে একটি খুনের মামলাতও শঙ্করের নাম জড়ায়। সেই মামলা চলছে। বিজেপির বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি দেবদাস মণ্ডল শনিবার দাবি করেন, ‘‘বনগাঁ জুড়ে শঙ্করের প্রায় দু’শো কোটি টাকা সম্পত্তি রয়েছে। একাধিক বাড়ি দখল করে রেখেছেন। দেশের নানা জায়গায় এবং বিদেশেও অফিস, সম্পত্তি আছে। জ্যোতিপ্রিয় ছাড়াও রাজ্যের এক মন্ত্রীর হাত মাথায় থাকায় শঙ্করের এত প্রতিপত্তি৷’’ শঙ্করের স্ত্রী জ্যোৎস্নার দাবি, এ সব বিরোধীদের কুৎসা।

বিজেপির বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি আরও বলেন, ‘‘চোরেরা চোরের হয়ে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না। তারাও ভয়ে আছে, কখন আবার তাদের ডাক আসে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement