tmc leader arrested

বিপুল অস্ত্র-সহ বাড়ি থেকে ধৃত শাসনের তৃণমূল নেতা

এসটিএফ সূত্রের খবর, শাসনের খামার রামেশ্বরপুরের ডেওপুকুরের বাড়ি থেকে সুকুরকে গ্রেফতার করা হয়। প্রচুর অস্ত্র ও বিস্ফোরক সেখান থেকে পাওয়া যাওয়ায় এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০২২ ০৬:২১
Share:

বমাল: সুকুর আলির বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া অস্ত্র। বুধবার, শাসনে। সুকুর আলি (ইনসেট) ছবি: সুদীপ ঘোষ

বছর ঘুরলেই পঞ্চায়েত ভোট। তার আগে বারাসতের দু’নম্বর ব্লকের অন্তর্গত শাসনের এক দাপুটে তৃণমূল নেতাকে প্রচুর অস্ত্র-সহ গ্রেফতার করল রাজ্য পুলিশের এসটিএফ। বুধবার ভোরে সুকুর আলি নামে ওই তৃণমূল নেতাকে তাঁর বাড়ি থেকেই গ্রেফতার করা হয়। শাসনে তৃণমূলের পর্যবেক্ষক ছিলেন সুকুর। এসটিএফের দাবি, অস্ত্র পাচারের সঙ্গে ধৃতের বহু দিনের যোগাযোগ। বেশ কিছু দিন ধরে তাঁর সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়ে ও তথ্য সংগ্রহ করার পরে বুধবার ভোরে তাঁকে বমাল গ্রেফতার করা হয়েছে বলে দাবি এসটিএফের। এ দিন সুকুরকে বারাসত আদালতে তোলা হলে ১০ দিনের পুলিশি হেফাজত দেন বিচারক।

Advertisement

এসটিএফ সূত্রের খবর, শাসনের খামার রামেশ্বরপুরের ডেওপুকুরের বাড়ি থেকে সুকুরকে গ্রেফতার করা হয়। প্রচুর অস্ত্র ও বিস্ফোরক সেখান থেকে পাওয়া যাওয়ায় এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। গ্রামবাসীদের দাবি, ভোরে ডেওপুকুরের বাড়িতে অভিযান চালাতে পৌঁছয় পুলিশের পাঁচটি গাড়ি। স্থানীয় সূত্রের খবর, গ্রামে সুকুরের দু’টি বাড়ি রয়েছে। তারই একটি একতলা বাড়ি থেকে তাঁকে ধরা হয়।

এসটিএফ জানিয়েছে, সুকুরের বাড়ি থেকে মিলেছে প্রচুর অস্ত্র। যার মধ্যে রয়েছে দু’টি সিঙ্গল শট পিস্তল, একটি সেভেন এমএম পিস্তল, রাইফেল ও ১২ বোরের অত্যাধুনিক পিস্তল, ম্যাগাজ়িন-সহ সেভেন এমএম-এর পাঁচ রাউন্ড গুলি, এইট এমএম-এর ৪৪ রাউন্ড গুলি, .৩০৩-এর ৫ রাউন্ড গুলি ও প্রায় সাড়ে আট কিলোগ্রাম বিস্ফোরক।

Advertisement

সুকুরের গ্রেফতারির পিছনে বিরোধী দলগুলির চক্রান্ত দেখছেন স্থানীয় হাড়োয়া বিধানসভার বিধায়ক হাজি নুরুল ইসলাম। হাজির অতি ঘনিষ্ঠ বলে এলাকায় পরিচিত সুকুর। হাজির দাবি, “সুকুর এতটা খারাপ ছেলে নয় বলেই জানি। মনে হচ্ছে ও বিরোধীদের চক্রান্তের শিকার। সুকুর যদি সত্যিই অস্ত্র রেখে থাকে, তা হলে আইন আইনের পথে চলবে। ঘনিষ্ঠতার ব্যাপার নেই।”

হাজি বিরোধীদের ঘাড়ে বিষয়টি চাপাতে চাইলেও সুকুরের অনুগামীদের একটি অংশের দাবি, তাঁদের নেতা গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের শিকার। সুকুরের গ্রেফতারির প্রতিবাদে বুধবার দুপুরে তাঁর অনুগামীরা ডেওপুকুরে টায়ার জ্বালিয়ে রাস্তা অবরোধ করেন। সুকুরকে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে গ্রেফতার হতে হয়েছে বলেও অভিযোগকরেন তাঁরা।

স্থানীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, দুর্নীতির অভিযোগে শাসনের পূর্বতন তৃণমূল সভাপতি সইদুল ইসলামকে দলীয় নেতৃত্ব সরিয়ে দেন। সেই পদ নিয়ে সুকুর ও ফলতি-বেলিয়াঘাটার এক নেতার মধ্যে রেষারেষি চলছিল। দলের তরফে যে পাঁচ পর্যবেক্ষককে শাসন দেখাশোনার ভার দেওয়া হয়, সুকুর তাঁদের এক জন। তিনি চাইছিলেন সইদুল আলি নামে এক জনকে অঞ্চল সভাপতির পদে বসাতে। সইদুল ইসলামের আগে সইদুল আলিই ছিলেন শাসনের অঞ্চল সভাপতি।

এ দিকে, বিরোধীদের প্রসঙ্গে হাজির অভিযোগ নস্যাৎ করে বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের দাবি, শাসনের রাজনীতিতে অস্ত্রই শেষ কথা। ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী ক্ষমতা ধরে রাখতে পুলিশকে বিরোধী গোষ্ঠীর অস্ত্র ভান্ডারের খোঁজ দিয়েছে। দলের মদত না থাকলে পুলিশের সাহস হবে কি প্রভাবশালী নেতার বাড়িতে হানা দেওয়ার?” সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর মন্তব্য, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় বোমা-গুলি-বন্দুকের স্তূপ! নরেন্দ্রপুরে পাঁচ জন বালক বোমায় জখম। কাঁকিনাড়ায় একটি বাচ্চা মারা গেল। নৈহাটিতে গুলি, তৃণমূল কর্মী নিহত। এ বার শাসনে অস্ত্র উদ্ধার। এ নিয়ে তৃণমূলের কেউ পক্ষে, কেউ বিপক্ষে! আসলে দুষ্কৃতীরা মনে করছে সরকারটা তাদের, তৃণমূল দলটাও তাদের।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement