TMC

ঘর গোছানো নিয়ে সংশয়ে শাসকদলের অনেক নেতা

তৃণমূলেরই একটি সূত্রের দাবি, লোকসভা ভোটে বাগদায় দলের ভরাডুবির অন্যতম কারণ ছিল গোষ্ঠীকোন্দল। এই অল্প সময়ে সেই কোন্দল মেটানো দলীয় নেতৃত্বের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ।

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র  

বাগদা শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০২৪ ০৭:২৫
Share:

—প্রতীকী ছবি।

লোকসভা ভোটে বনগাঁ কেন্দ্র পুনরুদ্ধার করতে পারেনি তৃণমূল। এই কেন্দ্রের অন্তর্গত সাতটি বিধানসভার মধ্যে মতুয়া প্রধান বাগদাতে তৃণমূল বিজেপির চেয়ে পিছিয়ে ২০ হাজার ৬১৪ ভোটে। শাসকদলের পরিস্থিতি পর্যালোচনার মধ্যেই বাগদা বিধানসভার উপনির্বাচনের দিন (১০ জুলাই) ঘোষণা হয়ে গেল সোমবার। ফলে, এত অল্প সময়ের মধ্যে ‘ক্ষত’ কতটা মেরামত করা যাবে, তা নিয়ে স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের অনেকেই সংশয়ে।

Advertisement

তৃণমূলেরই একটি সূত্রের দাবি, লোকসভা ভোটে বাগদায় দলের ভরাডুবির অন্যতম কারণ ছিল গোষ্ঠীকোন্দল। এই অল্প সময়ে সেই কোন্দল মেটানো দলীয় নেতৃত্বের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। তা ছাড়া, মতুয়া উদ্বাস্তু মানুষের মনও দ্রুত জয় করতে হবে। কারণ, বাগদাতেই সবচেয়ে বেশি মতুয়া উদ্বাস্তু মানুষদের বসবাস। সিএএ-র (সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন) কার্যকর হওয়ার কারণে লোকসভা ভোটে তাঁদের বেশিরভাগের সমর্থন বিজেপির দিকেই ঝুঁকে ছিল। ওই আইনে নিঃশর্ত নাগরিকত্ব দেওয়া হচ্ছে না, এ কথা শাসকদলের তরফে প্রচার পর্বে নানা ভাবে বলা হলেও তা অনেক মতুয়া-উদ্বাস্তু মানুষকে বোঝানো যায়নি।

বাগদা ব্লকের ৯টি পঞ্চায়েত এবং বনগাঁ ব্লকের তিনটি পঞ্চায়েত নিয়ে বাগদা বিধানসভা। গত পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূল এখানে ৯টি পঞ্চায়েত দখল করেছিল। বনগাঁ ও বাগদার দু’টি পঞ্চায়েত সমিতি এবং সব ক’টি জেলা পরিষদের আসনে তৃণমূল জয়ী হয়। কিন্তু লোকসভা ভোটে দেখা যাচ্ছে, ১২টি পঞ্চায়েতের মধ্যে মাত্র তিনটিতে (আষাঢ়ু, মালিপোতা এবং বয়রা) তৃণমূল প্রার্থী বিশ্বজিৎ দাস এগিয়ে। ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে বাগদায় বিজেপি জিতেছিল ৯ হাজার ৭৯২ ভোটের ব্যবধানে।

Advertisement

গত বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির টিকিটে জিতে বিধায়ক হয়েছিলেন বিশ্বজিৎ। পরে তৃণমূলে যান। এ বার লোকসভায় প্রার্থী হওয়ার জন্য বিধায়ক পদে ইস্তফা দিয়েছিলেন। সেই কারণেই এখানে উপনির্বাচন হচ্ছে।

বাগদার এক তৃণমূল নেতার কথায়, ‘‘উপ-নির্বাচনের ঘর গোছানোর জন্য আরও একটু সময় দরকার ছিল। এখনও লোকসভা ভোটের হারের কারণ নিয়ে পর্যালোচনা শেষ হয়নি। বাগদায় সাড়ে ২০ হাজার ভোটের ব্যবধান কমানো সহজ নয়।’’ দলের বাগদা পূর্ব ব্লক সভাপতি পরিতোষ সাহা বলেন, ‘‘আমাদের কর্মীরা যথেষ্ট পরিশ্রম করেছিলেন। তারপরেও কেন এই ফল, বুঝতে পারছি না।’’

বিশ্বজিৎ মানছেন, লোকসভা ভোটে কিছু সাংগঠনিক দুর্বলতা ছিল। তাঁর কথায়, ‘‘মতুয়া এবং উদ্বাস্তু মানুষ আমাদের ভোট দিয়েছেন। বাগদা বিধানসভা উপনির্বাচনের আগেই আমরা দুর্বলতা কাটিয়ে উঠব।’’

বিধায়ক থাকাকালীন বিশ্বজিৎ বাগদার জন্য কিছু করেননি, এমন নয়। অনেকেই মানছেন, তাঁর উদ্যোগেই শ্মশানে বৈদ্যুতিক চুল্লি বসানোর কাজ শুরু হয়েছে। বাগদা ব্লক গ্রামীণ হাসপাতালে অস্ত্রোপচার ও সিজ়ার চালু হয়েছে। কোটি কোটি টাকার রাস্তা হয়েছে। দমকল স্টেশনের জন্য জমি চিহ্নিত হয়েছে। ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের অনুমোদন হয়েছে। তবে, এ সবের প্রভাব লোকসভা ভোটে পড়েনি বলেই তৃণমূল নেতৃত্বের মত। ফলে, উপনির্বাচনেও ওই সব কাজ কতটা প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে তাঁদের সংশয় রয়েছে।

দ্রুত উপনির্বাচনের দিন ঘোষণা হওয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই বিজেপি খুশি। দলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি দেবদাস মণ্ডল বলেন, ‘‘আমরা সুবিধা পেতে চলেছি। লোকসভা ভোটে বাগদা কেন্দ্র জয়ের রেশ এখনও মানুষের মধ্যে রয়েছে। বাগদার মানুষ গদ্দারকে (বিশ্বজিৎ) ভোট দেননি। মতুয়া উদ্বাস্তু মানুষেরা প্রমাণ করে দিয়েছেন, তাঁরা বিজেপির সঙ্গে রয়েছেন। উপনির্বাচনে আমাদের জয়ের ব্যবধান আরও বাড়বে।’’

উপনির্বাচনের ভোট গণনা ১৩ জুলাই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement