অশোকনগরের ফলে হতাশা দলে

মুখ্যমন্ত্রীর সভার পরেও ডুবল তৃণমূল

মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে এই প্রথম কোনও ভোটের প্রচারে অশোকনগর-কল্যাণগড় পুরসভায় এসে সভা করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবুও ওই এলাকায় লিড পেল বিজেপি। 

Advertisement

  সীমান্ত মৈত্র

অশোকনগর শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০১৯ ০০:২৩
Share:

মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়।

মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে এই প্রথম কোনও ভোটের প্রচারে অশোকনগর-কল্যাণগড় পুরসভায় এসে সভা করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবুও ওই এলাকায় লিড পেল বিজেপি।
প্রশ্ন উঠেছে, মুখ্যমন্ত্রীর সভায় জনসাধারণের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। তা হলে এই এলাকায় তৃণমূল পিছিয়ে গেল কী ভাবে? তা হলে কী ভোটের ফলাফলে এলাকার গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের প্রভাব পড়ল?
বারাসতের দলীয় প্রার্থী কাকলি ঘোষ দস্তিদারের সমর্থনে এ বার মুখ্যমন্ত্রী অশোকনগরের হরিপুর এলাকায় জনসভা করেন। মুখ্যমন্ত্রীর সভা ঘিরে কর্মী-সমর্থকদের উৎসাহ ছিল চোখে পড়ার মতো। ভিড় দেখে স্পষ্টতই খুশি হন মুখ্যমন্ত্রী। জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব দাবি করেছিলেন, উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় এ বার মুখ্যমন্ত্রী যতগুলি সভা করেছিলেন, ভিড়ের নিরিখে হরিপুরের সভাটি ছিল প্রথম সারিতে।
অশোকনগর এলাকাটি বারাসত লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে পড়ে। ওই এলাকার তৃণমূল প্রার্থী ছিলেন কাকলি ঘোষদস্তিদার। এ বার লক্ষাধিক ভোটে বারাসত কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়েছেন তিনি। কিন্তু ভরাডুবি হয়েছে অশোকনগর-কল্যাণগড় পুর এলাকায়। বড় জয়ের মধ্যেও যা কাঁটা হয়ে বিঁধছে তৃণমূলকে।
পুরসভার ২৩টি আসনের মধ্যে বিজেপি প্রার্থী মৃণালকান্তি দেবনাথ ১৭টি ওয়ার্ড থেকে লিড পেয়েছেন। ৬টি ওয়ার্ড থেকে লিড পেয়েছেন কাকলি। পিছিয়ে থাকা ওয়ার্ডগুলির মধ্যে রয়েছে পুরপ্রধান প্রবোধ সরকার ও ভাইস চেয়ারম্যান সমীর দত্তের ওয়ার্ডটিও। ২০১৫ সালের পুরসভার ভোটে ১৮টি ওয়ার্ডে জয়ী হয়েছিল তৃণমূল। ৫টি পেয়েছিল সিপিএম।
কেন এই ফল?
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, মুখ্যমন্ত্রীকে চোখের সামনে অনেকেই দেখতে গেলেও তাঁরা তৃণমূলকে ভোট দেননি। তা ছাড়া, তৃণমূলের মিটিং-মিছিলে পা মেলালেও অনেকে এ বার তৃণমূলকে ভোট দেননি। স্থানীয় তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের একাংশ জানাচ্ছেন, দলীয় কোন্দলের প্রভাব পড়েছে ভোট বাক্সে। অভিযোগ উঠছে, তৃণমূলের একাংশের ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ, বেআইনি কাজকর্মে মদত দেওয়ার ফলও ভুগতে হয়েছে দলকে। এ কথা তৃণমূল কিছু নেতা মেনেও নিয়েছেন। স্থানীয় এক তৃণমূল নেতার কথায়, ‘‘পুর এলাকায় গোষ্ঠী কোন্দল এবং নেতাদের ঔদ্ধত্য পিছিয়ে পড়ার প্রধান কারণ।’’
বাসিন্দারা জানান, ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে পুর নাগরিক পরিষেবা সঠিক ভাবে পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে গাফিলতি রয়েছে। সরকারি প্রকল্প থেকে কাটমানি নেওয়া, বেআইনি ভাবে জমি দখলের মতো অভিযোগও আছে। এক তৃণমূল নেতা বলেন, ‘‘কাকলিদি অশোকনগরে এত উন্নয়নমূলক কাজ করার পরেও এমন ফলে দলের অনেকেই হতাশ।’’
বিজেপির বারাসত সাংগঠনিক জেলার সহ সভাপতি বিপ্লব হালদার বলেন, ‘‘অশোকনগরে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্প তৃণমূল নিজের প্রকল্প বলে চালানোর চেষ্টা করছে। মানুষ এই মিথ্যা মেনে নেননি। কাউন্সিলরদের উদ্ধত দুর্ব্যবহারের প্রতিবাদ পুরবাসী ভোটের মাধ্যমে জানিয়েছেন।’’
কর্মসংস্থানের প্রশ্নেও মানুষ তৃণমূলের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন বলে অনেকের মত। যদিও অভিযোগ মানতে চাননি অশোকনগরের বিধায়ক তৃণমূলের ধীমান রায়। তিনি বলেন, ‘‘বামেদের ভোটটা পুরোপুরি বিজেপির দিকে চলে যাওয়াতেই পুর এলাকায় আমাদের খারাপ ফল হয়েছে। তবে আমাদের কিছু ভুলভ্রান্তি ছিল। তা সংশোধন করে নেব।’’
পুরপ্রধান বলেন, ‘‘গত বিধানসভা ভোটের নিরিখে পুর এলাকায় আমাদের ভোট কমেনি। বামেদের নব্বই শতাংশ ভোট বিজেপি পেয়েছে। আমার নিজের ওয়ার্ডে বিধানসভা ভোটে সিপিএম পেয়েছিল ৮৩০টি। এ বার বামেরা পেয়েছে ১৮২টি ভোট। তা ছাড়া, জাতপাতের ভিত্তিতে ভোট হয়েছে।’’
কেন নিজেদের ভোট ধরে রাখতে পারল না সিপিএম। অশোকনগরের প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক সত্যসেবী কর বলেন, ‘‘উগ্র তৃণমূল বিরোধিতা এবং ধর্মীয় মেরুকরণের ভিত্তিতে এ বার ভোট হয়েছে বলে এমন ফলাফল হয়েছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement