অকেজো পড়ে রয়েছে নলকূপ। রায়দিঘির গ্রামে। ছবি: দিলীপ নস্কর
এলাকায় ১০টি নলকূপ। গরম পড়তেই জলস্তর নেমে গিয়ে দেহ রেখেছে ৪টি। কোনওটিতে আবার জল পড়লেও তা ঘোলা ও নোনা। জল সংগ্রহ করতে দূরে যেতে হচ্ছে গ্রামবাসীদের। ফলে ভোগান্তিতে পড়েছেন রায়দিঘি, কয়ালেরচক গ্রামের প্রায় তিন হাজার বাসিন্দা।
শুধু এই দুই গ্রাম নয়, অভিযোগ গোটা রায়দিঘি এলাকায় বহু নলকূপ অকেজো হয়ে পড়েছে। পানীয় জল পেতে হিমশিম খেতে হচ্ছে গ্রামবাসীদের।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রায়দিঘির মথুরাপুর ২ ব্লকের ১১টি পঞ্চায়েতের মধ্যে অধিকাংশই নদীনালা ঘেরা এলাকা। ফি বছর গরম পড়লেই জলস্তর নেমে যায়। গ্রামের বেশিরভাগ নলকূপগুলি অকেজো হয়ে পড়ে। কোনওটা পুরোপুরি বিকল হয়ে যায়, কোনওটায় জল পড়লেও নোনা-ঘোলা, জল বেরোয় বলে ব্যবহার করতে পারেন না মানুষ। এ বছরও অবস্থার কোনও পরিবর্তন হয়নি।
নগেন্দ্রপুর পঞ্চায়েতের পুরকাইত পাড়ায় প্রায় ৭টি নলকূপ খারাপ হয়ে গিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা ইয়াসিন গাজি জানান, এলাকার কিছু কিছু জায়গায় পাইপলাইনের জল পৌঁছলেও সব জায়গায় সেই সুবিধে নেই। বহু মানুষের ভরসা নলকূপ। গরমে একাধিক নলকূপ অকেজো হয়ে পড়ছে। বাধ্য হয়ে দূরের পাড়া থেকে জল সংগ্রহ করতে হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘‘গরমে পুকুর, খাল, বিল সবই শুকিয়ে ফুটিফাটা। পানীয় জল থেকে শুরু করে রান্না, জামাকাপড় কাচা, স্নানের জল সবই দূরের পাড়া থেকে আনতে হয়। এই রোদে জলের জন্য লম্বা লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে। জল নেওয়া নিয়ে নিত্য অশান্তি চলে।’’
রাধাকান্তপুর পঞ্চায়েতের কয়ালেরচক গ্রামের বাসিন্দা জয়দেব পাইকের অভিযোগ, ‘‘প্রতি বছর গরম পড়লেই একের পর এক নলকূপ খারাপ হয়ে যায়। ফলে জলকষ্টে ভোগেন গোটা গ্রামের মানুষ। প্রশাসনের তরফে মাঝে মধ্যে ট্যাঙ্কে জল ভরে গাড়িতে করে পাঠানো হলেও তা পর্যাপ্ত নয়। দ্রুত পাইপ লাইনের কাজ শেষ করে বাড়ি বাড়ি জল সরবরাহ শুরু হোক।’’
রায়দিঘি পঞ্চায়েতের প্রধান প্রভাকর ময়রা সমস্যার কথা মানছেন। যদিও তাঁর দাবি, কোনও গ্রামে নলকূপ খারাপ হওয়ার খবর পেলে মিস্ত্রি পাঠিয়ে সারিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। পাশাপাশি, গ্রামে জল সরবরাহের জন্য জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর থেকে ট্যাঙ্কে জল ভরে গাড়িতে পাঠানো হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘‘প্রায় প্রতিদিনই নলকূপ খারাপ হওয়ার খবর পাচ্ছি। এখনও পর্যন্ত ১০০-১৫০টি নলকূপ খারাপ হয়েছে। খবর পেলেই দ্রুত সারানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
মথুরাপুর ২ বিডিও তাপসকুমার দাস বলেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত ৩০০-৩৫০টি নলকূপ অকেজো হওয়ার অভিযোগ এসেছে। দ্রুত সারিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। যেখানে জলের সঙ্কট বেশি, সেই সমস্ত এলাকায় ট্যাঙ্কে জল ভরে গাড়িতে করে পাঠানো হচ্ছে। ইতিমধ্যে ১০টি নতুন নলকূপ বসানো হয়েছে। আরও বেশ কিছু নলকূপ বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে।’’