Siksha Ratna

ছকভাঙা কাজের পুরস্কার পাচ্ছেন তিন শিক্ষক

১৯৮৯ সালে বাসন্তী হাইস্কুলে শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন অমল নায়েক।

Advertisement

বাসন্তী ও রায়দিঘি

নিজস্ব সংবাদদাতা শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৩:১৩
Share:

প্রতীকী চিত্র।

শিক্ষারত্ন সম্মান পেতে চলেছেন বাসন্তী হাইস্কুলের শিক্ষক অমল নায়েক ও নীলকণ্ঠপুর প্রাথমিক স্কুলের বিবেক পাল। রায়দিঘির গিরিবালা আদর্শ প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রসেনজিৎ প্রামাণিকও শিক্ষারত্ন পাচ্ছেন। রাজ্য সরকারের তরফ থেকে ৫ সেপ্টেম্বর শিক্ষক দিবসের দিন এঁদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে।

Advertisement

১৯৮৯ সালে বাসন্তী হাইস্কুলে শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন অমল নায়েক। কিন্তু শুধু শিক্ষকতার মধ্যেই নিজেকে আটকে রাখতে চাননি এই শিক্ষক। অভাবের জন্য যে সমস্ত পড়ুয়ার পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, তাদের স্কুলে ফেরাতে শুরু করেন। স্কুলছুটদের নিয়ে আলাদা স্কুল তৈরি করেন। যেখানে ৫০০ ছেলেমেয়ের পড়াশোনার সুযোগ তৈরি হয়। সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকার অনাথ ছেলে মেয়েদের জন্য অনাথ আশ্রম তৈরি করে তাদের পড়াশোনার ব্যবস্থা করেছেন। এখনও পর্যন্ত সেখানে পড়াশোনা করেছেন অন্তত ৫০০০ ছেলেমেয়ে। বাসন্তী ও গোসাবা ব্লকের বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে শিশুশিক্ষা কেন্দ্র গড়েছেন নিজের উদ্যোগে। সেখানে শিশুদের রক্ষণাবেক্ষণের পাশাপাশি তাদের পুষ্টি ও শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সুন্দরবনের জঙ্গলে, নদী, খাঁড়িতে মাছ কাঁকড়া ধরতে গিয়ে বাঘের হানায় নিহত পরিবারের ছেলেমেয়েদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। ২০১১ সালে নিজের জমি দান করেছেন একটি জুনিয়র স্কুল ও একটি ইন্টিগ্রেটেড মডেল ইংরেজি মাধ্যম স্কুল তৈরির জন্য। সুন্দরবনের বিভিন্ন স্কুলে মোট পনেরোটি টিউবওয়েল নিজের বেতনের টাকায় তৈরি করে দিয়েছেন তিনি। ছাত্রীদের জন্য শৌচাগারও নির্মাণ করে দিয়েছেন এই শিক্ষক। এছাড়াও সারা বছর ধরেই সুন্দরবনের দুঃস্থ মানুষগুলির পাশে থাকেন 'অমল মাস্টার'। লকডাউনের শুরু থেকেই দুঃস্থ পরিবারগুলিকে বারে বারে সাহায্য করেছেন। আমপানে যখন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন সুন্দরবনের মানুষ, তখনও ত্রাণসামগ্রী, ত্রিপল নিয়ে পৌঁছে গিয়েছেন তিনি। ঝড়ে ভেঙে যাওয়া নৌকা সারাইয়ের জন্য অর্থ সাহায্য করেছেন মৎস্যজীবীদের। অমল বলেন, “কর্মজীবনের শুরু থেকেই সমাজের সেবা করব বলে মনস্থির করেছিলাম। এই পুরস্কার আরও বেশি করে সমাজের কাজ করার জন্য আমায় উদ্বুদ্ধ করবে।”

বাসন্তীর আর এক শিক্ষক বিবেক পালও এবার শিক্ষারত্ন পুরস্কার পাচ্ছেন। ১৯৯৭ সালে নীলকণ্ঠপুর প্রাথমিক স্কুলে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। তার আগে নফরগঞ্জ ৪ নম্বর প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষকতা করতেন। কুড়ি বছরের বেশি সময় ধরে শিক্ষকতার পাশাপাশি সমাজ গঠনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনিও। অপুষ্টিতে ভোগা সুন্দরবনের শিশুদের পড়াশোনার পাশাপাশি পুষ্টিকর খাদ্য সরবরাহের চেষ্টাও করছেন তিনি। তাঁর উদ্যোগে আশপাশের আরও ছ'টি স্কুলের পড়ুয়াদের প্রতিদিন মিড ডে মিলের পাশাপাশি দুধ, কলা, ডিম দেওয়া হয়। প্রাথমিক স্তর থেকেই সুন্দরবনের প্রত্যন্ত গ্রামের পড়ুয়ারা যাতে কম্পিউটার শিক্ষা পেতে পারে, তার জন্য নিজের স্কুলের পাশাপাশি আরও বারোটি স্কুলে কম্পিউটার ল্যাবের ব্যবস্থা করেছেন তিনি। লকডাউন ও আমপানে বহু মানুষকে ত্রাণ সাহায্য করেছেন এই শিক্ষক। বিবেক বলেন, “সুন্দরবনের বাচ্চারা যাতে কোনওভাবেই পিছিয়ে না পড়ে সেই চেষ্টা করে চলেছি সাধ্যমতো।”

Advertisement

রায়দিঘির মথুরাপুর ২ ব্লকের গিরিবালা আদর্শ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রসেনজিৎ স্কুলে যোগ দেন ২০০৪ সালে। প্রত্যন্ত এলাকার ওই স্কুলটি ২০০১ সালে সরকারি অনুমোদন পায়। শুরুতে এক বিঘা দানের জমিতে টিনের ছাউনি দেওয়া আট চালায় ২১ জন ছাত্রছাত্রী নিয়ে পড়াশোনা শুরু হয়েছিল। তবে প্রসেনজিৎ যোগ দেওয়ার পর পঠনপাঠনের মান উন্নয়নের পাশাপাশি পরিকাঠামোর উন্নয়ন হয়। টিনের ছাউনি দেওয়া আটচালা ঘরের জায়গায় এখন দোতলা নীল-সাদা ও হলুদ রঙের ৭টি ঘর তৈরি হয়েছে। ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ১৮৪ জন। শিক্ষক রয়েছেন ৬ জন। স্কুলে খেলার মাঠ, ফুলের বাগান, ভেষজের বাগান গড়ে উঠেছে। তৈরি হয়েছে অডিটোরিয়ামও। নিয়ম করে সমস্ত ছাত্রছাত্রীকে বৃক্ষরোপণ উৎসবে অংশ নেওয়া ও জলের অপচয় বন্ধ, প্লাস্টিক বর্জন নিয়ে সচেতন করা হয়। স্কুলের পক্ষ থেকে আমপানে ক্ষতিগ্রস্ত দুঃস্থ মানুষের পাশে থাকা এবং তাঁদের মধ্যে খাদ্য ত্রিপল বিলির ব্যবস্থা হয়েছে। প্রত্যন্ত এলাকার ওই স্কুলটি বন্ধ থাকলেও হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে ভিডিও পাঠিয়ে পড়াশোনা চালু রয়েছে। ২০১৩ সালে ওই নির্মল বিদ্যালয় ও ২০১৫ সালে শিশু মিত্র বিদ্যালয় পুরস্কার পায় এই স্কুল। শিক্ষারত্ন পেয়ে বছর একান্নর প্রসেনজিৎ বলেন, “এই পুরস্কার পেয়ে স্কুল ও ছাত্রছাত্রীদের প্রতি দায়িত্ব বেড়ে গেল। আমি চাই এলাকার সমস্ত স্কুলে এভাবেই উন্নয়ন ঘটুক।”.

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement