ভস্মীভূত: ট্রলার। দিলীপ নস্কর
বিদ্যুৎবাহী তার থেকে অগ্নিসংযোগ হয়ে পুড়ে গেল একটি মাছ ধরার ট্রলার। সোমবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে কাকদ্বীপের মৎস্যবন্দরের কাছে কালনাগিনী নদীতে। পুলিশ ও দমকল সূত্রে জানা গিয়েছে, ‘এফবি তারা মা’ নামে ওই ট্রলারটি সমুদ্রে যাওয়ার জন্য জাল, তেল, খাবার মজুত করে তৈরি ছিল। কিন্ত নিম্নচাপের পূর্বাভাস থাকায় রওনা দেয়নি। বন্দরের পিছনে কালনাগিনী খালে দাঁড়িয়ে ছিল। এ দিন দুপুরেই মৎস্যবন্দর থেকে ট্রলারটির গভীর সমূদ্রে পাড়ি দেওয়ায় কথা ছিল।
সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ খাল থেকে মৎস্যবন্দরের দিয়ে এগিয়ে যাওয়ায় সময়ে ট্রলারের ওয়ারলেস অ্যান্টেনা উপর দিয়ে যাওয়া এগোরো হাজার ভোল্টের বিদ্যুৎবাহী তারে লেগে যায়। এর জেরে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে যায় ট্রলারের ইঞ্জিন। ট্রলারের মধ্যে প্রায় দু’হাজার লিটার ডিজেল, চারটি গ্যাস সিলিন্ডার ও প্লাস্টিকের নানা সরঞ্জাম ছিল। ইঞ্জিন বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হতেই ব্যাটারি ও গ্যাস সিলিন্ডার ফেটে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলতে থাকে।
জনা পনেরো মৎস্যজীবী ও মাঝি ট্রলারে ছিলেন। তাঁরা কোনও রকমে সাঁতরে পাড়ে আসেন। গোপাল দাস নামে মাঝি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে কাকদ্বীপ মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। স্থানীয় মৎস্যজীবীরা ট্রলারে আগুন নেভানোর জন্য প্রথমে বন্দরের পাম্প মেশিনে জল তুলে চেষ্টা চালান। পরে কাকদ্বীপ দমকল কেন্দ্র থেকে ৩টি ইঞ্জিন এসে ঘণ্টাখানেকের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে ট্রলার ও ভিতরে থাকা সরঞ্জাম একেবারেই পুড়ে গিয়েছে।
মৎস্যজীবীরা জানান, পূর্ণিমার কোটালে জোয়ারের জল বাড়ায় ট্রলারটি অনেকটা উপরে উঠে গিয়েছিল। তার জেরেই উপর দিয়ে যাওয়া তারের সঙ্গে লেগে গিয়ে থাকতে পারে। কাকদ্বীপ মৎস্যজীবী কল্যাণ সমিতির সম্পাদক বিজন মাইতি অবশ্য বলেন, “ওই খাল থেকে কোনও ট্রলার বন্দরে আনার সময়ে প্রত্যেকেই উপরে লাগানো ওয়ারলেস খুলে নেয়। আবার বন্দরে ঢুকে তা লাগিয়ে নেওয়া হয়। এই ট্রলারের ক্ষেত্রে ভুলবশত ওয়ারলেস না খোলায় বিপত্তি ঘটেছে।” ট্রলার মালিক কালী দাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে স্থানীয় সূত্রের খবর, ট্রলারটি চলতি মরসুমে ইতিমধ্যে দু’বার সমুদ্রে গিয়েছিল। তেমন মাছ পায়নি। ধার দেনা করে ফের সমুদ্রে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন মালিক। মাছ পেলে ফিরে এসে দেনা মেটানোর পরিকল্পনা ছিল।
দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সহ মৎস্য অধিকর্তা (সামুদ্রিক) জয়ন্ত প্রধান বলেন, “ওই ট্রলারের দুর্ঘটনার খবর পেয়েছি। যে বিদ্যুতের লাইনের তারে লেগে ঘটনা ঘটেছে, ওই তারটি কোনও ভাবে উঁচু করা যায় কিনা, সে ব্যাপারে বিভাগীয় দফতরের সঙ্গে কথা বলব।”