দলুয়াখাকি গ্রামে ছাদপোড়া বাড়ি। —নিজস্ব চিত্র।
হিংসার আগুনে জ্বলে পুড়ে খাক হয়ে গিয়েছে আশ্রয়। জয়নগরের দলুয়াখাকিতে এখন জলের চিন্তা।
জয়নগরের দলুয়াখাকিতে তৃণমূল নেতার মৃত্যুর পর ঘরকে ঘর আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। প্রাণ হাতে পালিয়েছিলেন গ্রামের মানুষজন। বুধবার থেকে আবার তাঁরা ফিরে আসতে শুরু করেছেন। কিন্তু যে ঘরে ফিরেছেন, সেই ঘরকে আর আশ্রয় বলা যায় না। নিরাপত্তার জন্য ভরসাও করা যায় না। ছাদহীন ঘরে ঝড়বৃষ্টিকেই আটকানো যায় না! অন্য বিপদ তো দূর অস্ত্। খাঁ খাঁ দলুইখাকিতে তাই আপাতত দয়াই ভরসা ঠাঁইহারাদের।
গ্রামের অশান্ত পরিবেশের চিন্তা তো আছেই। এর সঙ্গে জুড়েছে দুর্যোগের চিন্তাও। দলুয়াখাকির সুরাইয়া বিবি, মইনুল লস্করেরা শুনেছেন, ঝড়বৃষ্টি আসছে। সাগরে ঘনিয়েছে দুর্যোগ। বৃহস্পতি, শুক্র, শনি, এমনকি, রবিবার পর্যন্ত চলতে পারে তার দাপট ছাদহীন কাঁচা বাড়ির উপর বৃষ্টি নামলে তাঁরা ছোট ছোট ছেলেমেয়ের হাত ধরে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবেন তা ভেবেই উঠতে পারছেন না সুরাইয়া-মইনুলরা। গ্রামের যা পরিস্থিতি তাতে খুব যে কারও উপর ভরসা করা যায়, তা নয়। তার পরও মইনুলদের আশা, ‘‘বৃষ্টি হলে তো প্রতিবেশীরা দেখতেই পাবেন আমাদের কী অবস্থা! ওঁরা কি আর থাকার জায়গা দেবেন না?’’
ভবিষ্যতের চিন্তায় ডুবে সুরাইয়া বিবি এবং মইনুল লস্কর।
বৃহস্পতিবার সকালে কাঁচা মাটির দাওয়ায় কাঁথা পেতে ছেলেকে ঘুম পাড়িয়েছেন সুরাইয়া বিবি। পাশেই রান্নাঘরে উল্টে পড়ে রয়েছে হাঁড়িকুড়ি। উনুনে আগুন চড়েনি। খাবার কোথায় যে খাবেন। ঘরের কিছুই আর অবশিষ্ট নেই। পোড়া-ধরা বাড়ির পাশ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে চোখে পড়ে, প্রতিটি বাড়িরই চৌকাঠে নয়তো দাওয়ায় শূন্য দৃষ্টি মেলে বসে রয়েছেন বাড়ির বাসিন্দারা। কী ভাবে তাদের বাড়ি আবার নতুন করে আপাত নিরাপদ মাথা গোঁজার আশ্রয় হয়ে উঠবে সেটাই চিন্তা। চিন্তা পেটের ভাতের জোগান নিয়েও। নিজের না হোক অন্তত সন্তানদের।
তবে শুক্রবার থেকে এই অবস্থার কিছু সুরাহা হলেও হতে পারে বলে আশা তাঁদের। দলুয়াখাকির বাসিন্দারা জানিয়েছেন, বাচ্চাদের স্কুলে মিড ডে মিলের রান্না শুরু হবে শুক্রবার থেকে। স্কুলের দিদিমণিরা বাড়ি বাড়ি এসে জানিয়ে গিয়েছেন সে কথা। তাঁরা বলেছেন, যে সমস্ত শিশুরা গ্রামে রয়েছে, তাদের মাথা গুনে স্কুলে রান্না হবে। তাতে অন্তত ছোটদের পেট ভরবে। বাকিটা আপাতত ভাগ্যের ভরসা।