হেলমেটহীন: কিশোররা এ ভাবেই বাইক চালায়। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক
হাবড়ার যশুর এলাকায় স্কুটি চালাতে গিয়ে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হল পনেরো বছরের কিশোরীর। এই মৃত্যুর ঘটনার পরেই কিশোর-কিশোরীর রাস্তায় বাইক-স্কুটি চালানো নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, ১৮ বছর বয়সের আগে সড়কে বাইক-স্কুটি চালানো সম্পূর্ণ বেআইনি। এ বিষয়ে অভিভাবকদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, ছেলেমেয়েদের আবদার মেটাতে অভিভাবকেরা ১৮ বছর হওয়ার আগেই তাদের হাতে তুলে দিচ্ছেন বাইক-স্কুটি। এরপরই উপযুক্ত প্রশিক্ষণ না নিয়ে ছেলেমেয়েরা রাস্তায় তা চালিয়ে বেড়াচ্ছে। অভিযোগ, কিশোর-কিশোরীদের বাইক-স্কুটি চালানো বন্ধ করতে রাস্তায় পুলিশের নজরদারির অভাব রয়েছে।
হাবড়া-বনগাঁ এলাকার প্রধান সড়কগুলোতে কচি হাতে কিশোরেরা বাইক চালাতে প্রায়ই দেখা যায়। কিশোরীরা স্কুটি চালাচ্ছে। কিশোররা রীতিমতো সড়কে বাইক রেসে মেতে ওঠে। বাইক চালাতে গিয়ে কিশোরদের মৃত্যুর ঘটনা প্রথম নয়। মাঝেমধ্যেই পথ দুর্ঘটনায় কিশোরদের মৃত্যু বা জখম হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। তারপরও কিশোরদের বাইক চালানো নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি।
গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে গাইঘাটার উত্তর বাগনা এলাকায় যশোর রোডে বাইক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় পনেরো বছরের কিশোর অর্ঘ্য মণ্ডলের। সে বাবার বাইক নিয়ে গৃহশিক্ষকের কাছ থেকে পড়ে ফিরছিল। দূর থেকে আসা গাড়িতে পাশ দিতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যশোর রোডের পাশে ধাকা গাড়িতে ধাক্কা মেরে ছিটকে পড়েছিল সে।
গত বছর অগস্ট মাসে অশোকনগরের ট্যাংরা এলাকায় ইঞ্জিনভ্যানের সঙ্গে বাইকের ধাক্কায় মারা গিয়েছিল সতেরো বছরের কিশোর সাহানুর মণ্ডল।
ওই সব মৃত্যুর ঘটনার পর রাস্তায় পুলিশের তরফে কয়েকদিন ধরপাকড় শুরু করা হয়েছিল। পুলিশ কিশোর কিশোরীদের পাকড়াও করে থানায় নিয়ে আসে। পরিবারের লোকজনকে থানায় ডেকে এনে পুলিশের তরফে তাঁদের বোঝানো হয়। পুলিশের কাছে তাঁরা মুচলেকা দেন, তাঁদের ছেলেমেয়েরা আর বাইক চালাবে না। বা ১৮ বছর না হলে তাঁরা ছেলে মেয়েদের বাইক স্কুটি কিনে দেবেন না। এর ফলে সড়কে কমেছিল কচি হাতে বাইক চালানোর ঘটনা।পরে অবশ্য নজরদারির অভাবে ফের সড়কে ফিরে এসেছে কচি হাতে বাইক চালানোর ঘটনা। চলতি বছরে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার সময় দেখা গিয়েছে, পরীক্ষার্থীরা বাইক চালিয়ে পরীক্ষা দিতে যাচ্ছে। কিশোর যারা বাইক চালায় তাদের মাথায় কোনও হেলমেট থাকে না। হাবড়ার একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘‘স্কুলে অতীতে একাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের মধ্যে কেউকেউ বাইক নিয়ে আসত। তাদের এবং অভিভাবকদের স্পষ্ট করে বলে দেওয়া হয়েছে, বাইক নিয়ে স্কুলে আসা তো যাবেই না। রাস্তাতেও চালানো যাবে না। এরপরও কেউ বাইক চালালে স্কুল কর্তৃপক্ষ কড়া পদক্ষেপ করতে বাধ্য হবেন।’’
পরিবহন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৮ বছরের আগে বাইক চালানো বেআইনি। তাদের কাছে বাইক বিক্রি করা হয় না। তাদের ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়া হয় না। তা হলে কী ভাবে কিশোর কিশেরীরা বাইক চালাচ্ছে। পরিবহন দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘দোকান বা শোরুম থেকে নতুন বাইক কিনতে হলে একটি নির্দিষ্ট ফর্ম পূরণ করতে হয়। সেখানে বয়সের প্রমাণপত্র দিতে হয়। সমস্যাটা হল পরিবারের বয়স্করা তাঁদের নিজেদের নামে বাইক স্কুটি কেনেন। তারপর তা ছেলেমেয়েদের হাতে তুলে দেন।’’ বাসিন্দারা জানালেন, ছেলেমেয়েরা স্কুলের পরীক্ষায় ভাল ফল করলে বা জন্মদিনে অভিভাবকেরা বাইক বা দামি মোবাইল উপহার তুলে দিচ্ছেন। বাইক কিনে না দিলেই চালাতে পারবে না। উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিবহন দফতরের সরকারি সদস্য গোপাল শেঠ অবশ্য বলেন, ‘‘কিশোর কিশোরীদের বাইক স্কুটি চালানো বন্ধ করতে নিয়মিত সচেতনামূলক কর্মসূচী পালন করা হয়। পুলিশও পদক্ষেপ করছে। তবে অভিভাবকেরা সচেতন না হলে কিশোরদের বাইক চালানো বন্ধ করা সম্ভব নয়।’’ পুলিশের বক্তব্য, কিশোর কিশোরীদের বাইক-স্কুটি চালানো বন্ধ করতে নিয়মিত ধরপাকড় করা হয়। অভিভাবকদের বোঝানো হয়। পুলিশ জানিয়েছে, কিশোরদের ধরপাকড় করে জানা গিয়েছে, পারিবারিক ভাবে কারও বাইক না থাকলেও অনেকেই পরিচিত বড়দের কাছ থেকে বাইক চেয়ে চালায়। মাঠে বাইক নিয়ে একচক্কর চালিয়েই তারা মনে করে তারা বাইক চালানো শিখে গিয়েছে।
শিক্ষকেরা মনে করছেন, অল্প বয়সী ছেলেমেয়েদের মাঠে খেলাধুলা প্রতি আকর্ষণ বাড়াতে না পারলে সমস্যা মিটবে না।