ফাইল চিত্র।
দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির টেস্টের ফল প্রকাশিত হতে শুরু করেছে স্কুলগুলিতে। ফলাফল সামনে আসতেই হতাশ বহু স্কুল। তারা জানাচ্ছে, বহু পড়ুয়াই পাশ করতে পারেনি। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা ৮০-তে ও মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা ৯০-তে ৩-৪ করে নম্বর পেয়েছে, এমন ঘটনাও বিরল নয়। বেশিরভাগ প্রশ্নেরই উত্তর লিখতেই পারেনি এই পড়ুয়ারা। এমন অবস্থা সন্দেশখালি, হাসনাবাদ, হিঙ্গলগঞ্জ-সহ বিভিন্ন এলাকার বহু স্কুলে।
অকৃতকার্য পড়ুয়ারা সহজ ও সাধারণ প্রশ্নের উত্তরও ভুল লিখেছে। যেমন, মানুষের কোন দশায় জনন অঙ্গ ও জননগ্রন্থী পরিপূর্ণতা পায়, সেই প্রশ্নের উত্তরে অনেকে লিখেছে, বার্ধক্য দশা। কেউ লিখেছে শৈশব। উত্তর হবে, বয়ঃসন্ধি। ইংরেজি পরীক্ষায় সঠিক বক্সে টিক দেওয়ার প্রশ্নে পড়ুয়ারা অনেকে সব বক্সে টিক দিয়েছে। বা সব বক্লে ক্রস দিয়েছে।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক সমীরকুমার মান্না বলেন, ‘‘অনেক পড়ুয়াদের খাতার অবস্থা খুবই খারাপ। খুব সহজ বিষয়ও ভুল করেছে। যারা স্কুলে আসছে না, তাদের খাতা দেখিয়ে ভুল ধরাতে বাড়ি বাড়ি যাচ্ছি।’’
হিঙ্গলগঞ্জ হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক জানান, মাধ্যমিকের এক পরীক্ষার্থী খাতায় সাবজেক্টের জায়গায় ‘বাংলা’ বানানটুকুও সঠিক ভাবে লিখতে পারেনি। টেস্ট দেওয়ার সময়ে বহু পড়ুয়াই ৩ ঘণ্টা বসে পরীক্ষা দেয়নি। অনেকে যেমন তেমন করে ১-২ পাতা লিখেছে। অনেকে ইংরেজি পরীক্ষার উত্তরপত্রে প্রশ্নগুলিই আবার লিখে দিয়ে এসেছে। আনসিন বা সিন থেকে দু’একটা প্রশ্নের উত্তর লেখার চেষ্টা করেছে। কিন্তু ইংরেজি ব্যাকরণ বা অণুচ্ছেদ রচনা অনেকেই ছেড়ে দিয়েছে।
ইতিহাসে ছোট প্রশ্ন দু’একটা লিখলেও বড় প্রশ্নের উত্তর সবই উল্টোপাল্টা লিখেছে অনেকে। সব মিলিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের ৫০ শতাংশের বেশি পড়ুয়া সব বিষয়ে পাশ করতে পারেনি।
হিঙ্গলগঞ্জের বড় স্কুলগুলির মধ্যে অন্যতম গোবিন্দকাটি শিক্ষানিকেতন হাইস্কুল। এই স্কুলে এ বছর টেস্টে মাধ্যমিকের ৫০ শতাংশ পড়ুয়া সব বিষয়ে পাশ করতে পারেনি। ১০ শতাংশ পড়ুয়া কোনও বিষয়ে পাশ করেনি।
ভারপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষক আশিসকুমার মণ্ডল বলেন, ‘‘আমরা এই ফলাফলে হতাশ। এত খারাপ ফলাফল এর আগে কখনও হয়নি। অকৃতকার্য পড়ুয়াদের অভিভাবকদের ডেকে পাঠিয়েছি। এদের ফাইনাল পরীক্ষায় বসতে দেওয়া হবে কি না ভাবা হচ্ছে।’’
দুলদুলি মঠবাড়ি ডিএন হাইস্কুলে উচ্চ মাধ্যমিকের ২০৮ জনের মধ্যে ১০৫ জন পড়ুয়া সব বিষয়ে পাশ করতে পারেনি। বাকিরা সব বিষয়ে পাশ করলেও বেশিরভাগই লিখিত পরীক্ষায় টেনেটুনে পাশ নম্বর ২৪ তুলেছে।
একই অবস্থা কনকনগর এসডি ইনস্টিটিউশনের। স্কুল সূত্রে খবর, মাধ্যমিকের অর্ধেক পড়ুয়া সব বিষয়ে পাশ করতে পারেনি। বেশ কয়েকজন বাংলাও লিখতে পারছে না। উচ্চ মাধ্যমিকের পড়ুয়াদের অবস্থাও উদ্বেগজনক। প্রধান শিক্ষক পুলক রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘গত দু’বছর স্কুল বন্ধ থাকায় পড়াশোনা থেকে দূর সরে গিয়েছে বহু পড়ুয়া। মোবাইল আসক্তি ও স্কুলে দীর্ঘ অনুপস্থিতির জন্য ৩ ঘণ্টা পরীক্ষা দেওয়ার মানসিকতা নষ্ট হয়েছে অনেকের। এই পড়ুয়াদের উন্নতিরজন্য আমরা বিশেষ ক্লাসের ব্যবস্থা করছি।’’
সন্দেশখালি ২ ব্লকের আতাপুর কেনারাম হাইস্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সৌমেন রায় বলেন, ‘‘মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের ৫০ শতাংশের বেশি পড়ুয়া সব বিষয়ে পাশ করতে পারেনি। বাংলা ও ইংরেজিতেও ৫-৬ করে নম্বর পেয়েছে তারা।’’
হাসনাবাদ ব্লকের তকিপুর রাজলক্ষ্মী হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মাফুজ আহমেদ জানালেন, টেস্টে ৮০ শতাংশের বেশি পড়ুয়া সব বিষয়ে পাশ করতে পারেনি। বাংলা, ইংরেজি, ভৌতবিজ্ঞানে বহু ছাত্রছাত্রী ১০-এর কম নম্বর পেয়েছে। এমন নজিরবিহীন ফল আগে কোনওদিন হয়নি বলে জানালেন তিনি।
হাসনাবাদের চকপাটলি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক বিজয়কৃষ্ণ দাস কথায়, ‘‘এ বছর যারা দশম শ্রেণির টেস্ট দিল তারা আগে কোনওদিন পাশ-ফেলের আওতায় আসেনি। পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাশ-ফেল নেই। করোনা পরিস্থিতিতে অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে পরীক্ষা না দিয়েই ক্লাসে উঠেছে এরা। ফলে এই অবস্থা হয়েছে।’’