গুটিকয়: মাঝে মধ্যে স্কুল খুললেও পড়ুয়া হাতেগোনা। কাঁকিনাড়ার একটি স্কুলে ছবিটি তুলেছেন সজল চট্টোপাধ্যায়
রাজনৈতিক উত্তেজনায় স্বাভাবিক জনজীবন লাটে ওঠার জোগাড়। দোকানে কেনাবেচা কমেছে। স্কুলে আসছে না পড়ুয়ারা। পথেঘাটে বেরোতে ভয় পাচ্ছেন মানুষজন।
গত দু’মাসে হাতে গোনা কয়েক দিন ক্লাস হয়েছে কাঁকিনাড়ার বহু স্কুলে। সিলেবাস কী করে শেষ হবে, তা ভেবে উদ্বিগ্ন কাঁকিনড়ার বহু স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের। অভিভাবকেরাও দুশ্চিন্তায়। এই অবস্থায় স্কুলের শিক্ষকেরা এলাকায় শান্তির জন্য, স্কুলে পড়ুয়াদের আনার জন্য পথে নামার সিদ্ধান্ত নিলেন। শনিবার দুপুরে কাঁকিনাড়ার সব স্কুলের শিক্ষকেরা মিছিল করবেন বলে ঠিক হয়েছে। মিছিলের নাম দেওয়া হয়েছে, ‘পিস ফর এডুকেশন-এডুকেশন ফর পিস।’
গত দু’মাস ধরে ভাটপাড়া-কাঁকিনাড়ার অশান্তি চলছে। ১৯ মে শেষ দফার ভোটে গুলি এবং বোমাবাজিতে অশান্ত হয়েছিল কাঁকিনাড়া। তারপর থেকে গোলমাল ক্রমশ বেড়েছে। দিনেদুপুরে বোমা পড়তে থাকে রাস্তাঘাটে।
বেশ কিছু দিন বন্ধ ছিল বহু স্কুল। গোলমাল কিছুটা কমতে দিন পনেরো আগে স্কুল খোলা হয়। কিন্তু পড়ুয়াদের উপস্থিতি প্রায় ছিল না বললেই চলে। শেষ পর্যন্ত পুলিশ দাঁড়িয়ে থেকে দোকান-বাজার খোলানোর পরে পড়ুয়াদের উপস্থিতির হারও অনেকটা বাড়ে। গত সপ্তাহে পরিস্থিতি প্রায় স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছিল বলে জানান শিক্ষকেরা।
কিন্তু গত সপ্তাহে পুলিশের গুলিতে এক দুষ্কৃতীর মৃত্যুর পরে পরিস্থিতি ফের খারাপ হয়। পর দিন থেকে কাঁকিনাড়ার বিভিন্ন এলাকায় দুষ্কৃতীদের দাপাদাপি শুরু হয়। মুড়িমুড়কির মতো বোমা পড়তে শুরু করে। ভাঙচুর হয় পুরসভা এবং পুর-হাসপাতাল। থানার সামনে বোমাবাজি হয়। তারপরে দু’দিন বন্ধ ছিল স্কুল। সোমবার ফের স্কুল খোলে। কিন্তু পড়ুয়ারা অধিকাংশই গরহাজির বলে জানালেন শিক্ষকেরা।
কাঁকিনাড়া হিমায়াতুল গার্বা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক আখলাক হোসেন জানান, এ বার গরমের ছুটি অনেক আগে পড়েছিল। দীর্ঘ ছুটির কারণে ক্লাস করা যায়নি। তারমধ্যেই ভোট হয়। গরমের ছুটির পরে গোলমালের কারণে আর ক্লাস করা যায়নি। তার ফলে সিলেবাস প্রায় তিন মাস পিছিয়ে গিয়েছে। সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী অগস্টের প্রথম সপ্তাহে দ্বিতীয় মূল্যায়ন পরীক্ষা করতে হবে।
আখলাক বলেন, ‘‘পড়ুয়ারাই আসছে না। তারা না এলে কাদের নিয়ে সিলেবাস শেষ করব! আর সিলেবাস শেষ না হলে পড়ুয়ারা পরীক্ষাই বা দেবে কী করে? এই অবস্থায় আমরা পথে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। শিক্ষা যে জরুরি, সেই বার্তা সকলের কাছে পৌঁছনো দরকার।’’
সোমবার পড়ুয়াদের উপস্থিতির হার দেখার পরে কাঁকিনাড়ার প্রাথমিক এবং উচ্চ বিদ্যালয়ের সব প্রধান শিক্ষকেরা বৈঠকে বসেন। আলোচনায় ঠিক হয়, আগামী শনিবার সব শিক্ষকেরা মিলে পথে নামবেন। তাঁদের হাতের প্ল্যাকার্ডে অশান্তি থামানোর স্লোগান থাকবে। অভিভাবকদের কাছে আর্জি থাকবে, তাঁরা যাতে পড়ুয়াদের স্কুলে পাঠান। পুলিশের কাছে আর্জি থাকবে, পড়ুয়ারা যাতে নিরাপত্তা পায়।
প্রথমে ঠিক হয়েছিল, পড়ুয়াদেরও মিছিলে সামিল করা হবে। কিন্তু এলাকার বর্তমান অবস্থার কথা বিবেচনা করে সেই সিদ্ধান্ত বাতিল হয়েছে। কাঁকিনাড়া উর্দু বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামিমা খাতুন বলেন, ‘‘কোনও গোলমাল যদি হয়, তা হলে তার দায় আমাদের উপরে বর্তাবে। ক্ষতি যদি কিছু হয়, তা আমাদের হোক। কিন্তু এলাকায় শান্তি ফিরুক।’’ ব্যারাকপুর কমিশনারেটের ডিসি (জোন ১) অজয় ঠাকুর বলেন, ‘‘ওই মিছিলে পুলিশি নিরাপত্তা দেওয়া হবে।’’
শামিমা জানালেন, তাঁর স্কুলে এমন পড়ুয়াও আছে, যারা স্কুলে এলে পেট ভরে খেতে পায়। কিন্তু ভয়ের চোটে তারা স্কুলে আসতে ভয় পাচ্ছে। এ দিকে আমাদের স্কুলে মিড-ডে মিলের চাল পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে। তিনি চান এলাকায় শান্তি ফিরুক। স্কুলে ফিরুক পড়ুয়াদের কোলাহল।