মগ্ন মাস্টারমশাই। নিজস্ব চিত্র।
স্কুলে পড়ান। আবার গৃহশিক্ষকতা করেন। দুই ক্ষেত্রেই মাসকাবারি বেতন পান— এ রকম উদাহরণ খুঁজলেই পাওয়া যায়। কিন্তু বসিরহাট হাইস্কুলের পদার্থবিদ্যার শিক্ষক তীর্থ মণ্ডল নিজের অবসর সময়ে ছাত্র-ছাত্রীদের পড়ান বটে, কিন্তু সেটা বিনা বেতনে। কারণ ছাত্র-ছাত্রীদের প্রিয় ‘তীর্থ মাস্টার’ মনে করেন, অর্থ নয়, মানসিক আনন্দ পাওয়াই হল শিক্ষকতার মূল কথা।
বসিরহাটের সংগ্রামপুর মাঝের পাড়ায় বাড়ি তীর্থবাবু বসিরহাট হাইস্কুল থেকে পড়াশোনা করেছেন। পেশাগত জীবনে সেই স্কুলেই এখন পদার্থবিদ্যা পড়ান। স্নাতক হয়েছেন বসিরহাট কলেজ থেকে। স্নাতকোত্তর স্তরের পড়াশোনা প্রেসিডেন্সি কলেজে।
তীর্থবাবু জানান, তাঁর চাকরি জীবনের শুরু ২০০২ সালে হাসনাবাদের রাজাপুর হাইস্কুলে। বসিরহাট হাইস্কুলে যোগ দেন ২০০৮ সালে। ২০০৩ সাল থেকেই বিনা বেতনে গৃহশিক্ষকতা শুরু। তাঁর কাছে এখন সকাল-সন্ধে মিলিয়ে প্রায় ১৩০ জন ছাত্রছাত্রী পড়তে আসে। কারও কাছ থেকেই বেতন নেন না মাস্টারমশাই।
অবসর সময়ে বিনা বেতনে ছাত্র-ছাত্রীদের পড়ানো নিয়ে পরিবারেরও সহযোগিতা পেয়েছেন বলে জানালেন। পড়াশোনার বাইরে গিটার বাজাতে এবং খেলাধুলো করতে ভালবাসেন তীর্থবাবু। সুযোগ পেলেই যোগ দেন বিজ্ঞানভিত্তিক অনুষ্ঠান।
তীর্থবাবুর এই উদ্যোগের প্রশংসা করে বসিরহাট হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক স্বপন রায় বলেন, ‘‘বর্তমান সময়ে ওঁর মতো শিক্ষককে পেয়ে আমরা গর্বিত।’’
ছাত্র জীবনে তীর্থবাবুর পদার্থবিদ্যার শিক্ষক ছিলেন বসিরহাটেরই বাসিন্দা সুভাষ কুণ্ডু। ছাত্রছাত্রীদের সুবিধার জন্য যিনি নিজের বাড়িতে গবেষণাগার তৈরি করেছেন। এই ব্যক্তিটিই ‘তীর্থ মাস্টারে’র বিনা বেতনে ছাত্র পড়ানোর প্রধান অনু্প্রেরণা। তীর্থবাবুর কথায়, ‘‘স্কুলে পড়িয়ে যে বেতন পাই, তাতে আমাদের ভাল ভাবে চলে যায়। তাই সুভাষ স্যারের মতো বিনা বেতনে ছাত্র পড়াতে শুরু করেছিলাম। আস্তে আস্তে বুঝতে পারি, এর মধ্যে যে মানসিক আনন্দ রয়েছে সেটি সবেতন গৃহশিক্ষকতায় নেই।’’
নিজের ছাত্র তাঁকে অনুপ্রেরণা মনে করায় আপ্লুত সুভাষবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘আমার কোনও ছাত্র নিজের ব্যক্তি জীবনে আমার দেখানো অনুসরণ করছে, এটা সত্যিই অন্য রকম অনুভূতি।’’