—প্রতীকী ছবি।
একাধিক ব্লকে বহু স্কুলে শিক্ষকের অভাব দেখা দিয়েছে। যার জেরে এক বিষয়ের শিক্ষককে অন্য বিষয় পড়াতে হচ্ছে। এই অবস্থা বসিরহাট মহকুমার বিভিন্ন ব্লকের একাধিক স্কুলে।
সন্দেশখালি ১ ব্লকের বাউনিয়া প্রভাস রায় হাইস্কুলে পড়ুয়া ৫৬৫ জন। শিক্ষক পদ আছে ১২টি। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে স্কুলে শিক্ষকের সংখ্যা মাত্র ৬ জন। ইতিহাস, জীবন বিজ্ঞান, অঙ্ক, শারীরশিক্ষা, সংস্কৃত ইত্যাদি বিষয়ে কোনও শিক্ষক নেই। ফলে ইতিহাস পড়াচ্ছেন স্কুলের কম্পিউটার প্রশিক্ষক। জীবনবিজ্ঞান, অঙ্ক শেখাচ্ছেন কর্মশিক্ষা ও ভৌতবিজ্ঞানের শিক্ষকেরা। পড়াশোনার মান কমছে বলে মেনে নিয়েছেন স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিব্যেন্দু মাহাতো। তিনি বলেন, “শিক্ষক নেই, তাই যেমন তেমন করে ক্লাস চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।” অভিভাবক ইয়াকুব মোল্লা, ফিরোজ সর্দারেরা বলেন, “পড়ুয়াদের ক্ষতি হচ্ছে। নতুন স্থায়ী শিক্ষক দ্রুত এলে ভাল হয়।”
এই ব্লকের ন্যাজাট নেতাজি বিদ্যামন্দির স্কুলে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত ১০৪৭ জন পড়ুয়া আছে। শিক্ষক আছেন ২৩ জনের মধ্যে মাত্র ১২ জন। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক না থাকায় এই বিষয়টি একাদশ শ্রেণিতে নিতে পারে না পড়ুয়ারা। জীবনবিজ্ঞান, সংস্কৃত, কর্মশিক্ষা, শারীরশিক্ষার কোনও শিক্ষক নেই। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বিষ্ণু দত্ত বলেন, “২০২১ সালে এক সঙ্গে ৫ জন শিক্ষক চলে যান। সেই থেকে বহু পদ শূন্য। পড়াশোনা মান কমছে। যতটা পারছি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছি আংশিক সময়ের শিক্ষক বা পার্শ্বশিক্ষকদের দিয়ে।”
সন্দেশখালি ২ ব্লকের দ্বারিরজাঙ্গাল বনমালী বিদ্যাভবনে ১২টি স্থায়ী শিক্ষক পদ। অথচ, স্থায়ী শিক্ষক মাত্র ২ জন। পঠনপাঠন কার্যত শিকেয় উঠেছে। এই ব্লকের আতাপুর কেনারাম হাইস্কুলে পড়ুয়া সংখ্যা ১৮৬৫ জন। ২০২০ সাল থেকে শিক্ষকের অভাবে বিজ্ঞান শাখা বন্ধ। এই স্কুলে ২৩টি স্থায়ী শিক্ষক পদ শূন্য ২০২২ সাল থেকে। ৮ জন আংশিক সময়ের শিক্ষক রাখা হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সৌমেন রায় বলেন, “পড়াশোনার মান নামছে। শিক্ষকপদ এত দিন ধরে খালি থাকায় সমস্যায় পড়েছি।” সন্দেশখালির স্কুল ইন্সপেক্টর নবকুমার রায় বলেন, “বিষয়টি নজরে আছে। জেলায় জানিয়েছি।”
হাসনাবাদ ব্লকের শুলকুনি যোগেন্দ্র মাইতি সাধারণ বিদ্যামন্দির স্কুলে পড়ুয়া ৫৫০ জন। শিক্ষক পদ শূন্য ৭টি। প্রধান শিক্ষক পূর্ণেন্দু মণ্ডল বলেন, “পড়াশোনা তো দূরের কথা, যে দিন কয়েক জন শিক্ষক ছুটি নেন, সে দিন পড়ুয়াদের শান্ত ভাবে বসিয়ে রাখাই মুশকিল!” হাসনাবাদের স্কুল ইন্সপেক্টর বসন্ত মণ্ডল বলেন, “শিক্ষক নিয়োগ শুরু হলে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।”
একই অবস্থা হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের সামসেরনগর হাইস্কুল, যোগেশগঞ্জ হাইস্কুল, গোবিন্দকাটি শিক্ষানিকেতনে। হিঙ্গলগঞ্জের এআই ললিত মহাজন বলেন, “শিক্ষক-সমস্যা আছে কিছু স্কুলে। নতুন নিয়োগ শুরু হলে যাতে এই সব স্কুলে শিক্ষক আসে, তা দেখা হবে।”