মাঝ রাতে ফোন পেলেন তরুণের বাবা

হাসনাবাদের আমলানি গ্রামের বৃদ্ধ তরুণ মণ্ডল বারবার একটাই কথা বলছেন, ‘‘এই খবর শুনতে হবে জানলে ফোনটা আর ধরতাম না। এটুকু ভেবে শান্তি পেতাম, ছেলেটা অন্তত বেঁচে আছে।’’

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

বসিরহাট ও বনগাঁ শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০১৯ ০১:২৬
Share:

কচুয়ায় এই মন্দিরে জল ঢালতে গিয়েই বৃহস্পতিবার রাতে ঘটে দুর্ঘটনা

অত রাতে ফোন! মন কু ডেকেছিল তখনই। উৎকণ্ঠা নিয়ে ফোন তুলতেই মিলেছিল খবরটা।

Advertisement

হাসনাবাদের আমলানি গ্রামের বৃদ্ধ তরুণ মণ্ডল বারবার একটাই কথা বলছেন, ‘‘এই খবর শুনতে হবে জানলে ফোনটা আর ধরতাম না। এটুকু ভেবে শান্তি পেতাম, ছেলেটা অন্তত বেঁচে আছে।’’

কচুয়া ধামে জল ঢালতে গিয়ে বৃহস্পতিবার রাতে প্রাণ গিয়েছে তপনের বড় ছেলে তরুণ মণ্ডলের (২৫)।

Advertisement

কচুয়া ধামে গিয়ে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছে স্বরূপনগরের বাসিন্দা অপর্ণা সরকারের (৩৫)। জখম হয়েছেন তাঁর স্বামী ও ছেলে। অন্য দিকে, শুক্রবার সকালে লোকনাথের মাথায় জল ঢালার জন্য নদিয়ার চাকদহে স্নান করতে নেমে জলে ডুবে মৃত্যু হয়েছে বনগাঁর এক কিশোরের। তার নাম আকাশ দাস (১৬)।

তপন বলেন, ‘‘বাবা লোকনাথের মাথায় জল ঢালবে বলে অনেক দিন ধরেই পরিকল্পনা করেছিল ছেলে। এমন ঘটনা ঘটবে জানলে যেতে দিতাম না।’’ তিনি আরও জানান, বৃহস্পতিবার রাত ৯টা নাগাদ বন্ধুদের সঙ্গে মোটরবাইকে ভাই বরুণ এবং শ্যালিকার ছেলে রাজকুমার মণ্ডলকে নিয়ে কচুয়াধামে যান তরুণ। মন্দিরে ঢোকার মুখে ভক্তদের ভিড়ের চাপে রাস্তার পাঁচিল ভেঙে পড়তেই বাকিদের সঙ্গে তরুণ পুকুরের উপরের অস্থায়ী দোকানে উঠে পড়েন। ভিড় বাড়তে কিছুক্ষণের মধ্যে একের পর এক দোকান হুড়মুড়িয়ে পুকুরের মধ্যে ভেঙে পড়ে।

বরুণ বলেন, ‘‘ভিড়ের চাপে আমরা কিছুতেই এগোতে পারছিলাম না। দাদা যখন একটু এগিয়ে যায়, সে সময়ে হুড়মুড়িয়ে পাঁচিল ভেঙে পড়ে। অনেক পরে ভিড় কিছুটা কমলে হলে দেখি দাদার নিথর দেহ মাটিতে পড়ে রয়েছে।’’

স্বামীর মৃত্যুর খবর বাড়িতে আসার পর থেকে বারবার জ্ঞান হারাচ্ছেন তরুণের স্ত্রী পিয়া। মাকে কাঁদতে দেখে কান্না জুড়ছে তাঁদের এক বছরের মেয়েও। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এলাকার একটি প্যাথলজিক্যাল ল্যাবে কাজ করতেন তরুণ।

অপর্ণার বাড়ি স্বরূপনগরের দত্তপাড়ায়। স্বামী তারক এবং বারো বছরের ছেলে দীপের সঙ্গে কচুয়া গিয়েছিলেন অপর্ণা। মন্দিরের মূল প্রবেশ পথের বাইরে রাত ১০টা থেকে অন্য ভক্তদের সঙ্গে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন তাঁরাও। রাত ২টো নাগাদ মন্দিরের কাছাকাছি গিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়েন।

তারক বলেন, ‘‘পাঁচিলের কিছুটা অংশ ভেঙে পড়ে অপর্ণার গায়ের উপরে পড়ে। সে রাস্তায় লুটিয়ে পড়ে। ভিড়ের চাপে আমি ও ছেলে রাস্তায় পড়ে গিয়ে পদপিষ্ট হয়ে জখম হই। জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। ভোরে জ্ঞান ফিরলে জানতে পারি, অপর্ণা আর নেই।’’

বনগাঁর ১২-র পল্লিতে লোকনাথ মন্দির রয়েছে। বনগাঁ থেকে প্রচুর মানুষ চাকদহে গিয়ে গঙ্গাস্নান করে জল নিয়ে ওই মন্দিরে বাবা লোকনাথের মাথায় ঢালেন। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, একাদশ শ্রেণির ছাত্র আকাশ এ দিন কয়েক জন বন্ধুর সঙ্গে নৌকোয় মাঝ গঙ্গায় গিয়েছিল। সেখান থেকে সাঁতার কেটে পাড়ের দিকে আসতে গিয়ে তলিয়ে যায়। পরে তার দেহ উদ্ধার হয়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement