অব্যবহৃত পড়ে আছে এই পুল। —নিজস্ব চিত্র।
বছর ছয়েক আগে ক্যানিং স্টেডিয়াম সংলগ্ন এলাকায় তৈরি হয়েছিল আধুনিক সুইমিং পুল। জাতীয় স্তরের পরিকাঠামো যুক্ত এই পুল তৈরি হওয়ায় যথেষ্ট আশায় বুক বেঁধেছিলেন ক্যানিং এলাকার সাঁতারুরা। কিন্তু বর্তমানে এই পুলটি বেহাল। করোনা সংক্রমণের জেরে প্রায় তিন বছর আগে পুল বন্ধ হয়ে যায়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও সুইমিং পুলটিকে সংস্কার করে নতুন করে শুরু করা হয়নি। এ বিষয়ে প্রশাসনিক উদাসীনতার অভিযোগ উঠেছে। পুলটি সংস্কার করতে যাবতীয় উদ্যোগ মহকুমা প্রশাসন নিচ্ছেন না বলেও অভিযোগ তুলেছেন ক্যানিং পশ্চিমের বিধায়ক পরেশরাম দাস।
রাজ্য বা জাতীয় স্তরের সাঁতারে বরাবরই ক্যানিং-তালদি উল্লেখযোগ্য নাম। এক সময়ে জাতীয় স্তরে দশ জন সাঁতারু যোগদান করলে তাঁদের মধ্যে আট জনই ক্যানিং, তালদি এলাকার সাঁতারু থাকতেন। কিন্তু এই এলাকার সাঁতারের সেই গৌরব বর্তমানে ফিকে হয়ে গিয়েছে। একের পর এক সুইমিং পুল বন্ধ হয়ে যাওয়া তার অন্যতম কারণ। তাই এই এলাকার ছেলেমেয়েদের ফের সাঁতারে উৎসাহ যোগাতে ক্যানিং স্টেডিয়াম সংলগ্ন এলাকায় একটি জাতীয় স্তরের সুইমিং পুল তৈরি হয় রাজ্য যুব কল্যাণ ও ক্রীড়া দফতরের উদ্যোগে। মুখ্যমন্ত্রী পুল উদ্বোধন করেছিলেন। এলাকার ছেলেমেয়েদের উৎসাহ ছিল চোখে পড়ার মতো। প্রায় পাঁচশোর বেশি ছেলেমেয়ে সাঁতার প্রশিক্ষণের জন্য আসতে শুরু করে। কিন্তু করোনা সংক্রমণের কারণে প্রায় তিন বছর আগেই বন্ধ হয়ে যায় সুইমিং পুলটি। সেই থেকেই বন্ধ হয়ে রয়েছে।
দীর্ঘ দিন ধরে পুল বন্ধ থাকায় জল নষ্ট হয়েছে। শ্যাওলা জমেছে। জল পরিশোধন করার মেশিনপত্র, পাম্প সবই খারাপ হয়ে গিয়েছে। এ ছাড়াও, পুলের অন্যান্য বহু সামগ্রীও নষ্ট হয়েছে। হতাশ সাঁতারুরা। সাঁতারু সুচারু মণ্ডল, রিয়া মণ্ডল, সমীর নায়েক, সুপ্রিয়া জানারা বলেন, “করোনার জন্য স্কুল-কলেজের পাশাপাশি এই সুইমিং পুল বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু দীর্ঘ দিন হল সবই খুলেছে। অন্যান্য জায়গার পুল ও খুলে গিয়েছে বহু দিন আগে। কিন্তু এই পুল খোলেনি। ফলে এখানে আমাদের অনুশীলন প্রায় বন্ধ। এলাকার পুকুরে অনুশীলন করছি।” তালদির বাসিন্দা, প্রাক্তন জাতীয় ওয়াটার পোলো দলের অধিনায়ক সাঁতারু রবিন বোলদে বলেন, “এই পুল এলাকার ছেলেমেয়েদের কাছে স্বপ্ন ছিল। মুখ্যমন্ত্রী সেই স্বপ্ন পূরণও করেছিলেন। কিন্তু দীর্ঘ দিন ধরে বন্ধ হয়ে থাকায় ছেলেমেয়েরা প্র্যাকটিস করতে পারছে না। দ্রুত এটিকে সাঁতারের উপযোগী করে তোলা হোক।”
কিন্তু কেন পুল ফের চালু করা যাচ্ছে না?
স্থানীয় বিধায়ক বলেন, “সুইমিং পুলটিকে সংস্কার করে চালু করার জন্য বার বার দরবার করেছি। বিভিন্ন স্তরে চিঠি দিয়েছি। মহকুমাশাসককে বলেছি। কিন্তু কোনও উদ্যোগ করা হচ্ছে না। যত দিন যাচ্ছে, ততই নষ্ট হচ্ছে পুল। এই পুল ও স্টেডিয়াম সংস্কারের জন্য প্রশাসন সঠিক উদ্যোগ নিচ্ছে না।”
ক্যানিং মহকুমা প্রশাসন সূত্রের খবর, পুলের জন্য প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা বিদ্যুৎতের বিল বকেয়া রয়েছে। পাশাপাশি, সুইমিং পুলকে সঠিক ভাবে সংস্কার করতে আরও বেশ কয়েক লক্ষ টাকার প্রয়োজন। টাকার অভাবেই সংস্কার বন্ধ। মহকুমাশাসক প্রতীক সিংহ বলেন, “আমরাও চেষ্টা চালাচ্ছি, যাতে দ্রুত সুইমিং পুলকে সংস্কার করে ব্যবহারের উপযোগী করা যায়। অর্থ বরাদ্দ হলেই কাজ হয়ে যাবে।”