ধ্বংস করব পাচারচক্র: পুলিশ সুপার
Swayang Siddha

পাচার রোধে তৈরি স্বয়ংসিদ্ধা

লকডাউন পর্বে নাবালিকা বিবাহ এবং পাচারের সমস্যা বড় আকারে সামনে আসায় বারুইপুর জেলা পুলিশ প্রকল্পটি চালু করতে চায়। সেই লক্ষ্যেই গড়া হয়েছে স্বয়ংসিদ্ধা কমিটি।

Advertisement

রাজীব চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০২০ ০৫:৪৭
Share:

প্রতীকী ছবি।

শুধু লকডাউন পর্বেই ভিন্‌ রাজ্য থেকে উদ্ধার করা হয়েছে পাচার হওয়া পাঁচ যুবতীকে। ওই সময়কালে ঠিক কত জন যুবতী বা নাবালিকা পাচার হয়েছেন, তার সঠ্কি তথ্য পুলিশের কাছে নেই। তবে, পুলিশের যা অজানা নয়, তা হল করোনা-সঙ্কটে পাচার চক্র রীতিমতো সক্রিয় গোটা রাজ্যে।

Advertisement

নাবালিকা বিবাহ ও পাচার রোধে বারুইপুর জেলা পুলিশ তৈরি করেছে ১০ সদস্যের একটি কমিটি। যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘স্বয়ংসিদ্ধা’। স্কুল শিক্ষক, পুলিশ ও প্রশাসনের আধিকারিক, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যদের নিয়ে তৈরি ওই কমিটি স্কুলগুলির সঙ্গে যোগাযোগ রেখে পাচার-বিরোধী প্রচার চালাবে। চিহ্নিত করা হবে পাচারপ্রবণ এলাকাগুলি এবং সেখানকার ছাত্রীদের। ওই ছাত্রীদের পরিবারের সঙ্গে নিয়মিত ভাবে যোগাযোগ রাখা হবে। স্কুলের ছাত্রীদের সঙ্গে কমিটির সদস্যেরা যোগাযোগ রাখবেন। এমনকী, পাচারকারীদের খপ্পর থেকে উদ্ধার হওয়া মহিলারা তাঁদের অভিজ্ঞতার কথাও শোনাবেন স্কুল পড়ুয়াদের। উদ্দেশ্য একটাই। কেউ যেন পাচারকারীদের খপ্পরে না-পড়ে।

এক পুলিশকর্তা বলেন, স্কুল খুললে প্রতিটি স্কুলেই কমিটি তৈরি হবে। স্কুল না-খোলা পর্যন্ত আপাতত ওয়েবিনার-এর মাধ্যমে পাচার বিরোধী প্রচার চলবে। আগামী বৃহস্পতিবার কমিটির ডাকে প্রথম ওয়েবিনার। সেখানে হাজির থাকার কথা পাচারকারীদের থেকে উদ্ধার হওয়া কয়েকজন মহিলার। এই ধরনের কমিটি রাজ্যে কোনও জেলায় এখনও তৈরি হয়নি বলে দাবি বারুইপুর জেলা পুলিশের এক আধিকারিকের।

Advertisement

পাচার, নাবালিকা বিবাহ এবং শিশুদের উপরে নির্যাতন রোধে ২০১৮ সালে ‘স্বয়ংসিদ্ধা’ নামে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছিল দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পুলিশ। চালু হয়েও পরে তা বন্ধ হয়ে যায়। লকডাউন পর্বে নাবালিকা বিবাহ এবং পাচারের সমস্যা বড় আকারে সামনে আসায় বারুইপুর জেলা পুলিশ ফের ওই প্রকল্পটি চালু করতে চায়। সেই লক্ষ্যেই গড়া হয়েছে স্বয়ংসিদ্ধা কমিটি, যার মাথায় রয়েছেন বারুইপুর জেলা পুলিশ সুপার কামনাশিস সেন। কমিটিতে রয়েছেন বারুইপুর মহিলা থানার ওসি কাকলি ঘোষ। পুলিশ সুপার বলেন, ‘‘আমপান এবং লকডাউন-এর পরে পাচারের প্রবণতা বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। পাচার কমাব, এমনটা বলছি না। পরিষ্কার ভাষায় বলছি, পাচাকারীদের নেটওয়ার্ক ধ্বংস করব। ছ’মাস অথবা এক বছর—সময় যাই লাগুক না কেন, পাচার সম্পূর্ণ ভাবে বন্ধ করব। এটাই আমাদের লক্ষ্য।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘স্কুল না-খোলা পর্যন্ত অনলাইনে কাজ চলবে কমিটির। পাচার হওয়ার পরে উদ্ধার করা হয়েছে, এমন মহিলারা তাঁদের অভিজ্ঞতার কথা শোনাবেন।’’ আজ, সোমবার এই বিষয়ে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে একটি বৈঠক হওয়ার কথা। পুলিশ সুপার বলেন, ‘‘কী ভাবে আমরা এগোব, তার রূপরেখা তৈরি হবে।’’

জেলা পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘সঙ্কটকালে উদ্ধারকর্তা সেজে চাকরি বা বিয়ের টোপ দিয়ে পাচারকারীরা গরিব নাবালিকা এবং যুবতীদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। বাড়ি থেকে তাঁদের নিয়ে যেতে চাইছে।’’ তাঁর দাবি, ‘‘লকডাউন পর্বে বারুইপুর পুলিশ জেলায় ৮০ জন নাবালিকার বিয়ে বন্ধ করা হয়েছে। পাচার ও নাবালিকা বিবাহ রোধে আরও সংগঠিত পদক্ষেপ করতেই স্বয়ংসিদ্ধা কমিটি গড়া হয়েছে।’’ ওই পুলিশকর্তা জানিয়েছেন, আগামী বৃহস্পতিবার ওয়েবিনারে বহু স্কুল-কলেজের পড়ুয়ারা যোগ দেবে। পাচার হওয়ার পরে মহিলাদের কী অবস্থার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়, তার বর্ণনা দেওয়া হবে। পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে পাচারকারীরা কী ভাবে গরিব পরিবারগুলির ঘনিষ্ঠ হতে চাইছে, তা জানানো হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement