গোপালনগরের ভাণ্ডারকোলা গ্রামে জনসভায় শুভেন্দু অধিকারী। — নিজস্ব চিত্র।
বিজেপির বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার ডাকে পঞ্চায়েত ভোটে বিজেপি প্রার্থীদের সমর্থনে বৃহস্পতিবার বিকেলে জনসভা হল গোপালনগর থানার ভান্ডারকোলা এলাকায়। উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। এ ছাড়াও ছিলেন সাংগঠনিক জেলার সভাপতি রামপদ দাস, বিধায়ক স্বপন মজুমদার, অসীম সরকার এবং অশোক কীর্তনিয়া।শুভেন্দু বলেন, ‘‘মানুষ যদি এখানে ভোট দিতে পারেন, তা হলে মতুয়াধামকে অপবিত্র করার উচিত শিক্ষা সুদে-আসলে বনগাঁর মানুষ তুলবেন। মতুয়াধামকে আক্রমণ করে গিয়েছে ভাইপো ও পুলিশ। মতুয়াধামকে অপবিত্র করে গিয়েছে।’’কিছু দিন আগে নবজোয়ার কর্মসূচিতে বনগাঁর ঠাকুরনগরে এসেছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। মতুয়াদের পীঠস্থান ঠাকুরবাড়িতেও গিয়েছিলেন তিনি। ওই দিন ঠাকুরবাড়ি এবং স্থানীয় হাসপাতাল চত্বরে তৃণমূল-বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে মারপিট বাধে। এ দিন শুভেন্দুর অভিযোগ প্রসঙ্গে বাগদার বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস বলেন, ‘‘মতুয়াদের অনেক দিন ধরেই নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করছে বিজেপি। ঠাকুরবাড়ির অবমাননা ওরাই করেছে।’’এ দিন শুভেন্দু কটাক্ষ করেছেন বিশ্বজিৎকেও। তাঁর কথায়, ‘‘বিধানসভার ভিতরে পদ্মফুল, বাইরে তোলামূলের জেলা সভাপতি বাগদার বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস। এমন নির্লজ্জ দু’কান কাটা পার্টি ভূভারতে নেই।’’ বিজেপির টিকিটে ভোটে জিতে বিশ্বজিৎ পরে যোগ দিয়েছিলেন তৃণূমলে। শুভেন্দুর অভিযোগ প্রসঙ্গে বিশ্বজিতের প্রতিক্রিয়া, ‘‘উনি এ সব প্রশ্ন ওঁর বাবা শিশির অধিকারীকে গিয়ে করুন। তিনি কোন দলে আছেন, আগে সেটা জানুন।’’ শিশির আবার তৃণমূলের টিকিটে ভোটে জিতে পরে যোগ দিয়েছিলেন বিজেপিতে।শুভেন্দু এ দিন আরও বলেন, ‘‘বিচারব্যবস্থা চাইছে, ভয়মুক্ত অবাধ ও শান্তিপূর্ণ ভোট হোক। বৈধ গণনা হোক। প্রতিটি বুথে আধাসেনা দিয়ে কভার করতে হবে। ২০১৩ সালে মীরা পান্ডে যা যা করেছিলেন, সুপ্রিম কোর্ট থেকে আদায় করে এনেছিলেন।’’এ দিনই জেলার অন্য এক প্রান্তে ব্যারাকপুরের সংসদ অর্জুন সিংহ (এক সময়ে বিজেপি সাংসদ, অধুনা তৃণমূলে) কর্মিসভা করেন আমডাঙার রাহানায়। আমডাঙা তাঁর সাংসদ এলাকার মধ্যে পড়ে। এখানে অর্জুন বলেন, ‘‘বিরোধীরা কেন্দ্রীয় বাহিনীকে রাস্তা চেনাবে কি? আধা সেনা, সেনা, বিমান বাহিনী বা এফবিআই এসে কী করবে পঞ্চায়েত নির্বাচনে? তারা তো রাস্তাই চেনে না!’’সম্প্রতি দলের তরফে আমডাঙার তারাবেড়িয়া ও বোদাই পঞ্চায়েতের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে অর্জুনকে। ২০১৮ সালে পঞ্চায়েত ভোটে আমডাঙার এই দুই পঞ্চায়েত পরাজিত হয়েছিল তৃণমূল। পরে বোর্ড গঠন ঘিরে হিংসায় খুন হন তৃণমূলের ৩ জন এবং সিপিএমের এক জন। মামলা গড়ায় আদালতে। বোর্ড গঠন না হওয়ায় এত দিন পঞ্চায়েত দুটির দায়িত্ব সামলেছেন প্রশাসক।এ দিন কর্মিসভায় উপস্থিত ছিলেন বিধানসভার উপ মুখ্যসচেতক তাপস রায়, অশোকনগরের বিধায়ক নারায়ণ গোস্বামী, আমডাঙার বিধায়ক রফিকার রহমান প্রমুখ।তাপস বলেন, ‘‘আধা সামরিক বাহিনী নয়, আমরা চাই সেনা দিয়েই ভোট করাক। পুরোপুরি সামরিক বাহিনী দিয়ে ভোট করালেও আমাদের কোনও আপত্তি নেই। আমরা কাজ করেছি, মানুষ আমাদেরই আশীর্বাদ করবেন।’’সিপিএমের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য আহমেদ আলি খান পরে বলেন, ‘‘সেনা নিয়ে আপত্তি ও ভয় না থাকলে সুপ্রিম কোর্টে গেল কেন? এত যদি আত্মবিশ্বাস থাকে, তা হলে সেনা নামানো নিয়ে টালবাহানার দরকার কী ছিল?’’ তাঁর কথায়, ‘‘সেনাকে রাস্তা চেনানোর কথা বলে আমডাঙাকে ফের রক্তাক্ত করার চক্রান্ত করছেন অর্জুন সিংহ, তাপস রায়েরা। মানুষ ওঁদের রুখে দেবেন।’’