শিয়রে বুলবুল

সামান্য সম্বলটুকু নিয়েই তাই শুক্রবার অনেকে হাজির হয়েছেন আশ্রয়কেন্দ্রে। ঝড় থেকে বাসিন্দাদের নিরাপদে রাখতে সবরকম প্রস্তুতি নিয়েছে দুই ২৪ পরগনার প্রশাসন।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০১৯ ০১:৪৩
Share:

সতর্কতা:ঝড়ের আশঙ্কায় জলে নামেনি নৌকো। ছবি: সুমন সাহা

তামাম সুন্দরবন এখন রেডিওর সামনে বসে। ঝড় কখন আসবে, তা জানার জন্য স্মার্টফোন ছেড়ে ফের রোডিয়োর নিয়ে ঘুরছেন বিভিন্ন দ্বীপের বাসিন্দারা। বুলবুলের খবর জানতে বাংলাদেশের খবরেও কান পাতছেন দ্বীপবাসী।

Advertisement

আবহাওয়া দফতরের আশঙ্কা, শনিবার মাঝরাতে বুলবুল আঘাত হানতে পারে সুন্দরবনের উপকূলে। সেখান থেকে বাংলাদেশের দিকে সরে যাওয়ার কথা। আয়লার অভিজ্ঞতা এখনও সুন্দরবনের মানুষ ভোলেননি। সামান্য সম্বলটুকু নিয়েই তাই শুক্রবার অনেকে হাজির হয়েছেন আশ্রয়কেন্দ্রে। ঝড় থেকে বাসিন্দাদের নিরাপদে রাখতে সবরকম প্রস্তুতি নিয়েছে দুই ২৪ পরগনার প্রশাসন।

উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাটের হাসনাবাদ, হিঙ্গলগঞ্জ, মিনাখাঁ, হাড়োয়া, হেমনগর এবং সন্দেশখালি মূলত উপকূলবর্তী এলাকা। শুক্রবার সকাল থেকেই বসিরহাট মহকুমায় শুরু হয় ঝিরঝিরে বৃষ্টি। এমনিতেই ঝড়ের নামে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল সুন্দরবনে। বৃষ্টির সঙ্গে ঝড়ো হাওয়ায় মানুষজন আতঙ্কে ছোটাছুটি শুরু করে দেন। বাড়ির জিনিসপত্র গুছিয়ে অনেকেই কাছাকাছি আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যান।

Advertisement

বুলবুলের সতর্কবার্তা জারির পর উপকূলবর্তী এলাকাগুলি থেকে সাধারণ মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নেয়ে যাওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। শুক্রবার রাত পর্যন্ত দুই জেলা মিলিয়ে সরানো হয়েছে ২৩,৭৯০ জনকে।
উত্তর ২৪ পরগনা: ৭,৬০০
দক্ষিণ ২৪ পরগনা: ১৬,১৯০

সামসেরনগর যোগেশগঞ্জের বাসিন্দা তপন প্রধান, কাকলি হাউলিরা বলেন, ‘‘আয়লা ঝড়ে সর্বস্ব খুইয়েছিলাম। আয়লার সময়েও এমনই ঝড়-বৃষ্টি শুরু হয়েছিল। আবার তেমন দিন আসছে?’’ বৃহস্পতিবার বিকেল থেকেই মাইকে করে প্রচার শুরু হয়েছিল। শুক্রবার প্রত্যন্ত সব এলাকায় ফের শুরু হয় প্রচার। বেশিরভাগ বাসিন্দাকে কাছাকাছি সাইক্লোন বা ফ্লাড সেন্টারে আশ্রয় নিয়ে বলা হয়। ঝড়ের সময়ে কী করতে হবে, সে বিষয়ে গ্রামে গ্রামে প্রচার চালানো হয় দিনভর। নদীর পাশের বাসিন্দাদের নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজে প্রশাসনকে সাহায্য করে স্থানীয় পঞ্চায়েতগুলি।

ঝড় পরবর্তী পরিস্থিতি সামলাতে বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। নদী এবং খাঁড়ি এলাকায় মাছ ধরতে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। ধামাখালি-সহ বিভিন্ন ফেরিঘাটে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ করা হয়েছে।

দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন জায়গায় কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ, সেচ, বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের আধিকারিকদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। ফ্লাড সেন্টারগুলিকে তৈরি রাখা হয়েছে। নদী তীরবর্তী মানুষদের সরিয়ে নিয়ে আসার জন্য পুলিশকে কাজে লাগানো হয়েছে। শুকনো খাবার, জ্বালানি, তেল, ত্রিপল যথেষ্ট পরিমাণে মজুত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।

দক্ষিণ ২৪ পরগনা
• জেলাশাসক:
০৩৩ ২৪৭৯ ১৪৬৯,
০৩৩ ২৪৫০ ১৩৫১
• জেলা বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর: ০৩৩২৪৩৯৯২৪৭
• এসডিও, কাকদ্বীপ: ৯৮৩১০৫৬৫৪২
উত্তর ২৪ পরগনা
• বসিরহাট মহকুমা কন্ট্রোল রুম: ০৩২১৭-২৬৭২৯৭
• সন্দেশখালি কন্ট্রোলরুম ৯৭৩৩৮১৫১৪৮
• মিনাখাঁ কন্ট্রোল রুম ৮৯১৮১০২২৮৬
• হাসনাবাদ কন্ট্রোলরুম ৮৩৩৬৯৫৯১৭৯

দুর্যোগের সময়ে সুন্দরবন এলাকার নদীতে ফেরি চলাচল বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আগামূ মঙ্গলবার পর্যন্ত পর্যটকদের সুন্দরবনের নদীতে ভ্রমণের উপরেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। গোসাবার বিডিও সৌরভ মিত্র বলেন, “আমাদের তরফ থেকে সমস্ত রকম সতর্ক বার্তা এলাকার সাধারণ মানুষকে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি কন্ট্রোল রুম খুলে সমগ্র পরিস্থিতির উপরে নজর রাখা হচ্ছে”। ঝড় পরবর্তী পরিস্থিতিতে যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরি করার জন্য উত্তর ২৪ পরগনার হ্যাম রেডিয়ো ক্লাবের সদস্যদের সাগরদ্বীপে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সাগরদ্বীপ-সহ বিভিন্ন জায়গায় অস্থায়ী রেডিয়ো স্টেশন তৈরি করা হয়েছে।

শুক্রবার বিকেলে দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক পি উলগানাথন বুলবুল মোকাবিলায় জরুরি বৈঠক ডাকেন। বৈঠকে জেলাশাসক অন্যান্য আধিকারিকদের ঝড় মোকাবিলায় সব রকম পরিস্থিতির জন্য তৈরি থাকতে নির্দেশ দেন। গভীর সমুদ্র থেকে মৎস্যজীবীদের ফিরিয়ে আনা হয়েছে বন্দরে।

ক্যানিং, গোসাবা, কাকদ্বীপ, মৌসুনি দ্বীপ, সাগরদ্বীপের ফ্লাড এবং সাইক্লোন সেন্টারগুলিতে জরুরি ভিত্তিতে আলো এবং জলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। শুকনো খাবার ত্রিপলের পাশাপাশি শিশুখাদ্য এবং জরুরি ওষুধও মজুত রাখা হয়েছে। ঝড় কতটা মারাত্মক হতে পারে, তা নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় নানা গুজবও ছড়াচ্ছে। প্রশাসন অবশ্য প্রচার করছে, যাতে কেউ সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ানো তথ্যে ভরসা না করেন।

আতঙ্কের মধ্যেও অন্য ছবি দেখা গিয়েছে সাগরদ্বীপ সংলগ্ন ঘোড়ামারা দ্বীপে। প্রশাসন এবং পঞ্চায়েত থেকে এ দিন ঘোড়ামারার বাসিন্দাদের সাগরদ্বীপে সরিয়ে আনার জন্য তিনটি ভেসেলের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু সেখানকার বাসিন্দারা কেউ আসতে চাননি। তাঁরা একটি প্রাথমিক স্কুল এবং একটি হাইস্কুলে আশ্রয় নিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত শুক্রবার রাতে প্রশাসন সেখানেই শুকনো খাবার এবং পানীয় জলের ব্যবস্থা করে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement