বিডিও বুদ্ধদেব দাসের সঙ্গে সালিমুদ্দিন। ছবি: সামসুল হুদা।
বাবা রিকশাচালক। মা গৃহবধূ। কোনও রকমে সংসার চলে। একবেলা ভাত জুটলেও রাতের বেলা জোটে ফ্যান। এক চিলতে মাটির বাড়িতেই স্বপ্ন দেখা শুরু হয় মাদ্রাসা বোর্ডের মাধ্যমিকে অষ্টম স্থানাধিকার সালিমুদ্দিন হাজরার।
ক্যানিঙের ধলিরবাটির মালিরধার গ্রামের বাসিন্দা সালিমুদ্দিনের প্রাপ্ত নম্বর ৭৭৯। নবম শ্রেণিতে হুগলির সীতাপুর এন্ডাওমেন্ট সিনিয়র মাদ্রাসার আলিম বিভাগে ভর্তি হয় সে। মাদ্রাসার আবাসিকে থেকে পড়াশোনা তার। শুক্রবার ফল প্রকাশের পরেই ক্যানিং ১ ব্লকের বিডিওর দফতরে সালিমুদ্দিনের নামে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একটি শুভেচ্ছাবার্তা পাঠান। রাতেই বিডিও বুদ্ধদেব দাস তার বাড়িতে মুখ্যমন্ত্রীর পাঠানো শংসাপত্র নিয়ে যান। সঙ্গে ছিল ফুল ও মিষ্টি। বাবা আমির আলি হাজরা ও মা সেরিনা হাজরা জানালেন, অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সালিমুদ্দিন ক্যানিঙের ডেভিড সেশুন হাইস্কুলে পড়ত। কিন্তু টাকার অভাবে তাকে ওই স্কুল ছাড়তে হয়েছিল। কোথাও হাতের কাজ শেখাবেন বলে ঠিক করেছিলেন বাবা। কিন্তু ছোট কাকা সারাফত হাজরা ওই মাদ্রাসায় কাজ করতেন। এই কথা জানার পরে তিনিই সালিমুদ্দিনকে মাদ্রাসায় ভর্তি করে দেন। গ্রামের লাজুক ছেলেটি একটু ঘরকুনো প্রকৃতির। পড়ার ফাঁকে শরৎচন্দ্র, রবীন্দ্রনাথ, বঙ্কিমচন্দ্রের লেখা পড়তে ভালবাসে। বন্ধুদের সঙ্গে ক্রিকেটও খেলে।
বড় হয়ে শিক্ষক হতে চায় সালিমুদ্দিন। তার কথায়, ‘‘গ্রামের দুঃস্থ ছেলেমেয়েদের পড়ানোই আমার একমাত্র লক্ষ্য। তাই শিক্ষকতাকে বেছে নিতে চাই।’’ আমির বলেন, ‘‘ছোট থেকেই পড়াশোনায় ভাল। কিন্তু মাঝে খরচ চালাতে না পারায় পড়া বন্ধ করে দিয়েছিলাম। এখন কী ভাবে যে ওর স্বপ্ন পূরণ করব জানি না।’