ফাইল চিত্র।
একের পর এক এসএসকে স্কুল থেকে অবসর নিচ্ছেন শিক্ষকেরা। কিন্তু নতুন নিয়োগ হচ্ছে না। ফলে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা জুড়ে বহু এসএসকে শিক্ষকের অভাবে ধুঁকছে।
জেলায় ৯১৮টি এসএসকে আছে। এর মধ্যে ২১০টি এসএসকে চলছে একজন শিক্ষকের উপরে নির্ভর করে। ১৪টি এসএসকে চলছে ডেপুটেশনের শিক্ষকদের দিয়ে। অথচ, জেলা জুড়ে এসএসকে স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা বর্তমানে ৫২,১০১ জন।
সন্দেশখালি ১ ব্লকে ৪৮টি এসএসকে আছে। এর মধ্যে ৩টি স্কুলে একজন করে শিক্ষক আছেন। শেয়ারা রাধানগর পঞ্চায়েতের বড় শেয়ারা এসএসকে-তে আগে শিক্ষক ছিলেন ৩ জন। পড়ুয়া ছিল প্রায় ৬০ জন। ২০২০ সাল থেকে শিক্ষকেরা অবসর নেওয়া শুরু করেন। ২০২২ সালে শিক্ষক শূন্য হয়ে যায় স্কুলটি। অগস্ট মাসে পাশের একটি এসএসকে থেকে একজন শিক্ষিকাকে এখানে নিয়োগ করা হয়েছে। তবে বর্তমানে পড়ুয়া কমে ৩৪ জন হয়ে গিয়েছে।
শিক্ষিকা শাহিদা বিবি বলেন, ‘‘আমাকে প্রায়ই বিভিন্ন কাজে ব্লক অফিসে ছুটতে হয়। সেই সব দিন মিড ডে মিল খাইয়ে দেড়টার মধ্যে স্কুল ছুটি দিতে হয়। একা অফিস ও স্কুল সামলানো কার্যত অসম্ভব। যেদিন স্কুলে থাকি, সেদিনও একা ৫টা ক্লাসের পড়ুয়াদের নিয়ে ভাল করে পড়াতে পারি না।’’
একই সমস্যা বাউনিয়া ২২ নম্বর বুথ এসএসকে-র। এখানেও আগে ৩ জন শিক্ষক ছিলেন। এখন রয়েছেন একজন। পড়ুয়ার সংখ্যা ৪৬। শিক্ষিকা জানান, একা থাকায় বাচ্চাদের পড়াশোনা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকে ৪৭টি এসএসকে আছে। এর মধ্যে প্রায় ২২টি স্কুল চলছে একজন শিক্ষকের উপরে নির্ভর করে। তাই এসএসকেগুলিতে পড়ুয়ার সংখ্যা ক্রমশ কমছে। যোগেশগঞ্জ টিপলির ঘেরি এসএসকে-তে ৩ জন শিক্ষক ছিলেন। তখন ৮০ জন পড়ুয়া ছিল। এখন সকলে অবসর নিয়েছেন। অন্য স্কুল থেকে একজন শিক্ষক এসে স্কুল চালাচ্ছেন। পড়ুয়ার সংখ্যা কমে ৪১ জন হয়ে গিয়েছে।
সাহেবখালি মিস্ত্রিপাড়া এসএসকেতে আগে ৬০ জন পড়ুয়া ছিল। শিক্ষকের অভাবে এখন তা ১০ জনে নেমে এসেছে। ৩ জন শিক্ষক অবসর নেওয়ায় ২০২১ এর জুলাই থেকে স্কুলে কোনও শিক্ষক ছিলেন না। পার্শ্ববর্তী একটি এসএসকে থেকে একজন শিক্ষিকাকে পাঠিয়ে স্কুল চালু রাখা হয়েছে। তবে এ ভাবে পড়াশোনা ভাল হচ্ছে না, তা মানছেন শিক্ষিকাও।
শিক্ষকেরা জানান, এসএসকে স্কুলগুলিতে শিক্ষক নিয়োগ হয় ২০০০-০১ সাল নাগাদ। সে সময়ে মূলত শিক্ষক হিসেবে ৪০ বছর বা তার চেয়ে বেশি বয়সিদের নিয়োগ করা হয়েছিল। অবসর নির্ধারণ করা হয় ৬৫ বছরে। ফলে ২০১৭-১৮ থেকে শিক্ষকদের অবসরের সংখ্যা বাড়তে থাকে। শিক্ষকদের দাবি, নতুন নিয়োগ না হলে ২০২৫ সালের মধ্যে প্রায় সব শিক্ষক অবসর নিয়ে নেবেন। এখন যাঁরা অবসর নিচ্ছেন তাঁদের জায়গায় নতুন নিয়োগ হচ্ছে না।
এ প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘এসএসকে স্কুলে নতুন নিয়োগের বিষয়ে আমাদের কাছে কোনও খবর নেই। তবে যে সব স্কুল শিক্ষকশূন্য হয়ে যাচ্ছে, সেখানে শিক্ষকের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’’