শিবিরে প্রতিবন্ধী তরুণ-তরুণীরা। নিজস্ব চিত্র।
ওঁরা কেউ হাঁটতে পারেন না। কেউ আবার হাত দিয়ে কোনও কাজ করতে পারেন না। অনেকে কথা বলতে পারেন না। কিন্তু ইশারায় বুঝিয়ে দিলেন রক্তদান করে অন্য একটি জীবন বাঁচাতে ওঁরা আগ্রহী।
সম্প্রতি ক্যানিংয়ের বন্ধুমহল প্রাঙ্গণে রক্তদান-সহ নানা অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস পালন করলেন রাখি, বাপি, প্রভাত, খোকনরা।
এ দিন মঠেরদিঘি পল্লি সেবা সদনের উদ্যোগে পালিত হয় রক্তদান শিবির। এই শিবিরে ১৭ জন বিশেষ ভাবে সক্ষম তরুণ তরুণীরা রক্ত দেন। সাধারণ মানুষকে রক্তদানে উৎসাহ দিতেই তাঁদের এই উদ্যোগ বলে জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা।
লকডাউনের শুরু থেকেই রক্ত সঙ্কটে ভুগছে ব্লাড ব্যাঙ্কগুলি। রক্তের অভাবে সমস্যায় পড়ছেন থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত রোগী ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা। একের পর এক ব্লাড ব্যাঙ্কগুলিতে ঘুরেও মিলছিল না রক্ত। এই পরিস্থিতিতে নানা সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে রক্তদান শিবির করার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে ঠিকই। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে আগের তুলনায় শিবির অনেক কম হচ্ছে। পাশাপাশি শিবিরে আগ্রহী রক্তদাতার সংখ্যাও আগের তুলনায় অনেক কমে গিয়েছে। ফলে দিনের পর দিন রক্ত সঙ্কট বেড়েই চলেছে। প্রতিবন্ধী মানুষও অনেক সময় চিকিৎসা করাতে গিয়ে প্রয়োজনীয় রক্ত পাচ্ছেন না। সে কারণে সাধারণ মানুষকে রক্তদানে উৎসাহ দিতে এ বার তাঁরাই উদ্যোগী হয়েছেন। এ দিন প্রায় ৭০ জন রক্ত দেন এই শিবিরে। তাঁর মধ্যে অনেকেই বিশেষ ভাবে সক্ষম। নিজেদের প্রতিবন্ধকতাকে দূরে সরিয়ে রক্তদানের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে রক্ত দিলেন খোকন, রাখিরা। এই অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তা খোকন মণ্ডল নিজেও একজন বিশেষ ভাবে সক্ষম ব্যক্তি। তিনি নিজে সবার আগে রক্ত দিয়ে অন্যান্যদের উৎসাহিত করেন। খোকন বলেন, ‘‘বর্তমানে করোনা আবহে রক্তের খুবই সঙ্কট। আর সেই কারণে রক্তদানে যাতে সমস্ত স্তরের মানুষজন এগিয়ে আসেন তাই আমরা এই উদ্যোগ নিয়েছি। আমরা প্রতিবন্ধী হয়েও যদি রক্ত দিতে পারি, তা হলে সাধারণ সুস্থ মানুষজন কেন পারবেন না। নিয়মিত রক্তদানের মাধ্যমে সকলকেই একে অপরের পাশে দাঁড়াতে হবে।” খোকনের এই উদ্যোগে খুশি এ দিনের শিবিরের দায়িত্বে থাকা চিকিৎসকরা। তাঁরা বলেন, “নিজেদের প্রতিবন্ধকতাকে দূরে সরিয়ে যে ভাবে খোকন ও তাঁর সঙ্গীরা এগিয়ে এসে সাধারণ মানুষকে রক্তদানে উৎসাহিত করলেন সেটা সত্যি সত্যিই দৃষ্টান্ত হওয়া উচিত।”