জলপথে ফ্রেজ়ারগঞ্জ উপকূলরক্ষী বাহিনী ও সুন্দরবন পুলিশ জেলার তরফে চলছে মৎস্যজীবীদের তথ্য যাচাই। ছবি: সমরেশ মণ্ডল।
বাংলাদেশের অস্থির পরিস্থিতির জেরে চোরাপথে অনুপ্রবেশ বাড়তে পারতে বলে আশঙ্কা দেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের। তাই দুই ২৪ পরগনার স্থল ও জল-সীমান্তে বাড়তি নজরদারি শুরু হল। মঙ্গলবার পেট্রাপোল সীমান্তের নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখে গেলেন বিএসএফের ডিজি দলজিৎ সিংহ চৌধুরী।
উত্তর ২৪ পরগনার সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ (স্থানীয় ভাবে ‘ধুর’ পাচার বলা হয়) দীর্ঘদিনের সমস্যা। স্বাভাবিক সময়ে ‘ধুর সিন্ডিকেটে’র মাধ্যমে রমরমিয়ে অনুপ্রবেশের বহু অভিযোগ ওঠে। বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতির জন্য এই জেলার সীমান্ত এলাকা জুড়ে বিএসএফ নজরদারি আরও বাড়িয়েছে। সূত্রের খবর, সীমান্ত এলাকায় অতিরিক্ত জওয়ান মোতায়েন করা হচ্ছে। আউট পোস্টের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। টহলও কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
এ দিন বিএসএফের ডিজি পেট্রাপোলে তাঁদের ক্যাম্পে আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠক করেন। জ়িরো পয়েন্ট ঘুরে দেখেন। বাগদার রনঘাট সীমান্তেও যান। যদিও সফর নিয়ে ডিজি কোনও মন্তব্য করতে চাননি। সূত্রের খবর, বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্ত নিরাপত্তা নিয়েই তিনি আধিকারিকদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন।
বনগাঁ মহকুমায় ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকা প্রায় ১২৬ কিলোমিটার। তার মধ্যে ৩৪ কিলোমিটার পথে কোনও কাঁটাতার নেই। স্বাভাবিক সময়ে মূলত কাঁটাতারহীন এলাকা দিয়ে দু’দেশের মধ্যে চোরাপথে মানুষ দালাল ধরে যাতায়াত করেন বলে অভিযোগ।
পুলিশের একটি সূত্র জানাচ্ছে, সীমান্তে অনুপ্রবেশ রোখা মূলত বিএসএফের দায়িত্ব। অতীতে এই জেলার বনগাঁ ও বসিরহাট সীমান্ত দিয়ে জঙ্গি অনুপ্রবেশেরও ঘটনা ঘটেছিল। ফলে, সীমান্তের নিরাপত্তা নিয়ে বিএসএফ সতর্কতা বাড়িয়েছে। যদিও মঙ্গলবার পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে এ দেশে অনুপ্রবেশে কোনও খবর নেই। তবে, বাগদা থানার পুলিশ এ দিন সকালে পাঁচ বাংলাদেশিকে গ্রেফতার করেছে রনঘাট সীমান্ত থেকে। তাঁরা আগেই চোরাপথে এ দেশে ঢুকেছিলেন। এ দিন তাঁরা দালাল ধরে চোরাপথে বাংলাদেশে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।
সড়ক সীমান্তের পাশাপাশি জল-সীমান্তেও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। উত্তর ২৪ পরগনা জেলার সীমান্ত এলাকার ১৬৫ কিলোমিটারই জলপথ। উপকূলরক্ষী বাহিনী ও পুলিশ যৌথ ভাবে টহল শুরু করেছে।
বসিরহাটের টাকি সোদপুর বিএসএফ ক্যাম্পের এক আধিকারিক জানান, কেউ চোরাপথে বাংলাদেশ থেকে ঢোকার চেষ্টা করলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ আছে। জলপথেও কড়া নজরদারি চলছে রাত-দিন। বসিরহাটের পুলিশ সুপার হোসেন মেহেদি রহমান বলেন, ‘‘আমরা বিএসএফের সঙ্গে যৌথ ভাবে বৈঠক করেছি। যৌথ টহল দেওয়া হচ্ছে সীমান্তে। বিভিন্ন জায়গায় নাকা তল্লাশি চলছে।’’
মঙ্গলবার থেকে সুন্দরবনের নদী ও সমুদ্র এলাকায় ‘হাই অ্যালার্ট’ জারি করা হয়েছে। পাশাপাশি, বাংলাদেশ ও ভারতের জল-সীমান্তে ২৪ ঘণ্টা টহল দিতে সুন্দরবনের ফ্রেজ়ারগঞ্জ ঘাঁটিতে ইতিমধ্যে পৌঁছে গিয়েছে উপকূলরক্ষী বাহিনীর হোভারক্রাফ্ট। ওই বাহিনীর পাশাপাশি সুন্দরবনের সব ক’টি উপকূল থানা এলাকায় জলপথে নজরদারি চলছে। মঙ্গলবার সকাল থেকেই ফ্রেজ়ারগঞ্জ উপকূল থানার পক্ষ থেকে নৌকা নিয়ে উপকূল এলাকার নদী এবং ১২ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত সমুদ্রের গভীরে টহলদারি চলে। ফ্রেজ়ারগঞ্জ উপকূল থানার পক্ষ থেকে মৎস্যজীবীদের ট্রলারগুলিতে অভিযান চালানো হয়। ট্রলারের নথিপত্র-সহ মৎস্যজীবীদের পরিচয়পত্রও যাচাই করে পুলিশ।