সচেতনতা-শিবির: গোপালনগরে। নিজস্ব চিত্র
গ্রামের মধ্যে যত্রতত্র গজিয়ে উঠেছে পার্থেনিয়ামের ঝোপ। রাস্তার পাশে, মাঠে, বাড়ির আশেপাশেও রয়েছে পার্থেনিয়াম। বিষাক্ত এই গাছ মানুষ ও গবাদি পশুদের জন্য ক্ষতিকারক। অথচ সে সম্পর্কে বিন্দুমাত্র ধারণা নেই গোপালনগর থানার আদিবাসী অধ্যুষিত শ্রীমন্তপুর গ্রামের মানুষের। স্কুলপড়ুয়া এবং শিক্ষকেরা গ্রামবাসীদের জানালেন, পার্থেনিয়াম ফুলের রেণু বাতাসে ভেসে শরীরে প্রবেশ করলে হাঁপানি হতে পারে। চর্মরোগও হতে পারে। কী ভাবে বিজ্ঞানভিত্তিক উপায়ে পার্থেনিয়াম ধ্বংস করা যায়, পড়ুয়া ও শিক্ষকেরা তা-ও হাতে-কলমে দেখিয়ে দিলেন।
সম্প্রতি গোপালনগরের পাল্লা কালীপদ চক্রবর্তী উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের জাতীয় সেবা প্রকল্প শাখার তরফে ওই গ্রামে সাত দিনের বিশেষ শিবিরের আয়োজন করা হয়েছিল। স্কুলের শিক্ষক তথা প্রোগ্রাম অফিসার ত্রিদীপ ঘোষের নেতৃত্বে ৫০ জন পড়ুয়া শিবিরে যোগ দেয়। ত্রিদীপ বলেন, ‘‘পরিবেশ, স্বাস্থ্য-সহ বিভিন্ন বিষয়ে সচেতনতার দিক থেকে পিছিয়ে থাকা একটি গ্রাম এই শ্রীমন্তপুর। এখানকার মানুষকে সচেতন করে তাদের জীবনযাত্রার মান কিছুটা বাড়িয়ে তুলতেই এই শিবিরের আয়োজন।’’
তাই শুধু পার্থেনিয়ামের ঝোপ পরিষ্কারই নয়, নানা বিষয়ে গ্রামবাসীদের সচেতন করা হয়েছে। শিবিরে প্রথমে পড়ুয়াদের হাতে-কলমে পাঠ দেন শিক্ষকেরা। পরে তারা তা গ্রামবাসীদের শেখায়।
পড়ুয়ারা বাড়ি বাড়ি ঘুরে খোঁজ নিয়েছে, কোনও শিশু সরকারি আবশ্যিক টিকা কর্মসূচির আওতা থেকে বাদ গিয়েছে কিনা। তেমন কেনও খবর পেলে সেই সব শিশুর টিকাকরণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পড়ুয়ারা গ্রামে গিয়ে দেখে, রাস্তায় জল জমে রয়েছে। ঝুড়ি ভর্তি করে মাটি কেটে এনে সেখানে ফেলছে তারা। জমে থাকা নোংরা আবর্জনাও পরিষ্কার করেছে তারা। প্লাস্টিক দূষণ নিয়েও গ্রামবাসীদের বুঝিয়েছে। মশাবাহিত রোগ কেন ছড়িয়ে পড়ে, বলা হয়েছে সে সম্পর্কেও। পড়ুয়ারা গ্রামে বৃক্ষরোপণও করেছে। শিবিরে যোগ দেওয়া পড়ুয়াদের আগুন মোকাবিলার প্রশিক্ষণ দেয় বনগাঁ দমকল শাখা।
স্কুলের পঠন-পাঠনের চেনা গণ্ডির বাইরে গ্রামে গিয়ে সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করতে পেরে খুশি পড়ুয়ারাও। তারা স্বীকার করেছে, শিবির থেকে তারা অনেক কিছুই জেনেছে।