প্রতিবাদ মিছিল থেকে নিরাপত্তার দাবি ছাত্রীদের
R G Kar Hospital Incident

প্রথম হাঁটলাম মিছিলে, বলছে অনেকে

মূলত একাদশ, দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়ারাই এ দিন মিছিলে যোগ দেয়। পথচলতি বহু মানুষ এবং স্থানীয় দোকানদাররাও সামিল হতে চেয়েছিলেন।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০২৪ ১০:১৪
Share:

আর জি কর কাণ্ডে বিচার চেয়ে বিক্ষোভ-প্রতিবাদ চলছেই। সমাজের বিভিন্ন অংশের মানুষের মতই দলে দলে পথে নামছে স্কুল পড়ুয়ারা। বুধবার দুই জেলার বিভিন্ন প্রান্তে পড়ুয়াদের মিছিল হয়। বিচারের দাবিতে স্লোগান ওঠে।

Advertisement

এ দিন ন্যাজাট থানা এলাকায় মিছিল করে শতাধিক পড়ুয়া। কালীনগর হাই স্কুলের পাশ থেকে বিভিন্ন পথ ঘুরে কালীনগর ফেরিঘাট পর্যন্ত মিছিল হয়। সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ শুরু হয় মিছিল। চলে প্রায় সাড়ে ১২টা পর্যন্ত। ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘তিলোত্তমার বিচার চাই’ লেখা প্ল্যাকার্ড হাতে মিছিলে হাঁটে পড়ুয়ারা। সঠিক বিচারের দাবিতে স্লোগানও ওঠে মিছিল থেকে।

মূলত একাদশ, দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়ারাই এ দিন মিছিলে যোগ দেয়। পথচলতি বহু মানুষ এবং স্থানীয় দোকানদাররাও সামিল হতে চেয়েছিলেন। তবে ছাত্রছাত্রীরা তাঁদের অনুরোধ করে, মিছিলে না হাঁটতে। এই মিছিল শুধুমাত্র ছাত্রছাত্রীদের মিছিল বলে জানায় তারা। কালীনগর বাজারে অরূপ মণ্ডল নামে স্থানীয় এক গৃহশিক্ষক মিছিলে হাঁটা ছাত্রছাত্রীদের হাতে জলের বোতল তুলে দেন। মিছিলের জেরে যান চলাচল বিঘ্নিত হয়।

Advertisement

দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী ঈশিতা দাস বলে, “শুধু চিকিৎসকদের হাসপাতালে নিরাপত্তা নেই তা নয়। রাজ্যের বিভিন্ন গ্রামেও মহিলাদের নিরাপত্তা নেই। আমি, আমার বান্ধবীরাও বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগি। কালীনগর স্কুলের পাশের একটি গলিতে সন্ধ্যা নামলেই নেশা করে কিছু যুবক। ওই রাস্তা দিয়ে রাতে গৃহশিক্ষকের কাছ থেকে পড়ে ফেরার সময়ে খুব ভয় করে।” স্বস্তিকা দাস নামে আর এক ছাত্রীর কথায়, “বেশিরভাগ গ্রামের রাস্তায় আলো থাকে না। রাতে যাতায়াত করতে খুব সমস্যা হয়। কিছু জায়গায় আলো থাকলেও তা জ্বলে না। বিশেষ করে রাতে নিরাপত্তার অভাব বোধ করি পথে বেরিয়ে। সে কারণেই আর জি কর কাণ্ডের বিচার এবং আমাদের নিরাপত্তার দাবিতে জীবনে প্রথম পথে নামলাম।” বাপি মিস্ত্রি নামে এক অভিভাবকের কথায়, “ছেলেমেয়েরা যে ভাবে পথে নামল, সেটা খুবই প্রশংসনীয়। সচেতন নাগরিকের পরিচয় দিয়েছে ওরা। আমাদের সমর্থন ছিল ওদের সঙ্গে।”

অশোকনগর-কল্যাণগড় বাজার এলাকা থেকেও এ দিন শতাধিক ছাত্রছাত্রী এ দিন মিছিল করেছে। মিছিল শেষ হয় অশোকনগর ৮ নম্বর মোড় এলাকায়। দোষীদের শাস্তি, মেয়েদের নিরাপত্তার দাবি জানানো হয়। হাবড়ার হাটথুবা আদর্শ বিদ্যাপীঠের ছাত্রছাত্রী, প্রাক্তন ছাত্র, শিক্ষক-শিক্ষকা, অভিভাবকেরা হাটথুবা থেকে যশোর রোড ধরে স্টেশন মোড়ে পর্যন্ত প্রতিবাদ মিছিল করেন।

ভাঙড় ১ ব্লকের নারায়ণপুর হাই স্কুলের প্রাক্তন ও বর্তমান ছাত্রছাত্রীরাও এ দিন রাস্তায় নেমেছেন। ভাঙড়ের আরও কয়েকটি স্কুলের ছাত্রছাত্রীরাও ওই মিছিলে পা মেলায়। ভাঙড়ের বিবিরাইট থেকে পাগলাহাট কলোনি মাঠ পর্যন্ত প্রায় চার কিলোমিটার রাস্তায় মিছিল হয়েছে। প্রবল বৃষ্টির মধ্যেও মিছিল এগিয়ে চলে। বেশ কিছুক্ষণ বাসন্তী হাইওয়েতে যান চলাচল থমকে যায়। ওই স্কুলের প্রাক্তন ছাত্রী শিউলি ঘোষ বলেন, “নির্যাতিতার ন্যায় বিচার চাই। ওই চিকিৎসক যদি তাঁর কর্মক্ষেত্রে নিরাপদ না থাকেন, তা হলে আমাদের নিরাপত্তা কোথায়?”

কুলপির নিশ্চিন্তপুর রাখালদাস উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকারা ১১৭ নম্বর জাতীয় সড়কের নিশ্চিন্তপুর মোড় থেকে জামতলা মোড় হয়ে স্কুল পর্যন্ত মিছিল করেন।

ক্যানিংয়ের রায়বাঘিনি হাই স্কুলের পড়ুয়ারা স্কুল বন্ধ রেখে প্রতিবাদে নামে। স্কুল থেকে মিছিল শুরু হয়। গোটা ক্যানিং শহরকে প্রদক্ষিণ করে প্রায় ছ’কিলোমিটার রাস্তা জুড়ে চলে মিছিল। পোস্টার, প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ স্লোগান তোলে পড়ুয়ারা। প্রায় এক হাজার পড়ুয়া হেঁটেছে। মিছিলে হাঁটতে গিয়ে অসুস্থও হয়ে পড়ে কয়েক জন ছাত্রী। তাদের ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। একাদশ শ্রেণির ছাত্রী নিশা দাস, সুপর্ণা ধাড়ারা বলে, “নৃশংস ভাবে ডাক্তার দিদিকে খুন করা হয়েছে। এখনও দোষীরা গ্রেফতার হয়নি। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে দোষীদের গ্রেফতারের দাবিতে এবং উপযুক্ত শাস্তির দাবিতে প্রতিবাদ, বিক্ষোভ চলছে। আমরাও বিচারের দাবিতে পথে নেমেছি। আমাদের দিদির খুনিদের উপযুক্ত শাস্তি চাই।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement