কইজার আহমেদ এবং শওকত মোল্লার যৌথ সংবাদিক বৈঠক জীবনতলায়। — নিজস্ব চিত্র।
ক্যানিং পূর্বের তৃণমূল বিধায়ক শওকত মোল্লাকে ‘প্রধান সেনাপতি’ আখ্যা দিলেন ভাঙড়ের তৃণমূল নেতা কাইজার আহমেদ। অথচ সোমবার পর্যন্ত শওকতকে ভাঙড়ের ‘অবজার্ভার’ হিসাবে মানতে নারাজ ছিলেন কাইজার। তাঁর ব্যাখ্যা ছিল, ভাঙড়ের সার্বিক পরিস্থিতি বিচার-বিশ্লেষণ করে রিপোর্ট দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে শওকতকে। বৈঠকে ‘অবজার্ভার’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়নি বলেও দাবি করেছিলেন তিনি। এর পর মঙ্গলবার রাতারাতি ভোলবদল কাইজারের। তাঁর পাশে বসে শওকতও জানিয়ে দিয়েছেন, বলতে গিয়ে ‘এদিক-ওদিক’ হয়ে গিয়েছে ‘কাইজার ভাইয়ের’।
শনিবার তৃণমূলের বৈঠকে ভাঙড় বিধানসভার পর্যবেক্ষক হিসাবে নাম ঘোষণা করা হয় শওকতের। স্থির হয়, ক্যানিং পূর্বের তৃণমূল বিধায়ক যোগাযোগ রাখবেন দলের স্থানীয় নেতৃত্বের সঙ্গে। পাশাপাশি, তৃণমূল সূত্রে এ-ও জানা যায়, ভাঙড়ে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের পরিবেশ বরদাস্ত করা হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন দলের নেতারা। এই আবহে সোমবার শওকতের পদ নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছিলেন কাইজার। তাঁর ব্যাখ্যা ছিল, ‘‘ভাঙড়ে সার্বিক পরিস্থিতি বিচার-বিশ্লেষণ করে একটা রিপোর্ট জমা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে কিছু দিনের মধ্যে। সেখানে ওই ধরনের শব্দ (অবজার্ভার) ব্যবহার করা হয়নি। যারা শুনেছে তারা বলছে। আমি হয়তো ভুল শুনেছি।’’ কিন্তু মঙ্গলবারই বদলে যায় প্রেক্ষাপট। দক্ষিণ ২৪ পরগনার জীবনতলায় বৈঠক করেন শওকত এবং কাইজার। এর পর সাংবাদিক বৈঠকে শওকতকে ‘প্রধান সেনাপতি’ আখ্যা দিয়ে কাইজার বলেন, ‘‘সংবাদমাধ্যমে দেখানো হয়েছে যে, আমাদের মধ্যে নাকি গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব রয়েছে। তেমন কোনও বিষয় নেই। বিষয়টা হচ্ছে ভাঙড়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে শওকত সাহেবকে। উনি অনেক দিন ধরেই আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলছিলেন, চলেন এবং চলবেনও আগামিদিনে। সুতরাং এক জন অবজার্ভার হিসাবে বা যে কোনও দায়িত্ব দেওয়া হোক না কেন, শওকত’দা আরাবুল’দা এবং রহিমভাই এবং অন্যান্যদের সঙ্গে কাজ করবে। শওকত’দার সঙ্গে কাজ করে আমাদের হাত শক্ত হবে। আইএসএফের বিরুদ্ধে লড়াই আমাদের সহজ হবে। আমরা শওকত মোল্লার নেতৃত্বে মসৃণ ভাবে এবং ঐক্যবদ্ধ ভাবে আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভাঙড় ১ এবং ২-তে লড়াই করব। আমাদের জয় নিশ্চিত হবে।’’ তাঁর বার্তা, ‘‘আমরা স্পষ্ট ভাবে ওঁর (শওকত মোল্লা) পাশে দাঁড়াব। ওঁর নেতৃত্বে কাজ করতে আমাদের কোনও সমস্যা নেই।’’
কাইজারের সোমবারের মন্তব্য নিয়ে শওকতের দাবি, ‘‘কাইজার ভাইয়ের বলতে গিয়ে হয়তো এ দিক-ও দিক হয়েছে। সেটা সংবাদমাধ্যম রং দিয়ে চালিয়েছে।’’ ভাঙড়ের অবজার্ভার হিসাবে নিজের লক্ষ্যও স্পষ্ট করেছেন শওকত। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের একটাই উদ্দেশ্য, ভাঙড়ে রাজনৈতিক জমি শক্তিশালী করা। আজ আমরা একত্রিত হয়েছি। গতকাল আমি আরাবুল ইসলাম, রেজাউল করিম এবং হাকিমুল ইসলামের সঙ্গে বসেছিলাম। গোটা ভাঙড় জুড়ে আমরা ঐক্যবদ্ধ ভাবে রাজনৈতিক জমি শক্তিশালী করার চেষ্টা করব।’’ ভাঙড়ে ঐক্যবদ্ধ তৃণমূলের ছবি তুলে ধরতে আগামী বৃহস্পতিবার ভাঙড়ে মিছিল হবে বলেও জানিয়েছেন কাইজার।