রিতা মণ্ডল। —নিজস্ব চিত্র।
স্বাস্থ্য পরিষেবায় উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য ‘ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল’ সম্মান পেলেন কুলপি গ্রামীণ হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মী রিতা মণ্ডল। বৃহস্পতিবার দুপুরে দিল্লিতে রাষ্ট্রপতি ভবনে তাঁর হাতে স্মারক ও শংসাপত্র তুলে দেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু।
স্বাস্থ্য দফতর ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কুলপি গ্রামীণ হাসপাতালের অধীনে ঈশ্বরীপুর পঞ্চায়েতে ঈশ্বরীপুর উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে স্বাস্থ্যকর্মী রিতা। ওই উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের উপরে প্রায় ১২টি গ্রাম নির্ভরশীল। সেখানকার ১১ হাজার মানুষকে পরিষেবা প্রদান করে কেন্দ্রটি। সোনারপুর এলাকার বাসিন্দা বছর তিপ্পান্নর রিতা প্রায় তিরিশ বছরের কর্মজীবনে প্রায় কোনও ছুটি না নিয়েই কাজ করছেন। এমনকী, নিজে অসুস্থ থাকা সত্ত্বেও বা আত্মীয় পরিজনের উৎসব-অনুষ্ঠান যোগ না দিয়ে লাগাতার কাজ করেছেন তিনি। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার প্রত্যন্ত এলাকার উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের এই স্বাস্থ্যকর্মীর কাজের প্রতি একাগ্রতা তাঁকে ইতিমধ্যে জেলা ও ব্লক স্তরে সেরার শিরোপা এনে দিয়েছে। সমস্ত ব্লক মেডিক্যাল অফিসার রিতাকে সেরা স্বাস্থ্যকর্মী হিসাবে শংসাপত্র দিয়েছেন।
২০০৪ সালে তিনি পুরুষদের বন্ধ্যাকরণের কাজ শুরু করেছিলেন। ২০০৯ সালে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের তরফে রিতার উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পরিদর্শনে এসে সেরা উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র হিসেবে শিরোপা দেওয়া হয়। ২০১০ সালে ইউনিসেফ থেকে প্রতিনিধি দল উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি পরিদর্শন করে শংসাপত্র দেয়।
রিতার স্বামী অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। তাঁদের দুই মেয়ে। বড় মেয়ে চিকিৎসক। রিতা বলেন, “জাতীয় কর্মসূচি সফল ভাবে রূপায়ণ করেছি, কুড়ি বছর ধরে মা ও শিশু মৃত্যুর হার প্রায় নেই। ১০০ শতাংশ প্রতিষেধক টিকা দিতে পেরেছি। করোনাকালে টিকা দিয়েছি। অসুস্থ বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের টিকাকরণের জন্য তাঁদের বাড়িতেও গিয়েছি। কুষ্ঠ, যক্ষা দূরীকরণে কাজ করেছি।”
রিতা জানান, এই পুরস্কার পাওয়ার জন্য ২০২২ সালে ফেব্রুয়ারি মাসে স্বাস্থ্যভবন থেকে ফর্ম নিয়ে বিস্তারিত তথ্য দিয়ে জমা করেন তিনি। ২০২৩ সালের মে মাসে দিল্লির স্বাস্থ্যমন্ত্রক থেকে তাঁকে পুরস্কার প্রদানের কথা জানানো হয়। রিতা বলেন, “পুরস্কার পাব ভেবে নয়, কাজটা আমি ভালবেসেই করি। গত বছর আমি সেরার শিরোপা পেয়েছিলাম। কিন্তু করোনাকালে ওই বছর পুরস্কার দেওয়া হয়নি। এ বছর পুরস্কার হাতে পেয়ে আমি উচ্ছ্বসিত। স্বাস্থ্য দফতরের অন্য কর্মীরাও এর থেকে উৎসাহিত হবেন।”
কুলপি গ্রামীণ হাসপাতালের ব্লক মেডিক্যাল অফিসার তনুশ্রী কুণ্ডু বলেন, “ওই স্বাস্থ্যকর্মী কাজের প্রতি একনিষ্ঠ। সব দিক থেকে উনি এই পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য। আমরা সকলেই আনন্দিত এবং গর্বিত।”