বার্তা: মানুষজনকে সতর্ক করছেন এনডিআরএফ কর্মীরা। শুক্রবার সন্দেশখালিতে। ছবি: নবেন্দু ঘোষ
অমাবস্যার ভরা কটালে ভারী বৃষ্টি নামলেই বুক কাঁপে সন্দেশখালি, হাসনাবাদ, হিঙ্গলগঞ্জের নদীবাঁধ-সংলগ্ন এলাকার মানুষের। আমপান, ইয়াসের মতো বিপর্যয়ে অনেকেরই ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল এই সব এলাকায়। ফের জাওয়াদের ভ্রুকুটি। এই পরিস্থিতিতে চিন্তিত দুই ২৪ পরগনার বিস্তীর্ণ এলকার মানুষ। নদীবাঁধ ভেঙে বাড়িঘর-চাষবাস ফের নষ্ট হবে না, এই ভেবে আতঙ্কে রাতের ঘুম উড়েছে তাঁদের।
সন্দেশখালির বাসিন্দা অহাব গাজি বলেন, ‘‘অসময়ের বৃষ্টিতে একবার ক্ষতি হয়েছে। আবার ঝড়বৃষ্টি হলে ধার করা টাকা কী ভাবে শোধ করব ভেবে পাচ্ছি না।’’ মাঠ থেকে ফসল তুলে নিচ্ছেন অনেকেই। দুর্যোগের আশঙ্কায় সেই পরামর্শ দিচ্ছেন পরিবেশবিদেরাও। হিঙ্গলগঞ্জের বাসিন্দা নবাব আলির কথায়, ‘‘আমরা তো ঘর পোড়া গরু। বহুবার জমি-জিরেত হারিয়েছি। বার বার আমাদের উপরেই যে প্রকৃতি কেন এত বিরূপ হন!’’
এই পরিস্থিতিতে দুর্বল নদীবাঁধগুলির উপরে নজর রাখা হচ্ছে বলে জানাচ্ছে প্রশাসন। তবে সে কথায় ভয় কাটছে না সুন্দরবনবাসীর।
হিঙ্গলগঞ্জ, হাসনাবাদ, সন্দেশখালি ১ ও ২ ব্লকের কৃষি দফতরের তরফে চাষিদের সচেতন করতে মাইকে প্রচার চলছে। লিফলেট বিলি হচ্ছে। কৃষি দফতর জানায়, এখন অধিকাংশ জায়গাতেই ধান, আলু এবং আনাজ মাঠে রয়েছে। এ সময়ে ভারী বৃষ্টি, ঝড় হলে ফসলের বড়সড় ক্ষতি হবে। কৃষকদের বলা হয়েছে, দ্রুত ফসল কেটে ঘরে তুলতে।
পূর্ব খেজুরবেড়িয়ার কৃষক অর্ধেন্দুশেখর মণ্ডল বলেন, ‘‘একের পর এক ঝড়-জল পেরিয়ে খুব কষ্টে চাষ করেছি। যে সামান্য ধান হয়েছে, তা যাতে নষ্ট না হয় তাই দ্রুত ঘরে তোলার চেষ্টা করছি।’’ একই কথা শোনা গেল ডায়মন্ড হারবারের চাষিদের মুখেও।
এ বার বর্ষার খামখেয়ালিপনায় এবং অতিবৃষ্টির কারণে চাষিরা সময় মতো বীজতলা করতে পারেননি। অনেকে বীজতলা কিনে চাষ করছেন। তাতে চাষের খরচ বেড়েছে। ফের দুর্যোগের আশঙ্কা তৈরি হওয়ায় চাষিদের মাথায় হাত পড়েছে। অতিরিক্ত বৃষ্টির ফলে ধান পাকলেও এখনও মাঠে জল জমে রয়েছে অনেক জায়গায়। একটু শুকনো না হলে ধান কেটে ঘরে তোলাও সমস্যার বলে জানালেন অনেকে।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে সতর্কবার্তা আসতেই ভাঙড়ের বিভিন্ন এলাকায় চাষিরা মাঠ থেকে আনাজ তুলে হাটে পাঠানোর ব্যবস্থা করছেন। পোলেরহাটের চাষি রমজান মোল্লা বলেন, ‘‘এর আগে অতিবৃষ্টিতে ফসল নষ্ট হয়েছে। ধারদেনা করে ফের চাষ করেছি। নিম্নচাপের আশঙ্কা দেখা দেওয়ায় যতটা সম্ভব ফসল মাঠ থেকে তুলে ফেলা হচ্ছে।’’
শুক্রবার সকাল থেকে বহু এলাকায় আকাশ ছিল মেঘলা। হিঙ্গলগঞ্জের গ্রামে গ্রামে গিয়ে পুলিশ সতর্ক করেছে মানুষজনকে। বসিরহাট মহকুমা প্রশাসনের পক্ষে সতর্কবার্তা জারি করা হয়েছে। ইতিমধ্যে সন্দেশখালিতে এসে পৌঁছেছে ৫২ জন এনডিআরএফ কর্মী। এদিন সন্দেশখালি ২ ব্লকে বৈঠক করেন প্রশাসনিক আধিকারিকেরা। বিডিও অর্ণব মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘দুর্বল নদীবাঁধগুলির উপরে নজরদারি চালানো হচ্ছে। ত্রাণ-সহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী মজুত করা হয়েছে।’’
সন্দেশখালি ১ বিডিও সুপ্রতিম আচার্য বলেন, ‘‘আগামী তিনদিনের জন্য কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। ব্লকের বিপর্যয় আধিকারিক এই কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বে থাকবেন।’’
সন্দেশখালি ২ ব্লকের ধামাখালি, সন্দেশখালি, রামপুর এলাকায় শুক্রবার সকাল থেকে এনডিআরএফ-এর দল মানুষকে ঝড় নিয়ে সচেতন করতে মাইকে প্রচার চালায়।
বসিরহাটের মহকুমাশাসক মৌসম মুখোপাধ্যায় জানান, সুন্দরবন-লাগোয়া ব্লকগুলিতে প্রয়োজনীয় ত্রাণ পাঠানো হয়েছে। এনডিআরএফ দল পৌঁছে গিয়েছে। ফ্লাড শেল্টারগুলি পরিষ্কার করা হয়েছে। নদী-সংলগ্ন বাসিন্দাদের নিরাপদ জায়গায় যাওয়ার জন্য বলা হচ্ছে। নদীতে মাছ ধরতে যেতে নিষেধ করা হয়েছে।
দুর্যোগ মোকাবিলায় তৎপর ডায়মন্ড হারবার মহকুমা প্রশাসনও। রায়দিঘি, ডায়মন্ড হারবার, ফলতার নিচু এলাকার মানুষজনকে শিবিরে আনার জন্য ১৮টি ফ্লাড শেল্টারের ব্যবস্থা আছে। বিদুৎ সংযোগ ব্যবস্থা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। গাছের বিপজ্জনক ডাল কাটা শুরু হয়েছে। এ ছাড়াও, সমস্ত দফতরকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। মহকুমাশাসক সুকান্ত সাহা বলেন, ‘‘সমস্ত শিবিরে খাবার, ওষুধ ও অন্যান্য ত্রাণসামগ্রী রাখার ব্যবস্থা হয়েছে।