অপেক্ষা: মিনাখাঁর কুমারজল গ্রামে এ ভাবেই দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে পানীয় জল নিতে হয় বাসিন্দাদের। নিজস্ব চিত্র
কেউ খাওয়ার জল আনতে রোজ পাড়ি দেন তিন-চার কিলোমিটার। কেউ আবার দূরে যেতে না পেরে নলকূপের অপরিস্কার জল বা পুকুরের জলই ফুটিয়ে পান করেন। সুন্দরবন ও সংলগ্ন এলাকা জুড়ে অনেক জায়গায় এ ভাবেই পানীয় জলের সঙ্কটে ভুগছেন মানুষ। বৃহস্পতিবার খাঁ পুকুরিয়ায় মানুষের মুখে পানীয় জলের সমস্যা শুনে দ্রুত সমাধানের নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এই পরিস্থিতিতে অন্য এলাকাগুলির কী হবে, প্রশ্ন তুলছেন সেখানকার বাসিন্দারা।
মিনাখাঁর কুমারজোল, বড়আবাদ, গড়আবাদে পানীয় জলের সমস্যা তীব্র। এলাকায় আর্সেনিকমুক্ত পানীয় জল মেলে না বলে জানালেন স্থানীয় বাসিন্দারা। স্থানীয় সূত্রের খবর, বড়আবাদ ও গড়আবাদ গ্রাম মিলিয়ে ৬টি নলকূপ রয়েছে। কিন্তু সবগুলিই অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে। ব্যক্তিগত ভাবে অনেকে নলকূপ বসিয়েছেন। কিন্তু সেই সব নলকূপের জল পান করা যায় না।
স্থানীয় বাসিন্দা রমা মণ্ডল, শাহিনা বিবিরা জানালেন, গ্রামে ভাল জল মেলে না। জল কেনার ক্ষমতাও নেই। তাই বাধ্য হয় তিন কিলোমিটার দূর থেকে সাইকেলে কলসি বেঁধে জল আনতে হয়। কুমারজোল গ্রামে পাইপলাইনের জল পৌঁছেছে। কিন্তু তাতে পরিস্কার জল আসে না বলে অভিযোগ।
কুমারজোল গ্রামের বাসিন্দা সুকুমার বৈদ্য বলেন, “পাইপ ফাটা থাকায় জলে ময়লা মিশে যায়। পান করা যায় না।” বড়আবাদ গ্রামের বাসিন্দা করুণা মণ্ডল বলেন, “শুধু খাঁ পুকুরিয়া নয়, আমরাও পানীয় জলের কষ্টে ভুগছি। দিদি যদি আমাদের দিকে একটু তাকান, তা হলে সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারি।”
হিঙ্গলগঞ্জের কালীতলা পঞ্চায়েত এলাকায় পানীয় জলের সমস্যা বহুদিন ধরে। স্থানীয় সূত্রের খবর, সুন্দরবনের জঙ্গল-লাগোয়া কালীতলা, সামসেরনগর এলাকায় মাটির নীচে জলস্তর নেমে গিয়েছে। ফলে টিউবওয়েল বসালেও ভাল জল মেলে না। পারঘুমটি এলাকায় জল মেলে। তাই প্রশাসনের উদ্যোগে ওই এলাকা থেকে মাটির নীচের জল তুলে বিভিন্ন গ্রামে ভ্যাটে পৌঁছে দেওয়া হয়। সেই জলের মানও ভাল নয় বলে অভিযোগ। এলাকার মানুষ জানান, ভ্যাটে যে জল আসে, তার রংলালচে।
এই পরিস্থিতিতে যাঁদের আর্থিক ক্ষমতা আছে, তাঁরা পানীয় জল কিনে খান। কিন্তু যাঁদের ক্ষমতা নেই, তাঁরা বাধ্য হয়ে ভ্যাটের জলই পান করেন। ভ্যাটে জল না মিললে যেতে হয় দূরের গ্রামে। ১ নম্বর সামসেরনগর গ্রামের বাসিন্দা সুস্মিতা মণ্ডল বলেন, “গরমে ঠিক মতো জল মেলে না। তখন সাইকেল চালিয়ে প্রায় ঘণ্টা দেড়েকের পথ পেরিয়ে পারঘুমটি বা গোবিন্দকাটি এলাকায় যেতে হয়।” অনেকেই জানালেন, রান্নাবান্না বা অন্য কাজে ভরসা পুকুরের জল।
কালীতলা পঞ্চায়েত এলাকায় ৩টি হাইস্কুল ও ২টি প্রাথমিক স্কুলে সৌরশক্তিচালিত জল প্রকল্প ছিল। কিন্তু সবগুলিই খারাপ হয়ে পড়ে রয়েছে। পঞ্চায়েতের প্রধান দীপ্তি মণ্ডল জানান এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরকে জানানো হয়েছে।
হাসনাবাদের পাটলি খাঁপুর পঞ্চায়েত জুড়েও পানীয় জলের কোনও ব্যবস্থা নেই। ৭-৮ কিলোমিটার দূরে বিশপুর পঞ্চায়েত এলাকা থেকে পানীয় জল এনে খেতে হয় মানুষকে। সন্দেশখালি ২ ব্লকের কোরাকাটি, বেড়মজুর ১ ও ২, দুর্গামণ্ডপ, সন্দেশখালি পঞ্চায়েত এলাকায় পানীয় জলের সমস্যা বহুদিনের। দুলদুলি পঞ্চায়েত এলাকাতেই পানীয় জলের সমস্যা রয়েছে।
জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের সহকারী বাস্তুকার কল্লোল বিশ্বাস বলেন, “হিঙ্গলগঞ্জ, হাসনাবাদ, সন্দেশখালিতে বাড়ি বাড়ি পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার কাজ চলছে। ২০২৪ সালের মধ্যে কাজ শেষ হয়ে যাবে।”