Followers of Shahjahan Sheikh

সন্দেশখালিতে ‘শোষণ’, পথে গ্রামের মানুষ

মূলত যে দুই নেতার বিরুদ্ধে বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, সেই উত্তম সর্দার এবং শিবপ্রসাদ হাজরা উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদ সদস্য।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

সন্দেশখালি শেষ আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৯:৪৮
Share:

আট নম্বর কাছারিপাড়া স্লুস গেটে তালা দিচ্ছেন ক্ষুব্ধ জমি মালিকেরা।

শেখ শাহজাহান ঘনিষ্ঠ দুই তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে শোষণের অভিযোগ তুলে বুধবার পথে নামলেন সন্দেশখালির ৭ নম্বর কলোনিপাড়া ও ৮ নম্বর কাছারিপাড়ার শতাধিক বাসিন্দা। তাঁদের অভিয়োগ, প্রায় তিন বছর আগে তাঁদের জমি দখল করে নোনা জল ঢুকিয়ে মাছ চাষ শুরু হলেও বিনিময়ে প্রায় কিছুই মেলেনি।

Advertisement

এ দিন হারানো জমি বা টাকার দাবিতে ওই গ্রামবাসীরা প্রথমে থানায় যান। তারপরে সন্দেশখালি ২ ব্লক অফিস এবং ব্লক ভূমি দফতরের সামনে বিক্ষোভ দেখান। বিডিও এবং ব্লক ভূমি দফতরে লিখিত অভিযোগও জানানো হয়। কিছুদিন আগে যে সন্দেশখালিতে বিরোধীরাও মিছিল করতে সাহস পেত না, সেখানে এ দিন যেন এক অন্য ছবি! একজোট হয়ে গ্রামবাসীরা ভেড়িতে নোনা জল ঢোকানোর দু’ট স্লুস গেটে তালাও ঝুলিয়ে দেন।

মূলত যে দুই নেতার বিরুদ্ধে বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, সেই উত্তম সর্দার এবং শিবপ্রসাদ হাজরা উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদ সদস্য। এ ছাড়াও, উত্তম দলের সন্দেশখালি অঞ্চল সভাপতি, শিবপ্রসাদ ব্লক সভাপতি। শিবপ্রসাদের সঙ্গে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি। উত্তমের সাফাই, ‘‘টাকা অনেক মানুষকে দিয়েছি। কিছু মানুষের হয়তো বাকি আছে। তাঁদেরকে বুঝিয়ে বলেছিলাম, এখন মাছের দাম কম। কয়েক মাস পরে দাম বাড়লে তখন মাছ বিক্রি করে টাকা দিয়ে দেব। এই ঘোলা জলে মাছ ধরতে নেমেছে সিপিএম-বিজেপি। কিন্তু এটা সন্দেশখালির মাটি, শেখ শাহজাহানের ঘাঁটি। কিছু করতে পারবে না বিরোধীরা।’’

Advertisement

বিডিও অরুণকুমার সামন্ত বলেন, ‘‘একটি অভিযোগপত্র জমা পড়েছে। ব্লক ভূমি দফতরকে বিষয়টি দেখতে বলেছি।’’ পুলিশ জানায়, অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। দলীয় নেতাদের বিরুদ্ধে ওই অভিযোগ এবং বিক্ষোভ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন সন্দেশখালির তৃণমূল বিধায়ক সুকুমার মাহাতো।

বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, ৭ নম্বর কলোনিপাড়ায় উত্তম সর্দার প্রায় ১৫০ বিঘা চাষজমি আর ৮ নম্বর কাছারিপাড়ায় শিবপ্রসাদ প্রায় ৩০০ বিঘা জমি কেড়ে নিয়ে মাছ চাষ শুরু করেন। গ্রামবাসীদের দাবি, বিঘাপ্রতি ৬ হাজার টাকা করে প্রতি বছর তাঁদের ইজারা দেওয়া হবে বলে আশ্বস্ত করা হয়েছিল। কিন্তু কিছু মানুষকে প্রথম দিকে টাকা দেওয়া হলেও তারপর থেকে আর কাউকে দেওয়া হচ্ছে না। এলাকার দু’টি খালও কব্জা করে নিয়ে মাছ চাষ করছেন ওই দুই নেতা। অভিযোগ, বছর খানেক আগেও ওই ক্ষতিগ্রস্তেরা থানা, ব্লক অফিস এবং ব্লক ভূমি দফতরের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। কিন্তু সুরাহা হয়নি।

এ দিন বিক্ষোভকারীদের মধ্যে মলিন সিংহ এবং ,ইন্দু সিংহ বলেন, ‘‘গড়ে আমাদের থেকে প্রায় এক বিঘা করে চাষের জমি মাছ চাষের জন্য নিয়ে নেওয়া হয়। ইজারার টাকা চাইতে গেলে কারও কপালে জোটে হুমকি, কাউকে ভুল বুঝিয়ে মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়।’’

সন্দেশখালির প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক নিরাপদ সর্দার মনে করছেন, শাহজাহান অন্তরালে চলে যাওয়ার পর সন্দেশখালির মানুষ ক্রমশ সাহস পাচ্ছেন তাঁদের ন্যায্য অধিকার বুঝে নিতে। তিনি বলেন, ‘‘আমরা ভূমিহীনদের জমি দিয়েছিলাম আর তৃণমূলের নেতারা দাদাগিরি করে বহু মানুষের জমি নিজেদের নামে করে নিয়ে নিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে আছি।’’ বিজেপি নেতা বিকাশ সিংহ বলেন, ‘‘যাঁরা এতদিন অত্যাচারিত হয়েছেন, তাঁরাই এখন বিক্ষোভ করছেন। এটা ট্রেলার। সিনেমাও শুরু হবে। তৃণমূলের নেতারা পালানোর জায়গা পাবেন না।’’— নিজস্ব চিত্র

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement