Sundarbans’s Tiger

‘আবার আসবে না তো?’ বাঘ জঙ্গলে ফিরলেও আতঙ্ক কাটছে না কুলতলির গ্রামবাসীদের

দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভাগীয় বনাধিকারিক (ডিএফও) নিশা গোস্বামী জানান, বাঘ মঙ্গলবার রাতেই এলাকা ছেড়ে গভীর জঙ্গলে চলে গিয়েছে। বাঘ জঙ্গলে ফিরতে স্বস্তিতে গ্রামবাসীরা। তবে আশঙ্কা কাটছে না।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০২৫ ১৫:৫২
Share:

মাকড়ি নদীর পারে বাঘের পায়ের চিহ্ন। —নিজস্ব চিত্র।

দিন তিনেক আতঙ্কে কেটেছে। শুধু ভয়, কোথা থেকে, কখন বাঘের আক্রমণ হয়। ঘুমহীন রাত কেটেছে অনেকের। বুধবার সকালে সুন্দরবন থেকে চলে আসা বাঘ আবার নিজের পুরনো ডেরায় ফিরে যাওয়ায় স্বস্তি ফিরেছে কুলতলির মৈপীঠের বৈকুণ্ঠপুরের গ্রামবাসীদের। কিন্তু এখনও আতঙ্ক কাটছে না। সকলের মনে একটাই প্রশ্ন, আবার জঙ্গল ছেড়ে বেরিয়ে আসবে না তো বাঘ?

Advertisement

সোমবার সকালে কুলতলির মৈপীঠের বৈকুণ্ঠপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের শ্রীকান্তপল্লি ও কিশোরীমোহনপুর এলাকায় জঙ্গল লাগোয়া গ্রামে বাঘের পায়ের ছাপ দেখে অনুসন্ধান শুরু করেছিলেন গ্রামবাসীরা। পরে বনকর্মীরাও তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন। আতঙ্ক তৈরি হয় গ্রামবাসীদের মধ্যে। বাঘের সন্ধানে ওই এলাকায় ঘাঁটি করেন বনকর্মীরা। দু’দিন ধরে চেষ্টা করেও তার নাগাল পাননি বনকর্মীরা। অবশেষে বুধবার সকালে বন দফতরের তরফে জানানো হয়, বাঘটি উত্তর বৈকুণ্ঠপুর সংলগ্ন জঙ্গল থেকে মাকড়ি নদী পেরিয়ে আজমলমারি-১১ গভীর জঙ্গলে ফিরে গিয়েছে। হাঁপ ছাড়েন গ্রামবাসীরা।

দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভাগীয় বনাধিকারিক (ডিএফও) নিশা গোস্বামী জানান, বাঘ মঙ্গলবার রাতেই এলাকা ছেড়ে গভীর জঙ্গলে চলে গিয়েছে। বনকর্মীরা চেয়েছিলেন, বাঘটি তার ডেরায় ফিরে যাক। শব্দবাজি ফাটিয়ে বাঘকে এলাকাছাড়া করার চেষ্টাও করা হয়। গ্রামবাসীরা দাবি করেছিলেন, গ্রাম সংলগ্ন জঙ্গল জাল দিয়ে ঘেরার। সেই দাবি বাস্তবসম্মত নয় বলেই জানান নিশা। তবে গভীর জঙ্গল জাল দিয়ে ঘেরা হতে পারে। সেই জাল যাতে কেউ না কাটতে পারেন, তার জন্য সচেতনতা বৃদ্ধির চেষ্টা করা হবে বলে জানান নিশা।

Advertisement

বনকর্মীদের লক্ষ্যই ছিল, বাঘকে নানা ভাবে বিরক্ত করে গভীর জঙ্গলে ফেরত পাঠানো। উত্তর জগদ্দল লাগোয়া নদীর ধারে পায়ের ছাপ দেখে তার উপস্থিতি সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে প্রায় এক কিলোমিটার এলাকা জাল দিয়ে ঘেরা হয়। তবে বিকল্প হিসাবে বাঘ ধরতে পাতা হয় খাঁচাও। টোপ হিসেবে ছাগলও রাখা হয়। বাঘ জঙ্গলে ফিরে যেতেই সেই খাঁচা সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। কাটা হচ্ছে জালও। তবে তার পরও চিন্তা থেকে যাচ্ছে গ্রামবাসীদের মধ্যে।

নিশা জানান, এখন সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ১০০। শেষ বছরের গণনা অনুযায়ী, শুধু কুলতলিতেই ১৭টি বাঘ বেরিয়েছিল। চলতি বছরে ইতিমধ্যেই চার-পাঁচ বার বাঘ জঙ্গল ছেড়ে লোকালয়ে চলে এসেছে। কিন্তু কেন বার বার লোকালয়ে চলে আসছে বাঘ? উঠে আসছে বেশ কয়েকটি কারণ। প্রথমত, খাবারের সন্ধানেই লোকালয়ে চলে আসছে বাঘ। দ্বিতীয়ত, শীতকালে নদীর জলস্তর কম থাকে। সেই জল পেরিয়ে সহজেই বাঘ নদী পারাপার করতে পারে। তবে গভীর জঙ্গলে অনেক জায়গাতেই জাল নেই। আবার অনেক জায়গায় চোরাশিকারিরা জাল কেটেছে, যা লোকালয়ে বাঘ ঢুকে পড়ার অন্যতম কারণ। এ ছাড়াও, শীতকালে ঘন কুয়াশার কারণেও বাঘ জঙ্গল ছাড়ছে।

লোকালয়ে যাতে বাঘ না প্রবেশ করে তার জন্য একাধিক পদক্ষেপ করেছে বন দফতর। তাদের দাবি, জঙ্গলে খাবারের ঘাটতি নেই। জঙ্গল ঘেরার জন্য ব্যবহৃত জাল রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও, নদীপথে টহলদারি বৃদ্ধিও করা হয়েছে বলে দাবি বন দফতরের।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement