—প্রতীকী ছবি।
ফের কি অন্ধকার সময় ফিরছে জগদ্দলে?
মাসখানেকের বেশি সময় ধরে এই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে পুরো জগদ্দল থানা এলাকায়। একের পর এক খুন, মাস্তানি, দাদাগিরি, তোলাবাজি বাড়ছে দিনদিন। এতে আতঙ্কিত এলাকার বাসিন্দারা। একই সঙ্গে পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ বাড়ছে সাধারণ মানুষের। অপারাধে কেন লাগাম দেওয়া যাচ্ছে না— সেই প্রশ্ন উঠছে সর্বত্র। ভোট এগিয়ে আসছে। এখনই অপরাধের মাত্রা ছাড়িয়ে গেলে পুলিশ এলাকা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবে কিনা, সেই প্রশ্নও উঠছে।
দিন পাঁচেক আগে জগদ্দল লাগোয়া ভাটপাড়ায় রিলায়্যান্স জুটমিলের সামনে প্রকাশ্যে কুপিয়ে খুন করা হয় ওই চটকলের শ্রমিক রামবাহাদুর রাজভড়কে। ওই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত রামবাবু রাজভড়কে এখনও পুলিশ গ্রেফতার করতে পারেনি। তাকে গ্রেফতারের দাবিতে রবিবার সকালে ওই চটকলের সামনে পথ অবরোধ করেন এলাকার বাসিন্দারা। অবরোধের ফলে রাস্তায় যানজট শুরু হয়। পুলিশ রামবাবুকে দ্রুত গ্রেফতারের আশ্বাস দিলে অবরোধ ওঠে। তাঁদের ডাকা ধর্মঘটের সমর্থনে এ দিন বিকেলে মিছিল করে বাম ও কংগ্রেস নেতৃত্ব। সেখানে শিল্পাঞ্চলে শান্তি ফেরানোই মূল দাবি ছিল।
গত লোকসভা ভোটের পরে ভাটপাড়া কাঁকিনাড়া এলাকায় একাধিক গোলমালের ঘটনা ঘটে। টানা চার মাস কার্যত অবরুদ্ধ ছিল এলাকা। বন্ধ ছিল স্কুল এবং দোকানপাট। আগে পুরো এলাকাই ছিল জগদ্দল থানার অধীনে। গোলমাল শুরু হওয়ার পরে ভাটপাড়া এবং কাঁকিনাড়ার একটা অংশ কেটে নতুন থানা ভাটপাড়ার অধীনে আনা হয়। তার পর থেকে কার্যত শান্তই ছিল এলাকা। কিন্তু গত তিন মাস ধরে নতুন করে অশান্তি শুরু হয়েছে। এলাকার বাসিন্দারা মনে করছেন, পুলিশ পরিস্থিতি সামলাতে ব্যর্থ হচ্ছে বলেই অপরাধ বাড়ছে এলাকায়।
গত মহরমের আগের রাতে এলাকার কিশোরেরা মিছিল বের করেছিল। একটা রাস্তায় সেই মিছিল শেষ হওয়ার সময় কয়েকজন দুষ্কৃতী বাইক নিয়ে আসছিল। কিশোরদের সরতে বললে, তারা একটু অপেক্ষা করতে বলে। আর তাতেই রেগে গিয়ে দুষ্কতীরা গুলি করে এক স্কুলছাত্রকে খুন করে। তার পর থেকেই এলাকায় ক্ষোভ শুরু হয়।
অভিযোগ, এই ঘটনার পরেও পুলিশ দুষ্কতী কার্যকলাপ বন্ধ করতে পারেনি। ফলে একের পর এক ঘটনা ঘটতে থাকে। এলাকায় তোলাবাজি, গুন্ডামি গত কয়েক মাসে মাত্রা ছাড়িয়েছে বলেই দাবি
এলাকার বাসিন্দাদের।
সম্প্রতি এক আদিবাসী ছাত্রী থানায় অভিযোগ দায়ের করতে গিয়েছিল। ছাত্রীটির অভিযোগ ছিল, এক অপরিচিত যুবক তার ছবি বিকৃত করে সম্পর্ক পাতানোর জন্য ‘ব্ল্যাকমেল’ করছে। সম্পর্ক তৈরি না করলে ওই ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হচ্ছে। পুলিশ তার অভিযোগ নেয়নি। অভিযোগ, উল্টে তাদেরই বলে অভিযুক্তকে ধরে আনতে। তার পরে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে। শেষ পর্যন্ত অপমানে আত্মঘাতী হয় ওই আদিবাসী ছাত্রীটি। পুলিশ গেলে তাদের আটকে বিক্ষোভ দেখান এলাকার বাসিন্দারা। কিশোরীর দেহ ছাড়তে রাজি হননি তাঁরা। ঘটনার এক সপ্তাহ পরে পুলিশ অভিযুক্তকে পাকড়াও করেছে বলে দাবি করে। তাতে এলাকায়
ক্ষোভ বাড়ে।
তাঁদের বক্তব্য, তা হলে পুলিশ চাইলেই অভিযুক্তকে ধরতে পারে। তাকে আগে গ্রেফতার করলে কিশোরীকে এ ভাবে মরতে হত না।
চটকল শ্রমিকের মত্যুর ঘটনার দু’দিনের মাথায় ফের খুনের ঘটনা ঘটে। কলাবাগান এলাকার এক যুবককে বাড়ি থেকে পালঘাট রোডে ডেকে এনে পিটিয়ে, কুপিয়ে খুন করা হয়। এই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত এলাকারই এক যুবক। নিহত এবং অভিযুক্ত দু’জনের বিরুদ্ধেই সমাজবিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগ ছিল। এই ঘটনাতে পুলিশ দু’জনকে গ্রেফতার করলেও মূল অভিযুক্ত এখনও পুলিশের নাগালের বাইরে রয়ে গিয়েছে। এ ক্ষেত্রেও ক্ষোভ বাড়ছে এলাকায়।
ব্যারাকপুর কমিশনারেটের ডিসি (সাউথ) অজয় ঠাকুর বলেন, “জগদ্দলে সাম্প্রতিক ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলি সংগঠিত নয়। এমনকী, একটির সঙ্গে বাকিগুলির যোগও নেই। এগুলি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। ফলে অপরাধ বাড়ছে এটা বলা যাবে না।”