বিক্ষোভ: হাবড়ার রাস্তায়। ছবি: সুজিত দুয়ারি
সমবায় ব্যাঙ্কে জমানো টাকা ফেরত না পেয়ে সর্বস্বান্ত হতে বসেছেন হাবড়ার কয়েক হাজার মানুষ। অভিযোগ, এক বছর ধরে তাঁরা ব্যাঙ্কে যাতায়াত করেও খালি হাতে ফিরছেন।
দিন কয়েক আগে গ্রাহকেরা টাকার দাবিতে হাবড়া ১ বিডিও অফিসে জমায়েত হয়েছিলেন। বিডিও জয়ন্ত দে'র কাছে টাকা ফেরত চেয়ে স্মারকলিপি জমা দেন। প্রশাসনের তরফে আশ্বস্ত করা হলেও তাঁরা জমানো টাকা তুলতে পারছেন না এখনও। ঘটনাটি হাবড়া হাটথুবা সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতি লিমিটেডের। গ্রাহকদের টাকা দ্রুত ফেরানোর দাবি তুলে এ বার পথে নামল বিজেপি। বুধবার দুপুরে হাবড়া শহরে গ্রাহকদের নিয়ে প্রতিবাদ মিছিল করেন দলের নেতা-কর্মীরা। নেতৃত্ব দেন বিজেপির বারাসত সাংগঠনিক জেলার মহিলা মোর্চার সভানেত্রী ভাস্বতী সোম এবং সাংগঠনিক জেলার প্রাক্তন সভাপতি প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। হাটথুবা থেকে মিছিল শুরু হয়। হাবড়া থানার কাছে যশোর রোডে পুলিশ মিছিল আটকে দেয়। সকলে রাস্তার উপরে বসে পড়েন। পরে পুলিশের অনুরোধে বিজেপির কর্মীরা রাস্তা থেকে উঠে থানার সামনে গিয়ে বিক্ষোভ দেখান। পুলিশের কাছে তাঁরা স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন। ভাস্বতী বলেন, ‘‘দীর্ঘ দিন ধরে গরিব মানুষ সমবায় ব্যাঙ্কে টাকা রেখেও তুলতে পারছেন না। তৃণমূলের জমানায় টাকা আত্মসাৎ হয়েছে। গ্রাহকদের টাকা দ্রুত ফেরতের দাবিতেই আমরা পথে নেমেছি।’’
গ্রাহকদের পাশে দাঁড়িয়েছে তৃণমূলও। দিন কয়েক আগে গ্রাহকদের নিয়ে তৃণমূলের পক্ষ থেকে টাকা ফেরানোর দাবিতে ধর্না কর্মসূচি পালন করা হয়। থানায় স্মারকলিপিও দেওয়া হয়। বসে নেই সিপিএম। দলের হাবড়া এরিয়া কমিটির সম্পাদক আশুতোষ রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘গরিব মানুষের টাকা তছরুপ করা হয়েছে। আমরা মানুষের সঙ্গে কথা বলছি। সংগঠিত হচ্ছি।।’’
হাবড়ার বিধায়ক জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, ‘‘আগামী সপ্তাহ থেকে সপ্তাহে ৬ দিন রোজ একশোজন গ্রাহককে ২ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। সমবায় সমিতির সম্পত্তি বিক্রি করে গ্রাহকদের টাকা মেটাতে পদক্ষেপ করা হচ্ছে।’’ গ্রাহকেরা জানিয়েছেন, প্রায় এক বছর ধরে টাকা তাঁরা জমানো টাকা তুলতে পারছেন না। ব্যাঙ্কে গেলে বলা হচ্ছে পরে আসতে। গ্রাহকদের প্রায় ৮০ শতাংশ গরিব মানুষ। বেশিরভাগই খেতমজুরি, দিনমজুরি, গৃহসহায়িকার মতো ছোটখাট কাজ করেন। ছোট ব্যবসা চালান। করোনা পরিস্থিতিতে লকডাউন জেরে অনেকেই কাজকর্ম হারিয়েছেন। রুজিরোজগার বন্ধ হওয়ায় বিপদে পড়েছেন। এই পরিস্থিতিতে ব্যাঙ্কে জমানো টাকাও না পেয়ে তাঁরা দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন। ওই সমবায় ব্যাঙ্ক থেকে আগে কৃষি ঋণ দেওয়া হত। চাষিরা ঋণ পরিশোধ করলেও তাঁদের আর ঋণ দেওয়া হচ্ছে না। সমস্যায় পড়েছেন তাঁরাও। গ্রাহকেরা জানালেন টাকা না পেয়ে চিকিৎসা, পড়াশোনা, বিয়ে-সহ সামাজিক অনুষ্ঠান বন্ধ হয়ে গিয়েছে। প্রশাসন জানায়, ব্যাঙ্কে এখন কমিটি নেই। বিষয়টি দেখছে সমবায় দফতর। বিডিও, থানার আইসি সমবায় দফতরের প্রতিনিধি-সহ প্রশাসনের লোকজনকে নিয়ে একটি কমিটি তৈরি হয়েছে। তাঁরা টাকা ফেরতের বিষয়টি দেখছেন। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, অতীতে সমবায় ব্যাঙ্কে টাকা তছরুপের ঘটনার অভিযোগ উঠেছিল। এর ফলেই গ্রাহকদের টাকা পেতে দেরি হচ্ছে